ডেসটিনি-যুবকের পর এসপিসি, হাতিয়েছে ৬০০ কোটি টাকা
ডেসটিনি ও যুবকের পর এবার লাখ লাখ গ্রাহক থেকে অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে ‘এসপিসি ওয়ার্ল্ড এক্সপ্রেস’ নামের আরেক see বহুস্তরভিত্তিক বিপণন ব্যবসা (এমএলএম) প্রতিষ্ঠান। ই-কর্মাসের নামে অবৈধভাবে এমএলএম পরিচালনা করে মাঠ পর্যায় থেকে ইতিমধ্যে প্রায় ৬০০ কোটি টাকা ঝুলিতে তুলেছে প্রতিষ্ঠানটি। গ্রাহক থেকে সংগ্রহ করা টাকায় ‘বিটকয়েন’ কিনে বিদেশে পাচার করছেন বলেও অভিযোগ প্রতিষ্ঠানটির একাধিক কর্মীর।
সম্প্রতি সাংসদ ও বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা তাদের সঙ্গে শুভেচ্ছা দূতের চুক্তি বাতিলের ঘোষণার পর কার্যক্রম গুটিয়ে যাচ্ছে এসপিসি ওয়ার্ল্ড এক্সপ্রেসের। ইতিমধ্যে তাদের বহু এজেন্ট কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছে। কোম্পানির এমডি ও সিইও আল আমিন প্রধানের দেখা মিলছে না।
জানা গেছে, গত বছরের জানুয়ারিতে রাজধানীর কলাবাগান এলাকা থেকে ই-কমার্সের নামে যাত্রা শুরু করে এমএলএম কোম্পানি এসপিসি ওয়ার্ল্ড এক্সপ্রেস। তাদের বর্তমান অফিস বীর উত্তম সি, আর, দত্ত রোডের ১০৭ এফ হক টাওয়ারের ষষ্ঠ তলায়। প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) হিসেবে রয়েছে আল আমিন প্রধান। তিনি মূলত ডেসটিনি ২০০০ এর একজন উচ্চ পর্যায়ের টিম লিডার ও প্রশিক্ষক ছিলেন। সেখানে তার যেসব সহযোগী ছিলেন তাদের নিয়েই ভিন্ন কৌশলে মাঠে নামেন আল আমিন।
জানুয়ারি থেকে নভেম্বর মাত্র ১১ মাসে তার ঝুলিতে জমা হয় ২৬৮ কোটি টাকা। এমএলএম ব্যবসা ও প্রতারণার দায়ে গেল বছরের ৩ ফেব্রুয়ারি আল আমিনসহ প্রতিষ্ঠানটির ছয়জন গোয়েন্দা পুলিশের হাতে গ্রেফতার হন। ওই দিন ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ডিবির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার জানিয়েছিলেন, ১১ মাসে ২২ লাখ ২৫ হাজার ব্যক্তিকে যুক্ত করতে সক্ষম হয়। এর মধ্যে তারা হাতিয়ে নিয়েছে ২৬৮ কোটি টাকা।
ওই ঘটনায় মামলা হয় এবং আল আমিনসহ ছয়জনকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়। কিন্তু দুই মাসের ব্যবধানে জামিনে বের হয়ে আবারও এসপিসির কার্যক্রম শুরু করেন আল আমিন প্রধান। এর মধ্যে জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজার সঙ্গে শুভেচ্ছা দূতের চুক্তি করেন। এতেই আবার কপাল খুলে যায় এসপিসির। ‘এসপিসির সঙ্গে মাশরাফি রয়েছেন’ এমন প্রচারণায় যুবকদের আকৃষ্ট করতে থাকেন। ইতিমধ্যে তাদের অ্যাকাউন্ট সংখ্যা ২২ লাখ থেকে বেড়ে ৫০ লাখ ছাড়িয়েছে।
