বিশেষ প্রতিনিধি: গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জে বিভিন্ন স্থানে কাঁচা কলা পাকাতে প্রকাশ্যে কেমিক্যাল মিশানো হচ্ছে। এমন ক্ষতিকারক রাসায়নিক দ্রব্য মেশাচ্ছেন অসাধু ব্যবসায়ীরা। এতে মাত্র ১২ ঘন্টায় কাঁচা কলা সবুজ থেকে হলুদ রঙে পরিবর্তন হচ্ছে। গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জে প্রকাশ্যে কার্বাইড জাতীয় রাসায়নিক কেমিক্যাল মেশানোর এমন একটি গোপন ভিডিও সাংবাদিকদের কাছে পাঠিয়েছে এক সচেতন পাঠক। ওই পাঠকের মোবাইল ফোনে ধারণ করা ভিডিও চিত্রের সুত্র ধরে অনুসন্ধান চালিয়ে আরো চাঞ্চল্যকর ভয়াবহ চিত্র পাওয়া যায়।
অনুসন্ধানে জানা যায়, উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের অন্তত ২০টি পাইকারী কলার আড়তে এমন বিষক্রিয়া যুক্ত ভেজাল কলা বিক্রি হচ্ছে। এরমধ্যে বামনডাঙ্গা ইউনিয়নের হাসানগঞ্জ, মনমথ গ্রামের ব্রীজমোড়, স্লাইসগেট, সাতগীরি, সর্বানন্দ ইউনিয়নের লিটনমোড়, আনন্দ বাজার, কাশেম বাজার, রামজীবন ইউনিয়নের ডোমেরহাট, বালারছিরা, ধোপাডাঙ্গা ইউনিয়নের নতুন বাজার, হাতিয়া চৌ-রাস্তা, ছাপরহাটী ইউনিয়নের মজুমদারহাট, শান্তিরাম ইউনিয়নের শোভাগঞ্জ, কালিতলা, শ্রীপুর ইউনিয়নের ধর্মপুর, বাইপাসমোড়, মাঠেরহাট, বেলকা ইউনিয়নের চান্দের মোড়, বেলকা বাজার, চন্ডিপুর ও কঞ্চিবাড়ি ইউনিয়নসহ প্রায় ২০টি স্থানে এমন ভেজাল বিষক্রিয়া কলা বিক্রি হয়। এসব কলা পাইকারী কিনে নিয়ে স্থানীয় হাট-বাজার ছাড়াও জেলা শহর হয়ে রাজধানী ঢাকায় নিয়ে যাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। কলাগুলো দেখতে আকর্ষনীয় ও লোভনীয় রঙের হলেও প্রতিটি কলা বিষে ভরা। ব্যবসায়ীরা কলার বাগানে প্রথমে একটি কেমিক্যাল পানিতে মিশিয়ে কলার কাঁদিতে স্প্রে করেন। এরপর সেই কলার কাঁদি বাগান থেকে কেটে এনে সংরক্ষণ করেন আড়তে। পরে এসব কলা শ্যাম্পু দিয়ে পরিষ্কার করে কার্বাইড জাতীয় রাসানিক পদার্থ মেশানো পানিতে চোবান। অপুক্ত কলা সবুজ রঙ থেকে ১২ ঘণ্টার মধ্যেই হলুদ ও আকর্ষণীয় হয়ে যায়। আর কেমিক্যালে পাকানো এসব কলা যাতে পঁচে না যায় সেজন্য ব্যবহার করা হয় ফরমালিন। বিষাক্ত কেমিক্যাল মেশানো এসব কলা মানবদেহের জন্য মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ জেনেও স্বাচ্ছন্দ্যে মেশিয়ে বাজারজাত করছেন অসাধু ব্যবসায়ীরা। গত এক সপ্তাহ ধরে উপজেলার অন্তত ১০ টি পাইকারী কলার মোকাম ঘুরে এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য পাওয়া যায়।
কেমন আছেন সাবেক সংসদ সদস্য হানিফ
