নিউজ ডেস্ক: শেখ হাসিনার পতন পর বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্ব গ্রহণ করেন অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এ দায়িত্ব গ্রহণের পর তার জীবনের গতিপথ পরিবর্তন হওয়ার আভাস দিয়েছেন।
মার্কিন পাবলিক ব্রডকাস্টিং সংস্থা এনপিআর সোমবার অধ্যাপক ইউনূসের একটি সাক্ষাৎকারে উঠে আসে নানা গল্প।
গণ-অভ্যুত্থান চলাকালীন সময় ড. ইউনূস গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিকে যোগদান করার প্রেক্ষিতে প্যারিসে অবস্থান করছিলেন। বাংলাদেশ থেকে প্রায় ৫,০০০ মাইল দূর থেকে এসব ঘটনা দেখছিলেন।
শেখ হাসিনার রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে বাংলাদেশে সম্ভাব্য কারাবাসের ঝুঁকির মধ্যে ছিলেন। কিন্তু গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনাকে ক্ষমতাচ্যুত করার কয়েক ঘণ্টা পর ইউনূসের কাছে একটি ফোন কল আসে। তাকে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে বলা হয়। তিনি গত ২৭ সেপ্টেম্বর নিউ ইয়র্ক সিটিতে এনপিআর-এর মর্নিং এডিশনে বলেছিলেন, এটি ছিল ‘ঘটনার খুব অদ্ভুত পরিবর্তন’।
ইউনূস জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে বক্তৃতা করার পরে এনপিআর-এর মিশেল মার্টিনের সাথে আলাপচারিতায় বসেছিলেন।
সাক্ষাৎকারটি স্পষ্টতার জন্য কিছুটা সম্পাদনা করা হয়েছে।
মিশেল মার্টিন: গত গ্রীষ্মে যখন আমরা কথা বলেছিলাম আপনি দুর্নীতির অভিযোগে বিচারাধীন ছিলেন এবং এখন আপনি বিশ্ব মঞ্চে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করছেন। এসব কিছুই ঘটনার পালাবদল। নিজেকে এই অবস্থানে পেয়ে অবাক হচ্ছেন কি?
মুহাম্মদ ইউনূস: ঘটনার খুবই অদ্ভুত পালাবদল। আমি প্রধান উপদেষ্টা হিসাবে শপথ নেওয়ার আগে আমি প্যারিসে ছিলাম। দেখার চেষ্টা করছিলাম যে আমি ফিরে যাব কি না, আমাকে গ্রেপ্তার করা হবে, কারণ তিনি (হাসিনা) আমার ওপর ক্ষুব্ধ হবেন এবং আমাকে জেলে পাঠাবেন। তাই ভাবছিলাম ফিরতে দেরি করব। আর হঠাৎ বাংলাদেশ থেকে একটা ফোন পেলাম যে তিনি (হাসিনা) দেশ ছেড়ে চলে গেছেন। আমরা চাই আপনি সরকার প্রধান হন। এটি একটি বড় চমক ছিল।
মার্টিন: যখন ফোনটি পেয়েছিলেন, তখন আপনার মনে কী হয়েছিল?
ইউনূস: দেশ পরিচালনায় আমার আদৌ যুক্ত হওয়া উচিত কি না। এটা খুবই কঠিন রাজনৈতিক পরিস্থিতি। কিন্তু যখন ছাত্ররা আমাকে ডেকে ব্যাখ্যা করল যে পরিস্থিতি কী, অবশেষে আমি বললাম, ‘হ্যাঁ, তোমরা এর জন্য জীবন দিয়েছ। তোমরা যদি জীবন দিতে পার, তবে আমি আমার অন্যান্য সব বিবেচনা বাদ দিতে পারি। আমি তোমাদের সেবা করতে পারি। আমি এটা করব।
মার্টিন: এবং আপনি যখন বললেন, তোমরা জীবন দিয়েছ, আপনি অতিরঞ্জিত করেননি এবং এটি কোনো রূপক নয়।
ইউনূস: না, এটা কোনো রূপক নয়। মানুষ মারা যায়। প্রায় এক হাজার তরুণ মারা গেল, বন্দুকের সামনে দাঁড়িয়ে বুলেটে বুক পেতে দিল। আক্ষরিক অর্থে তরুণরা এসে আত্মাহুতি দিয়েছে। তারা যখন বিক্ষোভে যোগ দিতে বাড়ি থেকে বের হচ্ছিল, তারা বাবা-মাকে বিদায় জানাচ্ছিল। তারা তাদের ভাইবোনদের বিদায় বলছে; ‘আমি হয়ত ফিরে আসব না।’ এটাই সেই চেতনা যার মধ্যে পুরো ব্যাপারটা ঘটেছে। এবং অবশেষে, এটি এতটাই অবিশ্বাস্য ছিল। প্রধানমন্ত্রী দেশ ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেন, কারণ পুরো জনতা তার বাসভবনের দিকে আসছিল।
মার্টিন: একদিকে এসব বিক্ষোভ আন্দোলনে খুবই অজনপ্রিয় কিছু দুর্নীতিগ্রস্ত নেতার প্রস্থানের পথ প্রশস্ত করেছিল। তবে সেইসব বিশৃঙ্খলতার প্রথম দিনগুলোতে আহমদিয়া ও হিন্দুদের ওপর হামলা হয়েছিল। এ সব ঘটনার কিছু অংশ ছিল শেখ হাসিনার দলের প্রতি তাদের আনুগত্যের কারণে। এর কিছু ঘটনা কেবল সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে আক্রমণ বলে মনে হয়েছে। সেসব ঘটনাও কমে গেছে। কিন্তু তারপর থেকে আরও হামলা হয়েছে, এইবার সুফি মাজারে। আমাদের প্রতিবেদন অনুসারে, তাকে ক্ষমতাচ্যুত করার পর থেকে ২০টিরও বেশি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে, উত্তেজিত জনতার হাতে হত্যা হয়েছে। কেন এমন হচ্ছে?