ঢাকা ১১:৩০ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২৯ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম:
Logo পানছড়িতে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর জন্য সৌর বিদ্যুতের মাধ্যমে বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা করেলেন সেনাপ্রধান Logo আইফোন ১৭ সিরিজের ডিজাইনার বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত আবিদুর চৌধুরী Logo ওএসডির ছয় মাস পর পরিচালকের দায়িত্ব পেলেন ডা. সাইফুল ইসলাম! Logo সুনামগঞ্জে এনসিপির যুগ্ম-সমন্বয়ক যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ এলাকাবাসী Logo পানছড়িতে হেফাজত ইসলামের কাউন্সিল অনুষ্ঠিত Logo শার্শায় ১২ কেজি গাঁজাসহ যুবক আটক Logo ফুলবাড়িয়ায় ৪৩ জনকে চোখের চিকিৎসা করালেন বিএনপি নেতা  Logo পদত্যাগের পর নেপালেই আছেন কেপি শর্মা ওলি Logo কেপি শর্মা ওলির পতনের পেছনে সাবেক রাজা জ্ঞানেন্দ্র হাত! Logo ভারত ও চীনের ওপর শত ভাগ শুল্ক আরোপ করতে ইউরোপকে ট্রাম্পের আহ্বান

টাকার বিনিময়ে ধর্ষণের ঘটনা ধামাচাপা!

News Editor
  • আপডেট সময় : ১০:৩৩:০৪ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৯ অক্টোবর ২০২০
  • / ১০৪৭ বার পড়া হয়েছে

বগুড়ার শেরপুরে গ্রাম্য সালিশের নামে দুটি ধর্ষণের ঘটনা টাকার বিনিময়ে ধামাচাপা দেয়ার অভিযোগ উঠেছে এলাকার মাতবরদের বিরুদ্ধে। পাশাপাশি অভিযুক্তদের জরিমানাও আদায় করেছেন তারা।

জানা গেছে, মাদরাসাছাত্রীকে ধর্ষণ করায় অভিযুক্ত ব্যক্তির কাছ থেকে ৯০ হাজার টাকা এবং গৃহবধূকে ধর্ষণের অভিযোগে অভিযুক্ত ব্যক্তির কাছ থেকে ৮০ হাজার টাকা জরিমানাসহ জুতাপেটা করে বিষয়টি মীমাংসা করেন গ্রাম্য মাতবররা।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর অপসারণের দাবিতে লংমার্চের ঘোষণা

শেরপুর উপজেলার গাড়িদহ ইউপি ও খামারকান্দি ইউপিতে সম্প্রতি পৃথক এসব ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে।

জানা যায়, গত ৪ অক্টোবর রাতে গাড়িদহ ইউপির সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী রাতে খেয়ে রুমে ঘুমিয়ে পড়েন। কিন্তু মধ্যরাতে পাশের রামনগর গ্রামের আব্দুস সালামের ছেলে ছাব্বির হাসান ঘরে ঢুকে তাকে ধর্ষণ করে। এ সময় ছাত্রীর চিৎকারে আশেপাশের লোকজন এসে হাতেনাতে ছাব্বিরকে আটক করেন।

এরপর গাড়িদহ ইউপি চেয়ারম্যান দবিবুর রহমানের বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয় তাকে এবং সেখানেই আটকে রাখা হয়। পরদিন চেয়ারম্যানের বাড়িতে সালিশে বসেন গ্রাম্য মাতবররা। সেখানে ৯০ হাজার টাকা জরিমানা দিয়ে সালিশের মাধ্যমে ঘটনাটি আপস করে ছাব্বিরকে ছেড়ে নিয়ে যায় তার পরিবার।

তবে পরবর্তী সময়ে ধর্ষণের শিকার ছাত্রীর পরিবারকে আইনের আশ্রয় নিতে বাধা ও ভয়ভীতি দেখানোর অভিযোগ রয়েছে গ্রাম্য মাতবর আব্দুস সালামের বিরুদ্ধে। কিন্তু তার বিরুদ্ধে আনীত সব অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে দাবি করেন তিনি।

শালিসি বৈঠকে উপস্থিত থাকা গ্রাম্য মাতবর আব্দুল মোমিন বলেন, চেয়ারম্যানসহ অন্যান্য গ্রাম্য মাতবররা বিচার করেছেন। অভিযুক্ত ব্যক্তির কাছ থেকে ৬০ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করে ভুক্তভোগী মেয়ের বাবাকে দেয়া হয়েছে। কিন্তু তিনি এসবের মধ্যে নেই বলে দাবি করেন। এছাড়া বাকি ৩০ হাজার টাকা বিভিন্ন খাতে ব্যয় করা হয়েছে বলে জানা গেছে।

