DoinikAstha Epaper Version
ঢাকাশুক্রবার ২৬শে জুলাই ২০২৪
ঢাকাশুক্রবার ২৬শে জুলাই ২০২৪

আজকের সর্বশেষ সবখবর

হজ্জের প্রস্তুতি

Link Copied!

হজ্জ একটি দৈহিক, আর্থিক ও আত্মিক ইবাদত। এতে যেমন আছে দীর্ঘ সফর ও বিশেষ স্থানে বিশেষ আমলের অপরিহার্যতা তেমনি আছে গভীর রূহানিয়ত ও আধ্যাত্মিক তাৎপর্যের বিষয়। আল্লাহর ঘরে হাজিরি মুমিন জীবনের পরম সৌভাগ্য। ওই পুণ্যভূমিতে পৌঁছে বান্দা তার রবের উদ্দেশে নিজের আবদিয়ত ও দাসত্বের এবং ইশ্ক ও মহব্বতের প্রমাণ দেবে। আল্লাহর শি’আর ও নিদর্শনাবলীর প্রতি ভক্তি ও শ্রদ্ধা প্রকাশ করবে। নিজের জাহের ও বাতেনকে ইবরাহীম খলীলুল্লাহর রঙে রঙিন করার অনুপ্রেরণা অর্জন করবে এবং ঐ পবিত্র ভূমির নূর ও নূরানিয়াতে নিজেকে আলোকিত করবে Ñএটাই তো হজ্জের দর্শন ও তত্ত্বকথা।

বায়তুল্লাহ অভিমুখে হজ্জের সফর তো ইবাদতের সফর। আল্লাহর সন্তুষ্টি ও নৈকট্য লাভের সফর। তাই আল্লাহর যে বান্দা হজ্জের নিয়্যাত করে তার অবশ্যকর্তব্য এ ইবাদতের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করা। এক্ষেত্রে জাগতিক প্রস্তুতির চেয়ে বেশি প্রয়োজন রূহানী প্রস্তুতি। কারণ যে ইবাদত ইখলাস ও তাকওয়ার সাথে এবং সুন্নাহ-সম্মত পন্থায় আদায় করা হয় তা কবুলিয়তের অতি নিকটবর্তী হয়ে যায়। তাই শুধু হজ্জ নয়, নামায-রোযা, যাকাত-সদকাসহ সকল ইবাদতকে জাহের-বাতেন উভয় দিক থেকে রাসূলুল্লাহ (সা.) এর নামায, রোযা, হজ্জ ও যাকাতের অনুরূপ করার চেষ্টায় নিয়োজিত হওয়া সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন।

কিন্তু ধরুন, হজ্জ উপলক্ষে যদি শুধু বৈষয়িক প্রস্তুতির চিন্তা করা হয়, রূহানী বা আত্মিক প্রস্তুতির কানো প্রয়োজনই বোধ করা না হয় তাহলে তো প্রচুর অর্থ ও দীর্ঘ সময় ব্যয় করে যেভাবে যাওয়া হয় সেভাবেই ফিরে আসতে হবে। বাস্তব জীবনে হজ্জের কোনো প্রভাব প্রতিক্রিয়াই পরিলক্ষিত হবে না।

এটা ঠিক যে, হজ্জের জন্য পাথেয় সংগ্রহ করা, বৈষয়িক প্রস্তুতি নেয়া সম্পূর্ণ জায়েয বরং প্রয়োজন পরিমাণ প্রস্তুতি তো আবশ্যক এবং শরীয়তের নির্দেশ। উপরন্তু শরীয়তে ঐসব লোকের নিন্দা করা হয়েছে, যারা তাওয়াক্কুল ও তাকওয়ার নামে হজ্জের সফরে প্রয়োজনীয় পাথেয় না নিয়েই চলে যেত এবং সেখানে মানুষের নিকট ভিক্ষার হাত প্রসারিত করত। তবে বৈষয়িক প্রস্তুতির চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে ভালোভাবে হজ্জের আহকাম ও মাসায়েল শেখা এবং নিজের হৃদয় ও অন্তরকে হজ্জের কল্যাণ ধারণের উপযোগী করা।

