আলহামদুলিল্লাহ আজ পবিত্র শাবান মাস আমাদের মাঝে উপস্থিত। এ পবিত্র মাসটি ইবাদতের মাস। অন্যান্য মাসের তুলনায় আমার পেয়ারা হাবিব (সা.) এ মাসে বেশি বেশি ইবাদাত করতেন। বিশেষ করে রাসুল (সা.) এ মাসে রোজা রেখে কাটাতেন। আবু দাউদ এর এক হাদিসে এসেছে- মা’আয়েশা (রা.) বলেন, নফল রোজার জন্য অন্যান্য মাসের তুলনায় শা’বান মাস ছিল অত্যন্ত প্রিয়। অতঃপর তিনি শা’বানের রোজাকে রমজানের সঙ্গে মিলিয়ে দেওয়াকে আরও বেশি পছন্দ করতেন। বায়হাকী শরীফের এক হাদীসের মধ্যে এসেছে হযরত আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত হুজুর (সা.) এরশাদ করেন, শা’বান আমার মাস, রজব আল্লাহ তায়ালার মাস, আর রমজান হচ্ছে আমার উম্মতের মাস। শা’বান মাস হচ্ছে গুনাহসমূহ নিশ্চিহ্নকারী এবং রমজান হচ্ছে পবিত্রতা প্রদানকারী। অন্য এক হাদীসের মধ্যে এসেছে, শা’বান মাস রজব এবং রমজানের মধ্যবর্তী মাস। মানুষ এর ফজিলত থেকে গাফেল অথচ এ মাসে বান্দার আমল আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের দরবারে বিশেষভাবে পৌঁছান হয়। অতএব আমি পছন্দ করি যে, রোজাদার অবস্থায় আমার আমল পৌঁছানো হোক। মূলত আজকের বিষয় হচ্ছে পনেরই শা’বান অর্থাৎ বাংলা ভাষা-ভাষী হিসেবে আমরা যে দিবসকে শবেবরাত বলে জানি। মূলত বরাত এর আভিধানিক অর্থ ‘মুক্তি লাভ’ শবে বরাতে গুনাহগার গুনাহ থেকে পরিত্রাণ ও মুক্তি লাভ করতে পারে বলেই এ রাত্রীকে শবেবরাত নামে আখ্যায়িত করা হয়েছে। যা চৌদ্দতম তারিখ দিবাগত রজনীতে দিন সমাপ্তির পর সন্ধ্যা হতে এ বরকতময় রজনী শুরু হয়। তবে এ রজনী নিয়ে বিতর্কেরও শেষ নেই। অনেকেই দাবি করে থাকেন, কোরআন-হাদিসের মধ্যে কোথাও শবেবরাত সম্পর্কে কোনো কিছু লেখা নেই। কথা সত্য যে, কোরআন-হাদিসে কোথাও শবেবরাত সম্পর্কে কিছু লেখা নেই। লক্ষণীয় যে, শবেবরাত মূলত ফার্সি শব্দ। শবে অর্থ রাত, বরাত একাধিক শব্দে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। যেমন- মুক্তি, পরিত্রাণ, পবিত্র, নাজাত ইত্যাদি। এখন কথা হচ্ছে যে, শবে বরাত কোরআন-হাদিসে না থাকাটায় যুক্তিযুক্ত। কারণ ফার্সি কথা কেনইবা কোরআন-হাদিসে আসবে। আর এগুলো মূলত পারিভাষিক অর্থ, যেমন নামাজ, রোজা ইত্যাদি। এ কথাও তো কোরআন-হাদিসে কোথাও নেই। এখন যদি পারিভাষিক অর্থকে মুস্তাহাব, সুন্নাত, ওয়াজিব, ফরজ মনে করি তবে অবশ্যই এর জন্য দলিল প্রমাণ দরকার। যাইহোক হাদীসের ভাষায় শবেবরাতকে লাইলাতু নিসফে মিং শাবান বলা হয়ে থাকে। এর অর্থ আবার এটা মনে না করা যে এই নামে ডাকা যাবে না। কিংবা নাজায়েজ বা হারাম। বরং কোরআন-হাদীসের ভাষায় ডাকা উত্তম। এ রাত্রীর ব্যাপারে দলিল হিসেবে প্রায় ১৫ জন সাহাবির থেকে শবেবরাত পালনের দলিল পাওয়া যায়।