এদিকে, ঘটনাটি সম্পর্কে জানতে চাইলে ভুক্তভোগী ওই ছাত্রীর বাবা সত্যতা স্বীকার করলেও কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

তবে ইউপি চেয়ারম্যান দবিবুর রহমান তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমি কোনো বিচার-শালিস করিনি। এমনকি সেখানে উপস্থিতও ছিলাম না। তাই বিষয়টি সম্পর্কে আমার তেমন কিছুই জানা নেই।

গত ১ অক্টোবর রাতে উপজেলার খামারকান্দি ইউপিতে এক গৃহবধূকে বাড়িতে ঢুকে ধর্ষণ করার অভিযোগ উঠেছে প্রতিবেশী আজিজমুদ্দিনের ছেলে মো. হেলাল উদ্দীনের বিরুদ্ধে। পরদিন ঘটনাটি নিয়ে গ্রাম্য মাতবর সোলায়মান আলীর বাড়িতে সালিশি বৈঠক বসানো হয়।

গ্রাম্য মাতবর সেলিম রেজা, ফারুক হোসেন, আজিজ ও টুনু অভিযুক্ত ব্যক্তিকে বেশ কয়েকটি জুতাপেটা করে সালিশের সমাপ্তি টানেন। কিন্তু এই বিচার মানতে অস্বীকার করেন ধর্ষণের শিকার ওই গৃহবধূর স্বামী। পরবর্তী সময়ে গ্রাম্য মাতবররা আবারো ঘরোয়াভাবে বসেন এবং অভিযুক্তের কাছ থেকে ৮০ হাজার টাকা নিয়ে ভুক্তভোগীর পরিবারকে দিয়ে ঘটনাটি ধামাচাপা দিয়েছেন বলে অভিযোগ তুলেছেন এলাকাবাসী।

বগুড়ার শিশু ও নারী নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের এপিপি অ্যাডভোকেট রেজাউল করিম মজনু জানান, জনপ্রতিনিধি ও গ্রাম্য মাতবররা ধর্ষণের বিচার করতে পারেন না। এমনকি এ ধরনের অপরাধের গ্রাম্য সালিশ ও ঘটনাটি ধামাচাপা দেয়া আইন অনুযায়ী দণ্ডনীয় অপরাধ। তাই ওইসব ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানান এই আইনজীবী।

বগুড়ার শেরপুর থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) এসএম আবুল কালাম আজাদ জানান, ওই দুই ঘটনার মধ্যে একটি ঘটনার কথা শুনেছি। তারা থানায় অভিযোগ করতে আসার কথা। অভিযোগ পেলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে। এছাড়া অন্য ঘটনাটি সম্পর্কে জানা নেই।

টাকার বিনিময়ে ধর্ষণের ঘটনা ধামাচাপা!

আপডেট সময় : ১০:৩৩:০৪ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৯ অক্টোবর ২০২০

বগুড়ার শেরপুরে গ্রাম্য সালিশের নামে দুটি ধর্ষণের ঘটনা টাকার বিনিময়ে ধামাচাপা দেয়ার অভিযোগ উঠেছে এলাকার মাতবরদের বিরুদ্ধে। পাশাপাশি অভিযুক্তদের জরিমানাও আদায় করেছেন তারা।

জানা গেছে, মাদরাসাছাত্রীকে ধর্ষণ করায় অভিযুক্ত ব্যক্তির কাছ থেকে ৯০ হাজার টাকা এবং গৃহবধূকে ধর্ষণের অভিযোগে অভিযুক্ত ব্যক্তির কাছ থেকে ৮০ হাজার টাকা জরিমানাসহ জুতাপেটা করে বিষয়টি মীমাংসা করেন গ্রাম্য মাতবররা।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর অপসারণের দাবিতে লংমার্চের ঘোষণা

শেরপুর উপজেলার গাড়িদহ ইউপি ও খামারকান্দি ইউপিতে সম্প্রতি পৃথক এসব ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে।

জানা যায়, গত ৪ অক্টোবর রাতে গাড়িদহ ইউপির সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী রাতে খেয়ে রুমে ঘুমিয়ে পড়েন। কিন্তু মধ্যরাতে পাশের রামনগর গ্রামের আব্দুস সালামের ছেলে ছাব্বির হাসান ঘরে ঢুকে তাকে ধর্ষণ করে। এ সময় ছাত্রীর চিৎকারে আশেপাশের লোকজন এসে হাতেনাতে ছাব্বিরকে আটক করেন।

