নিজস্ব প্রতিবেদক : রুপ ও গুনের এক অদ্ভুত সমন্বয়ে নিজের আলোয় আলোকিত সাংবাদিক শমী ইব্রাহীম। পুরো নাম শেখ ওয়াসিমা তাবাস্সুম শমী। তবে মিডিয়া পাড়ায় শমী ইব্রাহীম নামেই পরিচিত সে। মিডিয়ায় আগমন ২০০৫ সালে লাক্স চ্যানেল আই সুপার স্টারের মধ্য দিয়ে। এর পর বিভিন্ন নামি দামি পন্যের ব্রান্ড এ্যামবাসেডর হবার পাশাপাশি করেছেন অনেক বিজ্ঞাপন। সরব উপস্থিতি ছিল নাটকেও। এর পর আসেন সাংবাদিকতায়। দক্ষতার পরিচয় দেন এই অঙ্গনেও। দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে দাপটের সাথে কাজ করে যাচ্ছেন এই পেশায়। শমী ইব্রাহীম বর্তমানে কর্মরত আছেন গাজী স্যাটেলাইট টেলিভিনে। সম্প্রতি কথা হয় এই গুনী সাংবাদিকের সাথে। একান্ত আলাপচারীতায় উঠে আসে তার অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কথা।
২০০৫ সালে গ্লামার ওয়ার্ল্ডের মাধ্যমে মিডিয়ায় আগমন। এর পর নাটক মডেলিং এ সফলতা পাবার পরেও সেখানে ক্যারিয়ার গড়ার কথা না ভেবে বেছে নিয়েছেন সাংবাদিকতাকে। দাপটের সাথেই ভালোবাসার এই পেশায় কাটিয়েছেন ১৫ টি বছর। শুরুটা ক্রাইম রিপোর্টিং দিয়ে করলেও বর্তমানে স্বাস্থ্য, নারী ও শিশু বিটেই কাজ করছেন গুনী এই সাংবাদিক। করোনার সময় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে খবর সংগ্রহ করেছেন আইসিইউ সহ নানান ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে। যার ফলে কোভিড ফ্রন্টলাইনার হিসেবে পেয়েছেন নানান সম্মাননা ও এ্যাওয়ার্ড ও। সাংবাদিকতার বিভিন্ন সেকটরে অংশ নিয়েছেন দেশী বিদেশী নানান কর্মশালায়। শেখ ওয়াসিমা তাবাস্সুম শমী থেকে সাংবাদিক শমী ইব্রাহীম হবার পথটা কেমন ছিল? জানতে চাওয়া হলে শমী বলেনঃ ২০০৫ সাল থেকেই বিশাল নামের সংক্ষিপ্ত করন হয়ে গিয়েছিল। যখন নাটক করতাম তখন শেখ শমী নামেই সবাই চিনত। আর প্লাটফর্ম পরিবর্তনের পর লাইফ পার্টনারের নামের সাথে নিজেকে জড়িয়ে হয়েছি শমী ইব্রাহীম। শুরু থেকে এখন পর্যন্ত কোন পথই মসৃণ ছিলনা। সাফল্যের প্রতিটি ক্ষেত্রেই ছোট বড় অনেক বাঁধা পেয়েছি। এর পরেও যোগ্যতার ওপরে আসলে কোন কথা থাকে না। আপনি যোগ্য আপনার কোয়ালিটি আছে তার মানে আপনাকে যত বাঁধাই দেয়া হোক না কেন আপনার বিজয় নিশ্চিত। অভিনয়, উপস্থাপনা, সাংবাদিকতা সব মাধ্যমেই প্রতিষ্ঠিত শমী ইব্রাহীম। এই তিন মাধ্যমের কোনটিতে কাজ করতে বেশি স্বাচ্ছন্দ্য পান প্রশ্ন ছিল তার কাছে? বরাবরই সাংবাদিকতা আমার স্বাচ্ছন্দ্যের জায়গা। ভালোলাগা ভালোবাসার জায়গা। এই সাংবাদিকতা এখন রক্তে মিশে গেছে। পর্দায় অভিনয় না করলেও জীবনের মঞ্চে প্রতিদিনইতো আমরা কম বেশি অভিনয় করছি, তাই না? আর সংবাদ বা কোন প্রোগ্রাম উপস্থাপনা অবশ্যই ভালো লাগে তবে উপস্থাপনার চেয়ে মাঠের সাংবাদিকতাই আমি বেশি উপোভোগ করি।
