দীর্ঘ চার মাস রাঙ্গামাটির কাপ্তাই হ্রদে মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা শেষে আজ আহরণ শুরু হয়েছে। গতকাল দিবাগত রাত ১২টা থেকে হ্রদে জাল নিয়ে নেমেছেন দীর্ঘ চার মাস থাকা জেলেরা। কাপ্তাই হ্রদে মাছ ধরা শুরু হওয়ায় আবারো কর্মব্যস্ত হয়ে পড়েছেন খাতসংশ্লিষ্টরা। এরই মধ্যে সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলে, ব্যবসায়ী ও বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএফডিসি) কর্মকর্তারা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বৃহত্তম কৃত্রিম জলাধার রাঙ্গামাটির কাপ্তাই হ্রদে কার্পজাতীয় মাছের বংশবিস্তার ও প্রাকৃতিক প্রজনন নিশ্চিতকরণে প্রতি বছরের ১ মে থেকে ৩১ জুলাই পর্যন্ত তিন মাস সব ধরনের মাছ শিকার, বাজারজাত ও পরিবহনের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে জেলা প্রশাসন। এ বছরও একইভাবে নিষেধাজ্ঞার সময় তিন মাস দেয়া হলেও হ্রদে পর্যাপ্ত পানি না বাড়ায় তিন দফায় আরো এক মাস হ্রদে মাছ আহরণ বন্ধ থাকে। নিষেধাজ্ঞার সময়ে নিবন্ধিত জেলেরা প্রতি মাসে ভিজিএফ কার্ডের মাধ্যমে খাদ্যশস্য হিসেবে ২০ কেজি করে চাল সহায়তা পান। তবে এবার নিয়মতান্ত্রিক নিষেধাজ্ঞার তিন মাসে জেলেরা খাদ্যসহায়তা পেলেও বাড়তি এক মাসের খাদ্যসহায়তা পাননি।
এদিকে বিএফডিসি সূত্র জানায়, গত বছরও কাপ্তাই হ্রদে তিন মাস মাছ ধরা বন্ধকালীন নির্ধারিত সময়ে পানি না বাড়ায় ১০ দিন নিষেধাজ্ঞা বাড়ানো হয়। কিন্তু ১০ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষে পানিস্বল্পতার মধ্যেই মাছ আহরণ শুরু হয়ে যায়। এতে মৌসুমের শুরুর দিকে মাত্রাতিরিক্ত মাছ আহরিত হলেও শেষের দিকে হ্রদে তেমন মাছ পাওয়া যায়নি। ফলে ভাটা পড়েছে বিএফডিসির বার্ষিক মাছ আহরণ ও অবতরণের রেকর্ডে।
প্রতিষ্ঠানটির বার্ষিক প্রতিবেদন বলছে, ২০১৯-২০ অর্থবছরে ৮ হাজার ৫৪৯ টন মাছ অবতরণ করা হয়। সেখানে ২০২০-২১ অর্থবছরে অবতরণ হয়েছে ৬ হাজার ৭৯৪ টন। এ বছরও যদি গত মৌসুমের মতো মাত্রাতিরিক্ত মাছ আহরিত হয়, তাহলে মৌসুমের শেষের দিকে মাছ আহরণে ভাটা পড়বে।
বিএফডিসি রাঙ্গামাটি বিপণন কেন্দ্রের সহকারী বাজারজাত কর্মকর্তা মো. শোয়েব সালেহীন বণিক বার্তাকে জানান, দীর্ঘ চার মাস পর কাপ্তাই হ্রদে মাছ ধরা শুরু হচ্ছে। এ উপলক্ষে বিএফডিসি কর্তৃপক্ষ যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে।
তিনি আরো জানান, স্বাভাবিক সময়ের হিসাবে কাপ্তাই হ্রদের পানির পরিমাণ ১০৫ এমএসএল (মিনস সি লেভেল) হলে মাছ ধরা শুরু হয়। কিন্তু এ বছরও পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাতের অভাবে নির্ধারিত তিন মাস সময়ে হ্রদে পর্যাপ্ত পানি না বাড়ায় তিন দফায় আরো এক মাস সময় বাড়ানো হলেও হ্রদে এখনো আশানুরূপ পানি বাড়েনি। বর্তমানে হ্রদের পানির পরিমাণ ৯৮ দশমিক শূন্য ৪ এমএসএল, যা স্বাভাবিকের চেয়ে প্রায় ৭ এমএসএল কম। কিন্তু জেলে ও ব্যবসায়ীদের অর্থনৈতিক অবস্থা ও পারিপার্শ্বিক নানা দিক বিবেচনায় পানিস্বল্পতার মধ্যেই হ্রদে মাছ আহরণ শুরু করতে হয়েছে।