এসপিসির গ্রাহক ধরার কৌশল:
এসপিসি গ্রাহকদের তিন ধরনের প্রলোভন দেখায়। বিজ্ঞাপন দেখে আয় করা, ই-কমার্স স্টোর থেকে পণ্য ক্রয়/বিক্রয় করে আয় ও রেফার করার মাধ্যমে আয়। বাস্তবে তাদের কোনো পণ্যের হদিস নেই। মূলত রেফারেন্সের মাধ্যমে নতুন গ্রাহককে ১২০০ টাকা করে ফি দিয়ে জয়েন করানোই মূল ব্যবসা। একজনকে ১২০০ টাকায় জয়েন করালেই সেই টাকা থেকে যিনি জয়েন করান তিনি ৪০০ টাকা রেফারেন্স বোনাস পান। এছাড়া যিনি রেফারেন্স দিয়ে অন্যদের আইডি খোলাবেন তাকে জেনারেশন বোনাস নামে এমএলএম বোনাস দেয়। যেখানে প্রথম জেনারেশনে জনপ্রতি ১০০ টাকা, দ্বিতীয় জেনারেশনে জনপ্রতি ৫০ টাকা এবং তৃতীয় জেনারেশনে জনপ্রতি ১৫-২০ টাকা। তাদের জেনারেশন পদ্ধতি হচ্ছে, একজনের নিচে তিনজন জয়েন করানো এবং সেই তিনজনের নিচে আবার তিনজন করে (মোট ৯ জন) জয়েন করালে প্রথম জেনারেশন। এভাবে পরবর্তী ধাপে দ্বিতীয় ও তার পরবর্তী ধাপে তৃতীয় জেনারেশন হয়।
এমএলএম পদ্ধতিতে কেউ এসপিসিতে ১২০০ টাকা দিয়ে আইডি খোলার পর তার অধীনে আরও তিনজনের আইডি খোলাতে পারলে তিনি হবেন ক্লাব মেম্বার। ওই তিনজনের অধীনে আরও তিনজন করে জয়েন করাতে পারলে হবেন রয়েল মেম্বার। রয়েল মেম্বাররা প্রতিদিন কোম্পানির লভ্যাংশের ২০ শতাংশ পান।
এর পরে রয়েছে ইনসেনটিভ বোনাস নামে উচ্চ পর্যায়ের এমএলএম নেটওয়ার্ক। এখানে কোনো আইডির অধীনে তিন লাইনে ১০০ করে মোট ৩০০ আইডি খোলাতে পারলে তিনি হন ১ স্টার রয়েল। ১ স্টার রয়েল হলে কোম্পানির লাভের সাড়ে ১৭ শতাংশ এবং সঙ্গে সিকিম বিমান ট্যুরের প্রলোভন। তিন লাইনে ৬০০ করে মোট ১৮০০ আইডি খোলাতে পারলে ২ স্টার রয়েল। তাদের জন্য ১৫ শতাংশ শেয়ার ও নেপাল ট্যুর। তিন লাইনে ১০০০ করে মোট ৩০০০ হাজার আইডি খোলাতে পারলে ৩ স্টার রয়েল। এবার সাড়ে ১২ শতাংশ শেয়ার ও থাইল্যান্ড ট্যুরের প্রলোভন। একইভাবে সর্বোচ্চ প্রতি লাইনে ১৫০০০ করে মোট ৪৫০০০ আইডি খোলাতে পারলে সাত স্টার রয়েছে। সাত স্টার হলে কোম্পানির আড়াই শতাংশ শেয়ার ও নগদ ২৫ লাখ টাকার প্রলোভন।
একজনের অধীনে এভাবে বিপুল পরিমাণ আইডি খোলানোর নিয়মে লভ্যাংশের কথা বলা হয়েছে বাস্তবে তার কোনো অস্তিত্ব নেই। এসপিসির বাস্তবে কোনো ব্যবসা নেই। মূলত প্রতিদিন ১২০০ টাকা করে দিয়ে যে হাজার হাজার মানুষকে আইডি খোলানো হয় সেই টাকা ভাগবাটোয়ারা হয়।
এসপিসির অর্থ সংগ্রহ:
