পরীক্ষায় ফেল, শাস্তির ভয়ে বাড়ি ছাড়লো কিশোরী — তিন মাসে ২০০ নরপিশাচের শিকার!
ভারতে বাংলাদেশি শিশু পাচার, ২০০ নরপিশাচের শিকার
- আপডেট সময় : ০৪:১৫:৩৪ অপরাহ্ন, সোমবার, ১১ অগাস্ট ২০২৫
- / ১৭৮৯৩ বার পড়া হয়েছে
আমরা লজ্জিত, আমরা বাকরুদ্ধ
বাংলাদেশের ১২ বছরের এক কিশোরী শুধু পরীক্ষায় একটি বিষয়ে ফেল করেছিল বলে মা-বাবার কড়া শাসনের ভয়ে বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যায়। কিন্তু সেই ভয়ই তাকে ঠেলে দিল সবচেয়ে ভয়ঙ্কর অন্ধকারে নারী পাচার চক্রের কবলে পড়ে ভারতে পৌঁছে গেল সে।
মহারাষ্ট্রের ভাসাই বিহারের নৈগাঁও এলাকায় দেহব্যবসার আড়ালে তিন মাসে অন্তত ২০০ জন নরপিশাচ তাকে নির্মম যৌন নির্যাতনের শিকার করেছে।
এই ঘটনা কেবল একটি পরিবারের নয় আমাদের সমাজ ও রাষ্ট্রের জন্যও গভীর লজ্জা ও বেদনাদায়ক ব্যর্থতার প্রতিচ্ছবি। আমরা লজ্জিত, আমরা বাকরুদ্ধ কারণ একটি শিশুর শৈশব, তার হাসি, তার নিরাপত্তা সবকিছু কেড়ে নেওয়া হলো আমাদের চোখের সামনে, অথচ প্রতিরোধে আমরা যথাসময়ে কিছুই করতে পারিনি।
কীভাবে ঘটল এই নরকযন্ত্রণা
ভারতের মুম্বাইসংলগ্ন নৈগাঁওয়ে মানব পাচার চক্রের বিরুদ্ধে মীরা-ভায়ান্দার ভাসাই-ভিহার পুলিশের অ্যান্টি-হিউম্যান ট্রাফিকিং ইউনিট অভিযান চালায়। এনজিও এক্সোডাস রোড ইন্ডিয়া ফাউন্ডেশন ও হারমনি ফাউন্ডেশনের সহযোগিতায় ২৬ জুলাই কিশোরীটিকে উদ্ধার করা হয়।
হারমনি ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান আব্রাহাম মাথাই জানান প্রথমে তাকে গুজরাটের নাদিয়াদে নিয়ে যাওয়া হয়, যেখানে ২০০ জনেরও বেশি পুরুষ তাকে যৌন নির্যাতন করে।
এই মেয়েটি এখনো কৈশোরে পৌঁছায়নি, অথচ তার জীবনকে ধ্বংস করে দিয়েছে দেহব্যবসার নরপিশাচরা।
বাবা-মায়ের কঠোর শাসনের ভয়াবহ ফলাফল
শিক্ষা বা শৃঙ্খলার নামে সন্তানকে অমানবিক শাস্তি দেওয়ার প্রবণতা আমাদের সমাজে এখনো বিদ্যমান। এই ঘটনাই প্রমাণ করে বাবা-মায়ের ভুল পদ্ধতি, রাগ ও কঠোরতা একটি শিশুকে কীভাবে অজানা অন্ধকারের পথে ঠেলে দিতে পারে।
ভাল ফলাফল না করলেই যদি অবহেলা ও অপমান জোটে, তবে সন্তান কোথায় যাবে? হয়তো এই কিশোরীর মতোই একদিন চিরতরে হারিয়ে যাবে ভালোবাসার আলো থেকে।
আন্তর্জাতিক হিউম্যান রাইট ক্রাইম রিপোর্টার্স ফাউন্ডেশনের বিবৃতি
আমরা এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি এবং রাষ্ট্রের প্রতি দাবি জানাচ্ছি:
1. সীমান্ত নজরদারি কঠোরভাবে বাড়াতে হবে—নারী ও শিশু পাচারকারীরা যেন আর কোনোভাবে দেশের সীমানা পেরোতে না পারে।
2. পাচার ও যৌন নির্যাতনে জড়িত সব অপরাধীকে দ্রুত শনাক্ত ও বিচারের আওতায় আনতে হবে যাদের মধ্যে ২০০ জন নির্যাতনকারীও অন্তর্ভুক্ত।
3. পরিবার ও বিদ্যালয় পর্যায়ে সচেতনতা কার্যক্রম জোরদার করতে হবে শাস্তির পরিবর্তে সন্তানকে ভালোবাসা, সহানুভূতি ও মানসিক সমর্থন দিতে হবে।
4. স্কুল ও কমিউনিটি পর্যায়ে মানসিক স্বাস্থ্য সহায়তা কেন্দ্র স্থাপন করতে হবে, যাতে শিশুদের মনস্তাত্ত্বিক সংকট আগে থেকেই শনাক্ত ও সমাধান করা যায়।
আমাদের সংগঠন সর্বদা শিশু ও নারীর অধিকার রক্ষায় সচেতন এবং কঠোর অবস্থানে থাকে। আমরা বিশ্বাস করি—এখনই যদি সামাজিক ও আইনগত পরিবর্তন না আনা হয়, তবে এমন ঘটনা আরও ঘটবে এবং আমরা সবাই এই ব্যর্থতার দায় এড়াতে পারব না।
আমরা লজ্জিত, আমরা বাকরুদ্ধ কিন্তু চুপ থাকব না।
প্রতিটি শিশুর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হলে পরিবার থেকে রাষ্ট্র-সবাইকে দায়িত্ব নিতে হবে।
শাস্তি নয়, ভালোবাসাই পারে শিশুদের নিরাপদ রাখতে।
এমএইচ মানিক
সাংস্কৃতিক সম্পাদক
ন্যাশনাল হিউম্যান রাইট ক্রাইম রিপোর্টার্স ফাউন্ডেশন