বরগুনা সরকারি কলেজের সামনে রিফাত শরীফকে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় তার স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নিকে গ্রেফতার দেখিয়েছে পুলিশ। বর্তমানে পুলিশ হেফাজতে রয়েছেন মিন্নি।
বহুল আলোচিত বরগুনার রিফাত শরীফ হত্যা মামলায় রিফাতের স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নিসহ ছয়জনের ফাঁসির আদেশের পরই মিন্নিকে হেফাজতে নেয় পুলিশ।
মিন্নির প্রতি অবিচার করা হয়েছে, দাবি মিন্নির বাবার
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী বরগুনার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের পাবলিক প্রসিকিউটর মোস্তাফিজুর রহমান বাবু।
তিনি বলেন, রিফাত শরীফ হত্যা মামলায় রিফাতের স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নিসহ ছয়জনের ফাঁসির আদেশ দিয়েছেন আদালত। রায় ঘোষণার পরপরই মিন্নিকে পুলিশ হেফাজতে নেয়া হয়। ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত সবাইকে কারাগারে পাঠানো হবে।
বুধবার (৩০ সেপ্টেম্বর) দুপুর পৌনে ২টার দিকে এ মামলার রায় ঘোষণা করেন বরগুনার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মো. আছাদুজ্জামান।
মামলার রায়ে রিফাতের স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নিসহ ছয়জনের ফাঁসির আদেশ দেন আদালত। একই মামলায় চারজনকে খালাস দেয়া হয়েছে। এছাড়া প্রত্যেককে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করেছেন বিচারক।
ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন- মো. রাকিবুল হাসান ওরফে রিফাত ফরাজী (২৩), আল কাইয়ুম ওরফে রাব্বি আকন (২১), মোহাইমিনুল ইসলাম সিফাত (১৯), রেজোয়ান আলী খান হৃদয় ওরফে টিকটক হৃদয় (২২), মো. হাসান (১৯) ও আয়শা সিদ্দিকা মিন্নি (১৯)।
এছাড়া মামলায় চার আসামিকে বেকসুর খালাস দেয়া হয়েছে। খালাসপ্রাপ্তরা হলেন- মো. মুসা (২২), রাফিউল ইসলাম রাব্বি (২০), মো. সাগর (১৯) ও কামরুল হাসান সায়মুন (২১)।
রায় ঘোষণার সময় দণ্ডপ্রাপ্ত রাকিবুল হাসান রিফাত ফরাজি, আল কাইউম ওরফে রাব্বি আকন, মোহাইমিনুল ইসলাম সিফাত, রেজওয়ান আলী খান হৃদয় ওরফে টিকটক হৃদয়, মো. হাসান, রাফিউল ইসলাম রাব্বি, মো. সাগর এবং কামরুল ইসলাম সাইমুন রায়ের সময় আদালতে উপস্থিত ছিলেন। ১০ আসামির মধ্যে মুসা পলাতক এবং মিন্নি জামিনে রয়েছেন। মুসা ব্যতীত বাকিরা রিফাত হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছিলেন।
২০১৯ সালের ২৬ জুন বরগুনা সরকারি কলেজের সামনে শত শত লোকের ভিড়ে রিফাত শরীফকে (২৫) কুপিয়ে হত্যা করা হয়। পরে রিফাতকে কুপিয়ে হত্যার একটি ভিডিও ফেসবুকে ভাইরাল হয়।
ঘটনার পরদিন ১২ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরও ৫-৬ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেন নিহত রিফাতের বাবা আবদুল হালিম দুলাল শরীফ। ওই বছরের ১ সেপ্টেম্বর প্রাপ্তবয়স্ক ও অপ্রাপ্তবয়স্ক দু’ভাগে বিভক্ত করে ২৪ জনের বিরুদ্ধে আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন দেয় পুলিশ। এতে প্রাপ্তবয়স্ক ১০ জন এবং অপ্রাপ্তবয়স্ক ১৪ জনকে অভিযুক্ত করা হয়।
১ জানুয়ারি রিফাত হত্যা মামলার প্রাপ্তবয়স্ক ১০ আসামির বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করেন বরগুনা জেলা ও দায়রা জজ আদালত। এরপর ৮ জানুয়ারি থেকে প্রাপ্তবয়স্ক ১০ আসামির বিরুদ্ধে সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু করেন আদালত। এ মামলায় মোট ৭৬ জন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়।
১৬ সেপ্টেম্বর এ মামলার দুই পক্ষের যুক্তিতর্কের শুনানি শেষে বরগুনার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মো. আসাদুজ্জামান রায়ের জন্য বুধবার (৩০ সেপ্টেম্বর) দিন ধার্য করেন।