এসপিসি গ্রাহকদের নানা রকম আয় দেখায়। তবে বাস্তবে তাদের কোনো বৈধ আয়ের সন্ধান নেই। গ্রাহকদের আয়ের উৎস দেখাতে এসপিসি নামে বেশ কিছু প্রতিষ্ঠানে কোম্পানি রেজিস্ট্রেশন করা হয়েছে। সরকারি ফিসহ মাত্র ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা দিয়ে এসব লাইসেন্স করতে ৩ থেকে ৫ দিন সময় লাগে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে; এসপিসি রাইড লি., এসপিসি কুরিয়ার অ্যান্ড ট্রান্সপোর্ট লিমিটেড, এসপিসি পোপার্টিজ অ্যান্ড ডেভেলপার্স লি., এসপিসি কসমেটিক্স অ্যান্ড কেমিক্যালস লি., এসপিসি ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেলস লি., এসপিসি ফুড অ্যান্ড বেভারেজ লি. ও এসপিসি আইডি সল্যুশন লিমিটেড। তবে বাস্তবে এসব প্রতিষ্ঠানের কোনো অস্তিত্ব নেই।
তাদের সম্পূর্ণ অর্থই আসে ১২০০ টাকা করে দিয়ে নতুন আইডি খোলা থেকে। ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত তাদের অ্যাকাউন্টের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫০ লাখ। যা প্রতিদিন গড়ে প্রায় ১০ হাজার। গড়ে তাদের দৈনিক সংগ্রহ প্রায় ১ কোটি ২০ লাখ টাকা। ১৮ মাসে তারা প্রায় ৬০০ কোটি টাকা সংগ্রহ করেছে এই অ্যাকাউন্ট খোলা থেকে। এখান থেকেই তারা জেনারেশন লিডারদের সঙ্গে ভাগবাটোয়ারা করেন, যা সাধারণ বা নতুন সদস্যদের বোঝার কোনো উপায় নেই।
মাশরাফির সঙ্গেও প্রতারণা:
জানা গেছে, আল আমিন প্রধান মাশরাফিকে শুভেচ্ছা দূত করতে গিয়ে প্রতারণার আশ্রয় নেন। তারা মাশরাফিকে জানান, তাদের ই-কর্মাস ভিত্তিক ইলেক্ট্রনিক্স ব্যবসা। দেশজুড়ে তারা ই-কমার্সের উদ্যোক্তা তৈরি করছে। কিন্তু তাদের জয়েনিং পদ্ধতি ও এমএলএম এর জেনারেশন তৈরির যে পদ্ধতি তা গোপন করা হয়। এছাড়া নড়াইলে ১০০টি উন্নতমাসের সিসি ক্যামেরা সরবরাহেরও প্রতিশ্রুতি ছিল এসপিসির। কিন্তু গত সপ্তাহে এসপিসির এমএলএম ব্যবসা নিয়ে সামাজিকমাধ্যমে ব্যাপক আলোচনা হওয়ার বিষয় নজরে পড়ে মাশরাফির। ফলে গত ২ জুন সামাজিকমাধ্যম ফেসবুকে এক পোস্টে তাদের সঙ্গে চুক্তি বাতিলের ঘোষণা দেন মাশরাফি।
প্রতারণার বিষয়টি সরাসরি না বললেও মাশরাফি তার স্ট্যাটাসে বলেন, ‘আমি জানতে পেরেছি, তাদের প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে যে ধারণা আমাকে দেওয়া হয়েছিল, তাদের ব্যবসার ধরন তা নয়।’ এজন্য মাশরাফি তাদের সঙ্গে চুক্তি বাতিলের ঘোষণা দিয়ে বলেন, ‘দুই বছরের চুক্তি থাকলেও দুই মাসের মধ্যেই তাদের সম্পর্কে জানার পরই আমি তাদের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। ইতিমধ্যেই আমি তাদেরকে উকিল নোটিশ পাঠিয়েছি, আনুষ্ঠানিকভাবে চুক্তি শেষ করার আইনি প্রক্রিয়া এগিয়ে নিচ্ছি। আমি সবাইকে অনুরোধ করব, আমার নাম বা ছবি দেখে বিভ্রান্ত হয়ে এই প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে না জড়াতে।’