উল্লেখযোগ্য, হযরত আবু বক্বর (রা.), হযরত ওমর (রা.), হযরত আলী (রা.) ও হযরত আবু মুসা আশয়ারী (রা.)-এর মতো জলীল ক্বদর সাহাবিগণ এবং তাবেয়িগণের মধ্যে থেকেও পনেরশত হিজরি পর্যন্ত শবেবরাত পালনের দলিল পাওয়া যায়। তবে এই শবেবরাত নিয়ে আমাদের সমাজে দুটো দল পাওয়া যায়। এক দল পাওয়া যায় বাড়াবাড়ি, আরেক দল পাওয়া যায় ছাড়াছাড়ি। অনেকেই এই রজনীকে উৎসব মনে করে হালুয়া-রুটি, খিচুড়ি, ক্ষীর, পায়েস, পটকাবাজি, আলোকসজ্জ্বা ইত্যাদিতে মেতে উঠে। আবার অনেকে চাঁদাবাজি করে বাজার করে রান্না খাওয়ার আয়োজন করে মূল উদ্দেশ্য ইবাদত থেকে মাহরুম হয়ে থাকে। অথচ এটা ছিল ইবাদতের রাত। এর দ্বারা আমি ক্ষতিগ্রস্ত হলাম, আর ইবলিশ লাভবান হয়ে গেল। আর এ বরকতময় রজনীতে পারলৌকিক জীবনের লাভজনক ব্যবসার এক সুবর্ণ-সুযোগ রয়েছে। মেশকাত শরীফের এক হাদীসের মধ্যে এসেছে হজুর (সা.) মা আয়েশা (রা.)-কে সম্বোধন করে বলেন, তুমি কি জানো, এ রাত্রীতে অর্থাৎ বরাতের রাত্রীতে কি রয়েছে? হযরত আয়েশা (রা.) বলেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ (সা.) দয়া করে বলুন, এ রাত্রীতে কি রয়েছে? হুজুর (সা.) বলেন- আগামী বছর যত আদম সন্তান জন্ম নিবে এবং মৃত্যুবরণ করবে, তাঁদের নাম লিপিবদ্ধ করা হবে। এ রাত্রীতে বিশেষভাবে বান্দার আমলনামা আল্লাহর দরবারে পেশ করা হবে এবং তাঁদের রিজিক অবতীর্ণ করা হবে। হযরত আয়েশা (রা.) বলেন ইয়া রাসুলুল্লাহ সা.! যখন বছরের শুরুতেই আগামী বছরের ভাগ্য নির্ধারণ হয়ে যায়, তবে মনে হয় আল্লাহর বিশেষ রহমত ছাড়া কেউই জান্নাতে যেতে পারবে না। রাসুল (সা.) একই বাক্য তিনবার উচ্চারণ করে জবাব দিলেন হ্যাঁ। আমি বললাম, আপনি ও না? ইয়া রাসুলুল্লাহ (সা.) তখন হুজুর (সা.) নিজের পবিত্র মাথায় পবিত্র হস্ত ধারণ করে জবাবে তিনবার বললেন, হ্যাঁ আল্লাহ-তায়ালার খাস রহমত যদি আমাকে বেষ্টন করে না লয়, তবে আমি ও বেহেশতে যেতে পারব না। পরিশেষে রাসুল (সা.) এর হাদীস থেকে যে, কথা আমাদের পর্যন্ত এসে পৌঁছেছে, শবেবরাত আছে, শবে বরাতের আমলও আছে, চৌদ্দ তারিখ দিনগত রাতে ইবাদত আর পনের তারিখ দিনে রোজার কথা এসছে, আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে সহীহ হাদিস জেনে-বুঝে আমল করার তৌফিক দান করুন। ‘আমিন’