ছবি : মোস্তাফিজুর রহমান মিন্টু
একজন ভালো সাংবাদিকের কি কি গুণাবলী থাকা দরকার? প্রশ্নের জবাবে শমী বলেন, আমি বিশ্বাস করি ভালো যে কোন কিছু হবার আগে সেই ব্যক্তিকে ভালো মানুষ হয়ে ওঠা খুব জরুরী। একজন সংবাদিকের কাছে দেশ, সমাজ ও ব্যক্তির অনেক চাওয়া পাওয়া থাকে। সবার কথা না ভেবে শুধু সত্যের সন্ধান করে খবরটা যখন আপনি সবার সামনে আনবেন তাখনই আপনার পেশার সার্থকতা। একজন সাংবাদিকের কাজ হলো সব সময় সত্যের সন্ধান করা। সঠিক তথ্য তুলে ধরা। এর ফলে আপনার শুভাকাঙ্ক্ষী যেমন থাকবে তেমনই আপনার সমালোচকও থাকবে। তবে দিন শেষে সৎ ও নিষ্ঠার সাথে কাজ শেষে যে শান্তি আপনি পাবেন এর তুলনা হয় না।
শমী ইব্রাহীম খুবই ফ্যাশন সচেতন। শাড়ি তার পছন্দের পোশাক হলেও খুব কমই তা পড়া হয়। কাজের ক্ষেত্রে ওয়েসাটার্নই তার প্রথম পছন্দ। কারন একজন রিপোর্টারকে সারাক্ষণই দৌড় ঝাপের মাঝে থাকতে হয়। তাই পরনের কাপড় যেন কাজে বাধা না হয় সেটা সবসময়ই খেয়াল রাখেন তিনি। কথায় আছে যে রাধে সে চুলও বাধে। শমী ইব্রাহীমের রান্নার ব্যাপক সুনাম রয়েছে। রান্না এবং খাওয়া দুটোতেই বেশ সৌখিন তিনি। সাংবাদিকতার পাশাপাশি খাবার ও বুটিকের দুটি আলাদা অনলাইন ব্যবসা এবং ডে কেয়ার নিয়ে খুব ব্যস্ত তিনি। নিজেকে সব রঙে রাঙাতে পছন্দ করলেও সাদা আর কালো রঙের প্রতি বেশ দূর্বল শমী ইব্রাহীম। অবসর খুব বেশি পান না তিনি। এর পরেও যতটুকু সময় পান তার পুরোটাই বরাদ্দ কেবলই সন্তানের জন্য। গান শুনতে খুব ভালোবাসেন তিনি আর সবচেয়ে বেশি উপোভোগ করেন শীতকাল। সামাজিক দ্বায়বদ্ধতার কথায় তিনি বলেন, সন্তানের কারনে ওয়ার্কিং মায়েদের যেন কাজে বেগ পেতে না হয় সে কারনে ডে কেয়ার নিয়ে কাজ করা। কারন আমি যেহেতু একজন ওয়ার্কিং মাদার, তাই এর বাধা বিপত্তিগুলো আমি বুঝি। ভবিষ্যতে এর পরিধি আরও বাড়ানোর চিন্তা আছে। পাশাপাশি সিঙ্গেল ওয়ার্কিং মাদারদের জন্য সাপোর্টিভ কিছু করারও পরিকল্পনা রয়েছে। ভ্রমন পিপাসী এই সাংবাদিক সুযোগ পেলেই পরিবার সহ দেশের বাইরে ঘুরতে যান। পরিবারের সবাইও তার মতই ঘুরতে খুব পছন্দ করেন। গুনী এই সাংবাদিকের মতে, জীবন তো একটাই। তাই যতটা সম্ভব এটাকে উপোভোগ করা উচিত।