এসপিসির কর ফাঁকি:
এসপিসির পলিসি অনুযায়ী প্রতি অ্যাকাউন্টে দৈনিক ৫টি করে বিজ্ঞাপন দেখানো হয় এবং এর জন্য ১০ টাকা করে দেওয়া হয়। বিজ্ঞাপনের রেটের এই হারকে ডিজিটাল ভাষায় বলা হয় ‘কস্ট পার মাইলেজ’ (সিপিএম)। মূলত ১০০০ বিজ্ঞাপন দেখা হলে এক মাইলেজ বলা হয়। বাংলাদেশের প্রথম সারির সংবাদমাধ্যম ও বিজ্ঞাপন দ্বারা ৫০ থেকে সর্বোচ্চ ৮০ বা ১০০ টাকা সিপিএম বিজ্ঞাপন লেনদেন হয়। কিন্তু এসপিসির রেট ২০০০ টাকা। যা একেবারেই অবাস্তব। দেশে কোনো প্রতিষ্ঠানের পক্ষে এই মূল্যে কোথাও বিজ্ঞাপন দেওয়া সম্ভব না। এসপিসি এই বিজ্ঞাপনের নামে প্রতারণার আশ্রয় নিয়েছে। তারা মূলত তাদের নামে তৈরি করা কয়েকটি পণ্যের ছবি দেখায়। মাঝে সিইও আল আমিন প্রধানের বক্তব্য বিজ্ঞাপন প্রচার করে। বাইরের কোনো প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞান নাই।
এসপিসির হিসাব অনুযায়ী তারা ৫০ লাখ অ্যাকাউন্টে প্রতিদিন ১০ টাকা করে দিলে বিজ্ঞাপন বাবদ তারা দিনে ব্যয় করে আড়াই কোটি টাকা বা মাসে ৭৫ কোটি টাকা। সরকারি নিয়ম অনুযায়ী, বিজ্ঞাপনের ওপর ১৫ শতাংশ কর দিতে হয়। এই হিসাবে এসপিসির মাসিক করের পরিমাণ দাঁড়ায় ২২ কোটি ৫০ লাখ টাকা। কিন্তু এসপিসির কোনো ট্যাক্স ফাইল নাই। তারা সরকারকে এ পর্যন্ত ট্যাক্স দিয়েছে এমন কোনো প্রমাণ দেখাতে পারেনি।
বিটকয়েনে ২০০ কোটি টাকা পাচার:
এসপিসির যাত্রা শুরুর সময় থেকে জড়িত দ্বিতীয় সারির একাধিক লিডারের সঙ্গে কথা বললে তারা জানান, গত নভেম্বর মাসে আল আমিন প্রধান গ্রেফতার হয়ে জামিনে মুক্তির পর দেশে টাকা না রাখার সিদ্ধান্ত নেন। তার সঙ্গে অন্তত চারজন টপ লিডারও (প্রতিষ্ঠাকালীন লিডার) একমত হন। তখন থেকেই তারা টাকা সরিয়ে ফেলা শুরু করেন। গুলশানে কয়েকজন ডলার ব্যবসায়ী রয়েছেন যাদের মাধ্যমে বিটকয়েন কেনেন আল আমিন প্রধান। ইতিমধ্যে তারা প্রায় ২০০ কোটি টাকার বিটকয়েন কিনেছেন বলে ধারণা অভিযোগকারী লিডারদের। এসব লিডারদের অধীনে বহু আইডি খোলা থাকায় তারা মুখ খুলতে পারছেন না। তবে তাদের অভিযোগ, ‘আল আমিন প্রধান বর্তমান দেশে বিট কয়েনের সবচেয়ে বড় গ্রাহক। তিনি বিট কয়েনের বাংলাদেশের মাফিয়া হয়ে উঠেছেন।’
এসপিসি ছাড়ছে লিডাররা:
