গরুর বদলে অটোরিক্সাশা দিয়ে টানছে তেলের ঘানি
হেলাল উদ্দিন/ফুলবাড়ী কুড়িগ্রাম প্রতিনিধিঃ
যুগযুগ ধরে গ্রাম বাংলায় গরু দিয়ে তেলের ঘানি টানলেও সময়ের সাথে সাথে লেগেছে আধুনিকতার ছোয়া। তাই আধুনিকতার সাথে তাল মিলিয়ে জীবনের নানা পরির্বতন এসেছে শহরে ও গ্রামে। যন্ত্র নির্ভর হচ্ছে মানুষ। হাজার বছরের বাঙ্গালী ঐতিহ্য হারিয়ে গিয়ে মানুষ এখন আধুনিক যুগের যান্ত্রিক সভ্যতায় মিশে যাচ্ছে। শুধু শহরের মানুষরা যন্ত্র নির্ভর নয় গ্রামের মানুষরাও তাদের জীবনে যন্ত্র দিয়ে আমুল পরির্বতন এনেছে। নানা উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করে অর্থনৈতিক উন্নয়নে গ্রামের মানুষ অল্প ব্যায়ে অধিক সমৃদ্ধির স্বপ্ন বুনছেন।
আমাদের দেশে শত বছরের ঐতিহ্য গরু দিয়ে তেলের ঘানি টানা। গবাদিপশুর কষ্ট ও তেল উৎপাদনে সময় বেশি লাগার কারনে ৬০ হাজার টাকা ব্যায়ে অটোরিকশা দিয়ে তেলের ঘানি টানার পদ্ধতি তৈরি করেছেন কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার রামরাম সেন, আরজি নেওয়াশি গ্রামের সামছুল হক ও মুকুল মন্ডল। এতে ব্যবহার করেছেন অটো রিকশার ফ্রেম, চাকা, ব্যাটারি ও মোটর। এসব যন্ত্রাংশ দিয়ে তৈরি তেলের ঘানি টানার দৃশ্য দেখতে প্রতিদিন মানুষ ভীড় করছেন তাদের বাড়িতে।
উপজেলার ভাঙ্গামোড় ইউনিয়নের রামরাম সেন ও শিমুলতলা বাজার সংলগ্ন আরজি নেওয়াশীর তেল ব্যবসায়ী মুকুল মন্ডল ও শামছুল হক জানান, দীর্ঘ ৩৫ বছর ধরে বাপ দাদার তেলের ঘানি গরু দিয়ে টেনে আসছি কিন্তু বর্তমানে গরুর খুব হয় ভেবে যুগের সাথে তাল মিলিয়ে অটোরিকশা দিয়ে তেলের ঘানি টানছি। বর্তমানে বাজারে দেশী সরিষা প্রতিমন তিন থেকে সাড়ে তিন হাজার টাকা। প্রতি ঘানিতে ১০ কেজি সরিষার থেকে ৩ লিটার তেল উৎপাদন করে। আগে তিন লিটার তেল গরুর ঘানিতে উৎপাদন করতে সময় লাগতো ৩ থেকে ৪ ঘন্টা। এখন অটোরিকশা দিয়ে ঘানি টেনে ৩ লিটার তেল উৎপাদন করতে সময় লাগে মাত্র দেড় থেকে ১ ঘন্টা। এ পদ্ধতির ব্যবহার করে একদিকে যেমন শারিরীক পরিশ্রম কমে এসেছে তেমনি তেল উৎপাদনের সময় কমে গেছে। বর্তমানে অটোরিকশা দিয়ে ঘানি টেনে প্রতিদিন ৪০ কেজি সরিষা থেকে ১২ থেকে ১৪ লিটার তেল উৎপাদন করা যায়। আর উৎপাদিত প্রতি লিটার তেল খুচরা বিক্রি করি সাড়ে ৩শ টাকা। এতে প্রতিদিন সব খরচ বাদ দিয়ে ৮-৯ শ টাকা আয় হয়।
তেল ক্রেতা ও দর্শনার্থী জহির উদ্দিন, খালেক ও মালেক জানান, দীর্ঘদিন আমরা গরু দিয়ে তেলের ঘানি টানা দেখেছি, অটোরিকশা দিয়ে তেলের খানি টানা দেখে খুবই ভালো লাগছে, তবে আমরা এখান থেকে পরিছন্ন তেল পাচ্ছি এবং বাড়ির কাছে হাতের নাগালেই তেল কিনতে পারছি।