এরপর গাড়িদহ ইউপি চেয়ারম্যান দবিবুর রহমানের বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয় তাকে এবং সেখানেই আটকে রাখা হয়। পরদিন চেয়ারম্যানের বাড়িতে সালিশে বসেন গ্রাম্য মাতবররা। সেখানে ৯০ হাজার টাকা জরিমানা দিয়ে সালিশের মাধ্যমে ঘটনাটি আপস করে ছাব্বিরকে ছেড়ে নিয়ে যায় তার পরিবার।

তবে পরবর্তী সময়ে ধর্ষণের শিকার ছাত্রীর পরিবারকে আইনের আশ্রয় নিতে বাধা ও ভয়ভীতি দেখানোর অভিযোগ রয়েছে গ্রাম্য মাতবর আব্দুস সালামের বিরুদ্ধে। কিন্তু তার বিরুদ্ধে আনীত সব অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে দাবি করেন তিনি।

শালিসি বৈঠকে উপস্থিত থাকা গ্রাম্য মাতবর আব্দুল মোমিন বলেন, চেয়ারম্যানসহ অন্যান্য গ্রাম্য মাতবররা বিচার করেছেন। অভিযুক্ত ব্যক্তির কাছ থেকে ৬০ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করে ভুক্তভোগী মেয়ের বাবাকে দেয়া হয়েছে। কিন্তু তিনি এসবের মধ্যে নেই বলে দাবি করেন। এছাড়া বাকি ৩০ হাজার টাকা বিভিন্ন খাতে ব্যয় করা হয়েছে বলে জানা গেছে।

এদিকে, ঘটনাটি সম্পর্কে জানতে চাইলে ভুক্তভোগী ওই ছাত্রীর বাবা সত্যতা স্বীকার করলেও কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

তবে ইউপি চেয়ারম্যান দবিবুর রহমান তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমি কোনো বিচার-শালিস করিনি। এমনকি সেখানে উপস্থিতও ছিলাম না। তাই বিষয়টি সম্পর্কে আমার তেমন কিছুই জানা নেই।

গত ১ অক্টোবর রাতে উপজেলার খামারকান্দি ইউপিতে এক গৃহবধূকে বাড়িতে ঢুকে ধর্ষণ করার অভিযোগ উঠেছে প্রতিবেশী আজিজমুদ্দিনের ছেলে মো. হেলাল উদ্দীনের বিরুদ্ধে। পরদিন ঘটনাটি নিয়ে গ্রাম্য মাতবর সোলায়মান আলীর বাড়িতে সালিশি বৈঠক বসানো হয়।

গ্রাম্য মাতবর সেলিম রেজা, ফারুক হোসেন, আজিজ ও টুনু অভিযুক্ত ব্যক্তিকে বেশ কয়েকটি জুতাপেটা করে সালিশের সমাপ্তি টানেন। কিন্তু এই বিচার মানতে অস্বীকার করেন ধর্ষণের শিকার ওই গৃহবধূর স্বামী। পরবর্তী সময়ে গ্রাম্য মাতবররা আবারো ঘরোয়াভাবে বসেন এবং অভিযুক্তের কাছ থেকে ৮০ হাজার টাকা নিয়ে ভুক্তভোগীর পরিবারকে দিয়ে ঘটনাটি ধামাচাপা দিয়েছেন বলে অভিযোগ তুলেছেন এলাকাবাসী।

বগুড়ার শিশু ও নারী নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের এপিপি অ্যাডভোকেট রেজাউল করিম মজনু জানান, জনপ্রতিনিধি ও গ্রাম্য মাতবররা ধর্ষণের বিচার করতে পারেন না। এমনকি এ ধরনের অপরাধের গ্রাম্য সালিশ ও ঘটনাটি ধামাচাপা দেয়া আইন অনুযায়ী দণ্ডনীয় অপরাধ। তাই ওইসব ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানান এই আইনজীবী।

বগুড়ার শেরপুর থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) এসএম আবুল কালাম আজাদ জানান, ওই দুই ঘটনার মধ্যে একটি ঘটনার কথা শুনেছি। তারা থানায় অভিযোগ করতে আসার কথা। অভিযোগ পেলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে। এছাড়া অন্য ঘটনাটি সম্পর্কে জানা নেই।