জানা গেছে, মাশরাফি মিন মর্তুজার সঙ্গে চুক্তি বাতিলের ঘোষণা দেওয়ার পর থেকেই গা ঢাকা দিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির প্রধান আল আমিন প্রধান। ২ তারিখের পর থেকে তিনি আর অফিস করেননি। প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের জানিয়েছেন, তিনি অসুস্থ। এমন অবস্থায় অন্তত বড় মাপের ১০ জন লিডার এসপিসি থেকে দূরত্ব বজায় রেখেছে। এর মধ্যে রয়েছে, সিরাজগঞ্জের হাফিজ। তার অধীনে এসপিসির সংগ্রহ প্রায় পাঁচ কোটি টাকা। ঢাকার মুক্তার আরেফিন, মিলন সরকার, আনোয়ার হোসাইন, বাবুল ও রকি। এসপিসির সঙ্গে ঘনিষ্ঠ এমন দুইজন কর্মী এ তথ্য জানিয়েছেন।
তবে তার দাবি, এ লিডাররা কেউ এখন মুখ খুলবে না। পরে মুক্তার আরেফিন, আনোয়ার হোসেন ও মিজানকে ফোন করলেও তারা কেউ ফোন ধরেননি।
দেখা মিলছে না আল আমিন প্রধানের:
গেল ২ জুন মাশরাফি বিন মর্তুজা সামাজিকমাধ্যমে পোস্ট করার পর থেকে গা ঢাকা দিয়েছেন ব্যবস্থাপনা পরিচালক আল আমিন প্রধানসহ একাধিক টপ লিডার। তিনদিন চেষ্টা করার পর এই প্রতিবেদকের সঙ্গে আল আমিন প্রধান ১ মিনিট কথা বলেন। পরবর্তীতে সময় দিলেও আর তার নাগাল পাওয়া যায়নি। এর মধ্যে এসপিসির অফিসে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও আল আমিন প্রধানকে পাওয়া যায়নি। ২ জুনের পর তিনি আর অফিস করেননি বলে জানিয়েছেন কর্মীরা। তবে এসপিসির মার্কেটিং ডিরেক্টর অর্জুন চ্যাটার্জি জানিয়েছেন, আল আমিন প্রধান হঠাৎ করেই একটু অসুস্থ। এজন্য তিনি সময় দিতে পারছন না। তিনি চিকিৎসা নিচ্ছেন।
এসপিসির বিরুদ্ধে তদন্ত চলমান:
গত বছরের ৩ জানুয়ারি ডিবি পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়েছিলেন আল আমিন প্রধানসহ ছয় জন। গ্রেফতার হওয়া অন্যরা ছিলেন- নির্বাহী কর্মকর্তা মো. জসীম, ম্যানেজার (হিসাব) মানিক মিয়া, ম্যানেজার (প্রডাক্টস) তানভীর আহম্মেদ, সহকারী ম্যানেজার পাভেল সরকার ও অফিস সহকারী নাদিম মো. ইয়াসির উল্লাহ। তাঁদের কাছ থেকে একটি হ্যারিয়ার গাড়ি, দুটি পিকআপ ভ্যান, ছয়টি ল্যাপটপ, দুটি রাউটার, দুটি পাসপোর্ট ও বিভিন্ন কাগজপত্র জব্দ করা হয়েছিল। পরে তাদের বিরুদ্ধে দিয়ে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়। ওই ঘটনায় দুই মাস কারাগারে ছিলেন আল আমিন প্রধান।
সেই মামলা এখনও চলমান রয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির মার্কেটিং ডিরেক্টর অর্জুন চ্যাটার্জি। তিনি জানান, মামলায় এখনও তদন্ত শেষ হয়। তদন্ত কর্মকর্তা এখনও চূড়ান্ত প্রতিবেদনও দেননি।
এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তারকে সংবাদমাধ্যমের পক্ষ থেকে বিষয়টি জানতে চাইলে তিনি বিষ্ময় প্রকাশ করে বলেন, সাড়ে ২২ লাখ থেকে এই কয়দিনে তারা ৫০ লাখ অ্যাকাউন্ট করিয়েছে! এটা নিয়ে আমরা কালই বসবো এবং ব্যবস্থা নেব।
