DoinikAstha Epaper Version
ঢাকারবিবার ১৩ই জুলাই ২০২৫
ঢাকারবিবার ১৩ই জুলাই ২০২৫

আজকের সর্বশেষ সবখবর

ফুলবাড়িয়ায় ভোগান্তির প্রতীক পলাশতলী গ্রামের রাস্তা

Astha Desk
জুলাই ১২, ২০২৫ ৯:১৮ অপরাহ্ণ
Link Copied!

ফুলবাড়িয়ায় ভোগান্তির প্রতীক পলাশতলী গ্রামের রাস্তা

মোঃ হাবিব/ফুলবাড়িয়া (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধিঃ

ময়মনসিংহের ফুলবাড়ীয়া উপজেলার ১১নং রাধাকানাই ইউনিয়ন এলাকার মানুষ বছরের পর বছর ধরে অবহেলিত এক কাঁচা রাস্তার দুর্ভোগ বয়ে চলেছেন। সামান্য বৃষ্টি হলেই এই সড়ক কাদায় একাকার হয়ে যায়। কোথাও হাঁটুসমান কাদা, কোথাও আবার বড় বড় গর্ত যার ফলে শিক্ষার্থী, রোগী, কর্মজীবী মানুষ সবাই চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। বর্ষা এলেই যেন তাদের জীবনে নেমে আসে দুর্বিষহ যন্ত্রণা।

স্থানীয়রা জানান, প্রায় ৩ কিলোমিটার দীর্ঘ রাস্তাটি পলাশতলী বয়ারমারা মোড় থেকে শুরু করে পলাশতলী বাজার পর্যন্ত অন্যদিকে বয়ারমারা মোড় থেকে ফুলবাড়ীয়া টু আছিম রাস্তায় মেইন সড়কে সংযোগ গ্রামের একমাত্র যাতায়াত পথ। রাস্তার দুই পাশে প্রায় ৬ হাজার মানুষ বসবাস করেন। এই রাস্তা দিয়েই এলাকার লোকজন বাজার, স্কুল-কলেজ, হাসপাতালসহ নানা স্থানে যাতায়াত করেন। কিন্তু বছরের বেশির ভাগ সময়ই এই রাস্তা ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়ে।

স্থানীয় সেলিম মিয়া জানান, রাধাকানাই ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী গ্রামের নাম পলাশতলী। পলাশতলীর সুনাম জাতীয় পর্যায় ছাড়িয়ে এখন আন্তর্জাতিক অঙ্গনের অপেক্ষায়। এ গ্রামের লাল চিনি জিআই পন্য হিসাবে শুধু প্রজ্ঞাপনের অপেক্ষায়। কৃষকের কাছে মওজুত চিনি সারা বছর বিক্রি হয়। কৃষকেরা ভালো দামের আশায় প্রয়োজনে বিভিন্ন সময় এটি বিক্রি করে থাকে। আর পাইকাররা তা গ্রাম হতে সংগ্রহ করে দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করে। রাস্তা খারাপ হওয়ায় চিনির দাম প্রান্তিক পর্যায় থেকে ভোক্ত পর্যায়ে অনেক পার্থক্য হয়। কারণ সংগ্রহ খরচ অনেক বেশি হয়।

তিনি আরোও বলেন, গাড়ী চলাচলের কারণে আমাদের রাস্তাগুলো এত খারাপ হয়ে যায়। এ রাস্তা গিয়ে আমাদের এলাকার প্রাচীনতম বাজার পলাশতলী বাজারে যেতে হয় হাজার হাজার মানুষকে। পলাশতলী বাজারে ২টি হাই স্কুল, ১টি মাদ্রাসা, ১ টি প্রাইমারি স্কুল সহ বেশ কয়েকটি কিন্ডার গার্ডেন রয়েছে। প্রতিদিন এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে হাজার হাজার ছেলে মেয়েরা আসা যাওয়া করে। প্রায় ৩ কিলোমিটার কাঁচা যা বর্তমানে খানাখন্দে ভরা। এ রাস্তার পাশেই পলাশতলী পুর্ব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি জাতীয় ও স্থানীয় নির্বাচনের ভোট কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