কুরআনে কারীমে তাকওয়ার পাথেয় অর্জনের প্রতি অধিক গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেন : হজ্জের সফরে তোমরা পাথেয়র ব্যবস্থা কর, বস্তুত তাকওয়াই উৎকৃষ্ট পাথেয়। হে জ্ঞানী লোকেরা তোমরা আমাকে ভয় করে চল। (সূরা বাকারা : ১৯৭)। স্মরণ রাখা উচিত, হজ্জ হল পুরো জীবনের আমল। পুরো জীবনে একবারই হজ্জ করা ফরয। তাহলে যে হজ্জ পুরো জীবনব্যাপী পরিব্যাপ্ত তার প্রভাব তো জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত অবশিষ্ট থাকতে হবে। তাহলে হজ্জকে প্রথাগত হজ্জের চেয়ে জীবন্ত হজ্জে পরিণত করার চেষ্টা করা কি অবশ্য কর্তব্য নয়? এই প্রচেষ্টা ও সাধনায় আত্মনিয়োগ করতে পারাটাই তো হজ্জ কবুল হওয়ার অন্যতম বড় আলামত। আর আল্লাহ তা’আলার রহমত, মাগফিরাত ও জান্নাতের ওয়াদা তো মকবুল হজ্জের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য।

সকল ইবাদতের মতো এই ইবাদতেরও প্রাণ হচ্ছে ইখলাস। অর্থাৎ একমাত্র আল্লাহ তা’আলার সন্তুষ্টি ও নৈকট্য লাভের উদ্দেশ্যে হজ্জ করা। লৌকিকতা, সুনাম-সুখ্যাতি, হাজী উপাধি লাভ ইত্যাদি যে কোনো দুনিয়াবী স্বার্থ ও উদ্দেশ্য থেকে এই আমলকে মুক্ত রাখা অতি জরুরি। ইখলাস ছাড়া কোনো আমলই আল্লাহর দরবারে কবুল হয় না। আল্লাহ তা’আলা বলেন : তারা তো আদিষ্ট হয়েছিল আল্লাহর ইবাদত করতে তার আনুগত্যে বিশুদ্ধচিত্ত হয়ে একনিষ্ঠভাবে। (সূরা বায়্যিনাহ : ৫)।

হজ্জ ও উমরা সম্পর্কে তো আল্লাহ তা’আলা আরো বিশেষ ঘোষণা দিয়েছেন : আর তোমরা আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে হজ্জ ও উমরা পরিপূর্ণরূপে পালন কর। (সূরা বাকারা : ১৯৬)। জুনদুব আল-আলাকী রাহ. হতে বর্ণিত এক হাদীসে রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন : যে ব্যক্তি লোকসমাজে প্রচারের উদ্দেশ্যে নেক আমল করে, আল্লাহ তা’আলা তার কর্মের প্রকৃত উদ্দেশ্যের কথা লোকদের শুনিয়ে দিবেন। আর যে ব্যক্তি লোক দেখানোর উদ্দেশ্যে কোনো সৎকাজ করে, আল্লাহ তা’আলাও তার প্রকৃত উদ্দেশ্যের কথা লোকদের মাঝে প্রকাশ করে দিবেন। (সহীহ বুখারী : ৬৪৯৯)।

এজন্য হজ্জের সৌভাগ্য লাভকারীদের উচিত, আল্লাহ তা’আলার নিকট রিয়ামুক্ত হজ্জের জন্য দুআ করতে থাকা। এ তো স্বয়ং আল্লাহর প্রিয় হাবিব (সা.) এর আদর্শ ও শিক্ষা। আনাস রা. হতে বর্ণিত হয়েছে, রাসূলুল্লাহ (সা.) একটি পুরাতন বাহন এবং চার দিরহাম বা তার চেয়ে কম মূল্যের একটি পশমী বস্ত্রে হজ্জ করলেন, তখন তিনি এই দুআ করলেন : হে আল্লাহ! আমার হজ্জকে রিয়া ও খ্যাতির আকাক্সক্ষামুক্ত হজ্জরূপে কবুল করেন। (সুনানে ইবনে মাজাহ : ২৮৯০)। আল্লাহ তা’আলা আমাদের সবাইকে রাসূলের সুন্নত ও আদর্শ মোতাবেক হজ্জ করার তাওফীক দান করুন।

বিনা অনুমতিতে এই সাইটের সংবাদ, আলোকচিত্র অডিও ও ভিডিও ব্যবহার করা বেআইনি।
সেহরির শেষ সময় - ভোর ৩:৫৯
ইফতার শুরু - সন্ধ্যা ৬:৪৯
  • ফজর
  • যোহর
  • আছর
  • মাগরিব
  • এশা
  • সূর্যোদয়
  • ৪:০৪
  • ১২:০৮
  • ৪:৪৩
  • ৬:৪৯
  • ৮:১১
  • ৫:২৪