০৯ সেপ্টেম্বর রাঙ্গামাটির পাকুয়াখালীতে ৩৫ কাঠুরিয়া গণহত্যার বিচারের দাবিতে পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদ ও অঙ্গ সংগঠন খাগড়াছড়ি জেলা শাখা কর্তৃক আয়োজিত মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশের (প্রেস বিজ্ঞপ্তি)
ইতিহাসের কলঙ্কময় অধ্যায় লংগদু পাকুয়াখালী ট্রাজেডি।
রাঙ্গামাটি জেলার লংগদু উপজেলা ও বাঘাইছড়ি উপজেলার সারোয়াতলী ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী পাকুয়াখালীতে ১৯৯৬ সালের ৯ই সেপ্টেম্বর ৩৫ কাঠুরিয়াকে পার্বত্য চট্টগ্রাম জন সংহতি সমিতি (তথাকথিত শান্তিবাহিনী) হত্যা করে৷ সেই থেকে পার্বত্য এলাকায় বাঙ্গালীরা এ দিনটিকে পাকুয়াখালী ট্রাজেডি দিবস হিসেবে পালন করে আসছে। নিহতদের পরিবারগুলোর সদস্যরা এই দিনটি আসলে করব জিয়ারত, দোয়া মাহফিল ও বিচার দাবি করে প্রতিবাদ সভা করেন। এ বছরের সেপ্টেম্বর পাকুয়াখালী ট্রাজেডির ২৭ বছর পূর্ণ হলেও বিচার হয়নি খুনি সন্ত্রাসীদের। উক্ত ঘটনাটিকে পিসিএনপি এর পক্ষ থেকে পাকুয়াখালী গনহত্যা দিবস হিসেবে পালন করে আসছে। তারই ধারাবাহিকতায় আজ ০৯ই সেপ্টেম্বর ২০২৩খ্রিঃ খাগড়াছড়ি সদরের শাপলা চত্ত্বরে উক্ত দিবস পালনের লক্ষে ও সুষ্ঠু বিচার দাবীতে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
কর্মসূচীতে পিসিএনপি কেন্দ্রীয় সাংস্কৃতিক বিষয়ক সম্পাদক নজরুল ইসলাম মাসুদের সভাপতিত্বে ও পিসিসিপি খাগড়াছড়ি জেলার সভাপতি সুমন আহমেদের সঞ্চালনায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পিসিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও মাটিরাঙ্গা উপজেলা পরিষদের সম্মানিত ভাইস চেয়ারম্যান আনিসুজ্জামান ডালিম, বিশেষ অতিথি হিসেবে ছিলেন পিসিএমপির কেন্দ্রীয় সভানেত্রী সালমা আহমেদ মৌ, পিসিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য এস এম হেলাল, পিসিএনপি মাটিরাঙ্গা উপজেলা আহবায়ক মো রবিউল হোসেন, পিসিএনপি খাগড়াছড়ি সদর উপজেলা সাধারণ সম্পাদক মো নয়ন, পিসিসিপি খাগড়াছড়ি জেলার সাংগঠনিক সম্পাদক মো সোহেল রানা প্রমূখ।
উল্লেখ্য, ১৯৯৬ সালের ৯ই সেপ্টেম্বর শান্তিবাহিনী লংগদুর ৩৬ জন কাঠুরিয়াকে ব্যবসায়িক লেনদেনের কথা বলে পাকুয়াখালী নামক গহীন অরণ্যে ডেকে নিয়ে যায়। ইউনুস আলী নামের এক কাঠুরিয়া সেদিন সেখান থেকে কোনভাবে পালিয়ে গ্রামে ফিরে আসেন। তিনি ফিরে এসে গ্রামবাসীকে বিস্তারিত জানালে গ্রামবাসী সেনাবাহিনী ও পুলিশের সহযোগিতায় পাকুয়াখালী গহীন অরণ্যের একটি দুইশ ফুটের খাদ থেকে ছিন্ন বিচ্ছিন্ন ২৮টি লাশ উদ্ধার করেন। বাকী ৭জন কাঠুরিয়ার লাশের কোন হদিস মিলেনি।
মৃত্যুর পথ থেকে ফিরে আসা কাঠুরিয়া ইউনুস আলী বলেন, সন্তু লারমার সন্ত্রাসীরা ৩৬জন কাঠুরিয়াকে ৫/৬ জন ভাগ করে বেধে ৭টি গ্রুপে পাকুয়াখালীর গহীন অরণ্যে নিয়ে যায়৷ সন্ত্রাসীদের সবার হাতে ছিল অস্ত্র, ধারালো দা ও ভারতীয় ১ ফুট লম্বা ছুরি। সেদিন মূলত বাঙ্গালী হওয়ার অপরাধে ৩৫ জন কাঠুরিয়াকে নির্মম ও নৃশংসভাবে হত্যা করে৷ হত্যাকাণ্ডের বর্ণনা দিতে গিয়ে প্রত্যক্ষদর্শী ও ইউনুস আলী আরো বলেন, “প্রতিটি বাঙ্গালী কাঠুরিয়াকে দা ও ভারতীয় ছুরি দিয়ে নৃশংসভাবে আঘাত করে৷ শরীরের প্রতিটি স্থানে আঘাতের চিহ্ন ছিল৷ লাশ উদ্ধারের সময় দেখা যায়, লাশগুলো পচে দুর্গন্ধ সৃষ্টি হয়েছে। শরীরের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ গুলো পচে গেছে৷ কোনরকমভাবে পচে যাওয়া লাশগুলো লংগদুতে নিয়ে আসা হয় ৯ থেকে ১১ সেপ্টেম্বরের মধ্যে।”
অতিথিরা বক্তব্যে বলেন, ১৯৯৬ সালে এই ট্রাজেডি হলেও আজ পর্যন্ত এই হত্যাকাণ্ডের কোন বিচার হয়নি। বিচারের আর কোন আশাও বাঁচিয়ে রাখা হয়নি। হত্যাকাণ্ডের মদদদাতা সন্তু লারমা ও তার সন্ত্রাসী বাহিনীর সদস্যদের আইনের আওতায় এনে বিচার করার প্রতিশ্রুতি তৎকালীন সরকারের মন্ত্রী এমপি’রা দিলেও তার ১বছর পর অর্থাৎ ১৯৯৬ সালের পার্বত্য চুক্তির শর্তে তা ব্যাহত করে। চুক্তির শর্ত অনুযায়ী সকল হত্যাকাণ্ড ও মামলা থেকে সন্ত্রাসীদেরকে অব্যাহতি দেওয়া হয়৷ এমনকি দায়মুক্তিও দেওয়া হয়। যার ফলে স্বজনহারা পরিবারগুলো যেমন বিচার পায়নি, তেমনি ক্ষতিপূরণও পায়নি! বাঙ্গালী অধ্যুষিত এই উপজেলায় রাজনৈতিক দলগুলোর ভোট বাক্স হলেও কেউ এই ট্রাজেডি নিয়ে কথা বলেনি!
শান্তিবাহিনী কর্তৃক পার্বত্য চট্টগ্রামে আরো বহু গণহত্যা সংঘটিত হয়েছে৷ যার কোনটিরই বিচার হয়নি।
স্বজনহারা মানুষগুলোর পাশাপাশি এই কর্মসূচি থেকে পিসিএনপি, পিসিএমপি ও পিসিসিপির নেতাকর্মীদের সরকারের কাছে একটাই দাবি যেনো তথাকথিত শান্তিবাহিনীর সন্ত্রাসীদের বিচারের কাঠগড়ায় মুখামুখি করা হয়।
এমকে/আস্থা/এসএ