আরো পড়ুন :  জজ কোর্টের গাড়ি চালকের বিরুদ্ধে এলাকাবাসীর মানববন্ধন

স্থানীয় নাজমুল হোসেন জানান, রাস্তায় অনেক খানাখন্দ থাকায় প্রতিদিনই ছোট-বড় দুঘর্টনা ঘটছে। দোকানের মালামাল আনতে অটোরিকশা পাওয়া গেলেও গুনতে হয় অতিরিক্তি ভাড়া। এ রাস্তায় চলাচল করতে গিয়ে সুস্থ-সবল মানুষেরও নাভিশ্বাস ওঠে যায়। বর্ষাকালে এই রাস্তা চলাচল করতে খুব কষ্ট হয়। জুতা পরে বের হলেও কিছুদূর যেতেই পা কাদায় আটকে যায়। অনেক সময় অসাবধানতার জন্য পড়ে যাই। জামাকাপড় ভিজে যায়। কোন রোগী অসুস্থ হলে কোন যানবাহন পাওয়া যায়না।

পলাশতলী আমিরাবাদ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এ.কে.এম সায়ফুল ইসলাম কাজল বলেন, বহু বছর ধরে এই রাস্তাটি উন্নয়ন কর্মকান্ড থেকে বঞ্চিত। শিক্ষার্থীরা প্রতিদিন কাঁদা-পানিতে ভিজে স্কুলে আসে, অনেকে পড়ে গিয়ে আহত হয়, আবার অনেক সময় স্কুলে পৌঁছানোই সম্ভব হয় না। শিক্ষার্থী ও শিক্ষকসহ হাতে জুতা নিয়ে পায়ে হেঁটে স্কুলে আসে । স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের অভিযোগ করা হলেও দীর্ঘদিন ধরে কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। অথচ বর্ষা ছাড়াও শুকনো সময়েও ধুলাবালিতে পথচলা দুর্বিষহ। কেউ সাইকেল চালাতে পারে না, মোটরসাইকেল চলাচলও ঝুঁকিপূর্ণ। স্কুলপড়ুয়া শিশু, বৃদ্ধ,বৃদ্ধা, গর্ভবতী নারী, রোগী সবাইকে এই পথে চলাচল করতে হয় রোজ।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বাসিন্দা বলেন, “প্রতিটি নির্বাচনের সময় নেতারা রাস্তা পাকা করার আশ্বাস দেন। কিন্তু ভোটের পর সবাই ভুলে যান। আমরা অনেকবার লিখিতভাবে অভিযোগ করেছি, কিন্তু কোনো ফল হয়নি।”
স্থানীয়দের দাবি, দ্রুত এই রাস্তা পাকা না করলে গ্রামীণ জনপদের জীবনযাত্রা আরও কষ্টকর হয়ে পড়বে। শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও কৃষি, তিন খাতেই এর প্রভাব পড়ছে মারাত্মকভাবে। এখন প্রয়োজন সরকারি জরুরি বরাদ্দ ও উদ্যোগে এই কাঁচা রাস্তাটি পাকা করা।

স্থানীয় ইউপি সদস্য আমিনুল এহেসান উজ্জল বলেন, রাস্তাটি চলাচলে মানুষের দুর্ভোগের স্বীকার। রাস্তাটি হেরিংবোন বন্ড (ইটের সোলিং) করে দেওয়ার কথা বলে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন ইউপি চেয়ারম্যান।

এ বিষয়ে ইউপি গোলাম কিবরিয়া শিমুল তরফদার পলাতক থাকায় তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

বিনা অনুমতিতে এই সাইটের সংবাদ, আলোকচিত্র অডিও ও ভিডিও ব্যবহার করা বেআইনি।