কলার কাদিকাটা থেকে শুরু করে বাজারজাত করা পর্যন্ত প্রতিটি স্তরে দেওয়া হয় কার্বাইড জাতীয় রাসায়নিক বিষ। বাগানে থাকা অবস্থায় হরমন স্প্রে করা হয়। অপরিনত কলা কেরোসিনের স্টোভে রাইপেন ও কার্বাইড জাতীয় রাসানিক পদার্থ দিয়ে ধোঁয়া দেওয়া হয়। দেখতে সুন্দর এবং হলুদ রঙ ধারণ করানোর জন্য বিভিন্ন নিষিদ্ধ কেমিক্যাল ব্যবহার করেন ব্যবসায়ীরা। স্প্রে মেশিনের মাধ্যমে প্রফিট, মার্শাল, হিলডন, রাইজার, বাসুডিন, ইথিলিন, রাইপেনসহ অনেক ধরনের ঔষধ ছিটানো হচ্ছে অপুক্ত কাঁচা কলায়। যা গ্রাম থেকে সহজে পৌঁছে যাচ্ছে শহর-বন্দরে। আর এসব ভেজাল পণ্য প্রকাশ্যে বিক্রি হলেও নির্বাক স্থানীয় প্রশাসন। যা সুস্থ ও সবল মানুষকে চিরতরে অসুস্থ করে রাখে। বিষাক্ত কলা খেলে মারাত্মক স্বাস্থ্যহানি ঘটতে পারে। মূলত কার্বাইড জাতীয় রাসায়নিক পদার্থ শরীরে গেলে লিভার ক্যান্সার, কিডনি জনিত সমস্যা, ডায়াবেটিস ও গর্ভবতী নারীদের জন্য মারাত্মক ক্ষতির কারণ। এমনকি গর্ভেও শিশু বিলঙ্গ হতে পারে। তাদের মতে, এসব ভেজাল খাদ্যের কারণে দেশে প্রতিবছর তিন লাখ মানুষ ক্যান্সারে আক্রান্ত হচ্ছে। ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হচ্ছে এক লাখ ৫০ হাজার মানুষ। আর গর্ভজাত বিকলঙ্গ শিশুর সংখ্যা প্রায় ১৫ লাখ। তাই দ্রুত ভেজাল খাদ্য নিয়ন্ত্রণে পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি সচেতন মহলের।
কলায় কেমিক্যাল বিষ প্রয়োগের বিষয়ে জানতে চাইলে কোন ব্যবসায়ী মন্তব্য করতে রাজি হননি। গণমাধ্যকর্মীদের উপস্থিতি জানতে পেওে সেখান থেকে সটকে পড়েন তারা। তাই তাদেও বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।
বিষক্রিয়াযুক্ত এসব কলার স্বাস্থ্যঝূকি সম্পর্কে জানতে চাইলে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. আশরাফুজ্জামান সরকার বলেন, কেমিক্যাল মিশ্রিত এসব কলা স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। এসব কলা খাওয়ার সাথে সাথে বমিবমি ভাব ও ডায়রিয়া হওয়ার সম্ভবনা বেশি থাকে। আর রাসায়নিক পদার্থ মিশ্রিত খাদ্য গ্রহনের পর তা দাহ্যে পরিনত হয়ে নি:সারণ ঘটে লিভার ও কিডনির মাধ্যমে। মূলত কার্বাইড জাতীয় কেমিক্যালের প্রভাবে গর্ভবতী নারীদের মারাত্মক ক্ষতি হয়। এমনকি গর্ভজাত শিশু বিকলঙ্গ হতে পারে। তাই এসব খাবার পরিহার করার পরামর্শ এ স্বাস্থ্য কর্মকর্তার।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কাজী লুতফুল হাসান বলেন, কলার মকলার মধ্যে রাসায়নিক দ্রব্য মেশানো গুরুত্বও অপরাধ। আমি এসব কলার আড়দে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে দোষীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।