এসপিসির বক্তব্য:
এসব বিষয় নিয়ে এসপিসির ব্যবস্থাপনার পরিচালক আল আমিন প্রধানের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তার ফোনটি অপরিচিত নাম্বার থেকে কল আসা বন্ধ পাওয়া যায়। পরবর্তীতে পরিচয় দিয়ে মেসেজ দিলে কথা হয়। তার কাছে এসব বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি সরাসরি কথা বলতে চেয়ে পরবর্তীতে সময় দেন। কিন্তু পরবর্তীতে তার ফোনটি একই রকম বন্ধ পাওয়া যায়। মেসেজ দিলেও উত্তর দেননি।
পরে এসপিসির মার্কেটিং ডিরেক্টর অর্জুন চ্যাটার্জির সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি সব বিষয়ে উত্তর দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন। ৫০ লাখ আইডিতে বিজ্ঞাপন দেখিয়ে প্রতিদিন ১০ টাকা করে মোট ৫ কোটি টাকা কীভাবে, কোথা থেকে দেওয়া হয় জানতে চাইলে তিনি সঠিক উত্তর না দিয়ে বলেন, ‘এটা কম বেশি হয়। বহু আইডি অনেক সময় ইন্যাকটিভ থাকে।’ বিজ্ঞাপনের খরচ থেকে সরকার নির্ধারিত ১৫ শতাংশ ভ্যাট-ট্যাক্স দিলে মাসে প্রায় সাড়ে ২২ কোটি টাকা দাঁড়ায়। সরকারকে এই অর্থ দেওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এই বিষয়টি শুধুমাত্র ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলতে পারবেন।’ তার সঙ্গে সময় নিয়ে মিটিং করিয়ে দেওয়ারও প্রতিশ্রুতি দেন তিনি।
বিটকয়েন কেনার বিষয়ে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, ‘আমাদের বিরুদ্ধে কেউ কেউ এই প্রপাগাণ্ডা করেন। তবে আমি নিশ্চিত করতে পারি, এটা সত্য নয়।’ নতুন আইডি খোলা বন্ধ হয়ে গেছে গ্রাহকদের প্রতিদিন বিজ্ঞাপন দেখিয়ে এই বিপুল অংকের অর্থ কীভাবে দেবেন জানতে চাইলে অর্জুন চ্যাটার্জি বলেন, ‘আমাদের পণ্য বিক্রির টাকা থেকে এই অর্থ দেওয়া হবে।’ কিন্তু দৈনিক বিজ্ঞাপনে ৫ কোটি টাকা খরচ করতে গেলে কয়েক’শ কোটি টাকা বিক্রি হওয়া দরকার এবং বাংলাদেশের কোনো গ্রুপ অব কোম্পানির পক্ষেও এটা সম্ভব হয় না। এমন প্রশ্ন করলে তিনি কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি। মাশরাফির চলে যাওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘মাশরাফিকে বিভিন্ন দিক থেকে বিভিন্ন মানুষ নক করেছে, মেসেজ দিয়েছে; কেন আপনি এমন একটা কোম্পানির সঙ্গে জড়ালেন। এজন্য মাশরাফি চলে গিয়েছেন।’ তবে তাঁকে আবার আনার চেষ্টা চলছে। এবার আসলে ভালো করেই আসবেন বলে দাবি করেন অর্জুন চ্যাটার্জি।