ব্রিটেনের অভ্যন্তরীণ গোয়েন্দা সংস্থা এমআইফাইভের মহাপরিচালক কেন ম্যাককালাম এ বিষয়ে বলেছেন, আফগানিস্তানে তালেবানের ক্ষমতা দখল উগ্রপন্থীদের আনন্দিত এবং সাহসী করে তুলবে। আমি দুঃখের সঙ্গে বলছি যে, যুক্তরাজ্যে সন্ত্রাসী হামলার ঝুঁকি একটি বাস্তব এবং স্থায়ী ব্যাপার।
বিবিসিকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেন।
ব্রিটিশ গোয়েন্দা প্রধান কেন ম্যাককালাম বলেন, তালেবানের হাতে আফগানিস্তানের পতন হয়তো যুক্তরাজ্যের তথাকথিত ‘সন্ত্রাসীদের’ আরো উদ্দীপ্ত করে তুলে থাকতে পারে। সন্ত্রাসের হুমকি যে রাতারাতি বদলে যাবে তা নয়, কিন্তু উগ্রপন্থীদের মনোবল বেড়ে যাবার মত কিছু ঘটতে পারে। এমন উদ্বেগও রয়েছে যে সন্ত্রাসীরা হয়তো পুনরায় সংগঠিত হয়ে ‘৯/১১ বা তার পরবর্তীকালের মতো’ বড় আকারের কোনো আক্রমণের পরিকল্পনা করতে পারে।
তিনি দাবি করেন, গত চার বছরে যুক্তরাজ্যে মোট ৩১টি ‘শেষ-পর্যায়ে-থাকা আক্রমণের পরিকল্পনা’ ব্যর্থ করে দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে ৬টি আক্রমণের পরিকল্পনা করা হয়েছিল মহামারি চলার সময়।
এম আই সিক্সের মহাপরিচালক জানান, এসব ছিল প্রধানত ইসলামী উগ্রপন্থী আক্রমণের পরিকল্পনা – তবে উগ্র দক্ষিণপন্থী সন্ত্রাসীদের আক্রমণের পরিকল্পনার সংখ্যাও বাড়ছে।
বিবিসির বিশ্লেষক গর্ডন কোরেরা বলছেন, সম্প্রতি আফগানিস্তান থেকে পশ্চিমা সৈন্যদের প্রত্যাহারের ফলে এমন উদ্বেগ দেখা দিয়েছে যে জিহাদি হুমকি বেড়ে যেতে পারে এবং দেশটি হয়তো এধরনের গোষ্ঠীগুলোর নিরাপদ আশ্রয়ে পরিণত হতে পারে।
আফগানিস্তানে তালেবানের বিজয় যুক্তরাজ্যের তথাকথিত ‘সন্ত্রাসীদের’ আরো উদ্দীপ্ত করে তুলতে পারে বলে মনে করেন এমআইফাইভের প্রধান কেন ম্যাককালাম।
যুক্তরাষ্ট্রে ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বরের হামলার ২০ তম বার্ষিকীর আগে বিবিসি রেডিওর এক বিশেষ অনুষ্ঠানে মি. ম্যাককালাম বলেন, এমআইফাইভ যেসব হুমকির মোকাবিলা করছে তার মধ্যে ছোট আকারের এবং ‘অনুপ্রাণিত’সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। এতে কোন সন্দেহ নেই যে আফগানিস্তানের ঘটনাবলী সেইসব উগ্রপন্থীদের অনেককে আনন্দিত এবং সাহসী করে তুলবে, তাই আমার প্রতিষ্ঠান এখন ওই ধরনের ঝুঁকিগুলোর দিকেই মনোনিবেশ করছে।
তিনি বলেন, সন্ত্রাসের পরিকল্পনা, ট্রেনিং ক্যাম্প বা অবকাঠামো – এসব রাতারাতি পাল্টে যায় না, ৯/১১র পর আল-কায়েদা যে সব সুযোগ আফগানিস্তানে পেয়েছিল। এতে সময় লাগে, তাই ২০ বছর ধরে আফগানিস্তান খেবে সন্ত্রাসের ঝুঁকি কমাতে যে প্রয়াস চলেছে, তাকে মোটামুটি সফল বলা যায়। পরিকল্পিত বা সংগঠিত সন্ত্রাসী কাজেও সময় লাগে, তবে যা রাতারাতি হতে পারে তা হলো এদেশে বা অন্যত্র উগ্রপন্থীদের মানসিকভাবে চাঙ্গা হয়ে ওঠা” – বলেন মি. ম্যাককালাম। তার মতে, বড় আকারের সন্ত্রাসী আক্রমণের সংখ্যা কমে গেলেও ‘অনুপ্রাণিত সন্ত্রাসবাদের’ পরিমাণ বেড়েছে।
তিনি ব্যাখ্যা করেন যে, ইসলামিক স্টেট এমন একটা কিছু করেছে যা আল-কায়েদা করেনি। সেটা হলো, অনেক লোককে ছোট আকারের সন্ত্রাসী কাজ করতে অনুপ্রাণিত করা।
ব্রিটিশ গোয়েন্দা প্রধান বলেন, গত ৫ থেকে ১০ বছরে অনুপ্রাণিত সন্ত্রাসের ঘটনা একটা ধারায় পরিণত হয়েছে – যার ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। পাশাপাশি আল-কায়েদার মত নির্দেশিত পরিকল্পনা বেড়ে যাবার সম্ভাবনার দিকেও নজর রাখতে হবে।