যশোরসহ ১৬ জেলায় দ্রুত বাড়ছে কোভিড-১৯ সংক্রমণ
অনলাইন ডেস্কঃ দেশের অর্ধেকের বেশি জেলায় কোভিড-১৯ এর সংক্রমণ ঊর্ধ্বমুখী। বিশেষ করে সীমান্তবর্তী ১৬ জেলায় সংক্রমণ তুলনামূলক দ্রুত বাড়ছে। কিছু জেলায় সংক্রমণ ছাড়িয়েছে ৫০ শতাংশের বেশি, বাড়ছে মৃত্যুও। প্রত্যন্ত এসব এলাকায় চিকিৎসার সক্ষমতা কম থাকায় করোনা নিয়ন্ত্রণে জনপ্রতিনিধিদের সম্পৃক্ত করার তাগিদ দিয়েছে বিশেষজ্ঞরা। সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে নিম্ন আয়ের মানুষকে ঘরে রাখতে তাদের কাছে খাদ্যসামগ্রী সরবরাহের পরামর্শও দিয়েছেন।
সীমান্তবর্তী জেলা যশোর, রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নওগাঁ, সাতক্ষীরা, খুলনা ও বাগেরহাটে করোনা সংক্রমণ প্রতিদিনই বাড়ছে। নড়াইলে করোনা সংক্রমণের হার ৫৮.৬২ শতাংশ। সাতক্ষীরায় এ হার ৫২.৬০ শতাংশ। যশোরে সংক্রমণের হার ৪৪ শতাংশ। এছাড়া বাগেরহাট, খুলনা, রাজশাহী, নওগাঁ ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ, চুয়াডাঙায় সংক্রমণ বাড়ছে দ্রুত। এভাবে রোগী বাড়তে থাকলে পরিস্থিতি সামলানো কঠিন হবে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।
এর মধ্যে সাতক্ষীরায় গত শনিবার থেকে লকডাউন চলছে, কিন্তু এখনো পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে না। রাজশাহী সিটিতে শুক্রবার থেকে শুরু হয়েছে সর্বাত্মক লকডাউন।জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক এ বি এম আবদুল্লাহ বলেন, সীমান্ত এলাকায় চোরাপথে যাওয়া-আসা বন্ধ ও কঠোরভাবে লকডাউন কার্যকরের পরামর্শ দিয়েছেন। নিম্ন আয়ের মানুষের ঘরে থাকা নিশ্চিত করতে পারলে নতুন সংক্রমণ কমবে বলে মনে করেন তিনি।
সীমান্তবর্তী জেলা ছাড়াও প্রত্যন্ত এলাকাগুলোতে করোনা পরীক্ষার সুুবিধা বাড়ানোর তাগিদ দিয়েছেন শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার হাসপাতাল পরিচালক অধ্যাপক ফারুক আহমেদ। তিনি বলেন, উপসর্গ দেখা দিলেই দ্রুত পরীক্ষা করাতে হবে।
ঈদের পর থেকে সংক্রমণ ও রোগী বৃদ্ধির হারে ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা শুরু হয়। গত পাঁচদিন ধরে সংক্রমণ রেখায় ছোট উল্লম্ফন দেখা যাচ্ছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, দেশের ১৮টি জেলায় আগের সপ্তাহের তুলনায় রোগী বৃদ্ধির হার শূন্য শতাংশের নিচে, আর ১০টি জেলায় এই হার শূন্য দশমিক ১ থেকে ২৪ শতাংশের মধ্যে। এর বাইরে বাকি ৩৬ জেলায় রোগী বাড়ছে। এসব জেলায় এক সপ্তাহে রোগী বৃদ্ধির হার ২৫ থেকে ১০০ শতাংশের বেশি।
চলতি বছরের মার্চ থেকে দেশে সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হলে ৫ এপ্রিল থেকে লকডাউন ঘোষণা করে সরকার। এপ্রিলের মাঝামাঝি সময় থেকে সংক্রমণ কমতে শুরু করেছিলো। কিন্তু পবিত্র ঈদুল ফিতরের পর মে মাসের মাঝামাঝি থেকে সংক্রমণে আবার ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা দেখা দিয়েছে। এ সময়ে সীমান্তবর্তী জেলাগুলোতে সংক্রমণ বেশি বেড়েছে। সীমান্তের কিছু জেলায় পুরোপুরি বা আংশিক লকডাউন দেয়া হলেও পরিস্থিতির তেমন উন্নতি হচ্ছে না।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, দেশের ১৫টি জেলায় গত সপ্তাহের চেয়ে এ সপ্তাহে রোগী বৃদ্ধির হার ১০০ ভাগ বা তার বেশি ছিলো। এগুলোর আটটিই ভারতের সীমান্তবর্তী জেলা। এর বাইরে আটটি জেলায় রোগী বৃদ্ধির হার ৭৫ থেকে ৯৯ শতাংশের মধ্যে। এ ছাড়া মাগুরা, নড়াইল, রাজবাড়ী, মানিকগঞ্জ, টাঙ্গাইল, পিরোজপুর ও নোয়াখালীতেও এই সময় রোগী বৃদ্ধির হার শতভাগ কিংবা তার চেয়ে বেশি ছিলো।
শতভাগ বা তার চেয়ে বেশি হারে রোগী বেড়েছে এমন সীমান্তবর্তী জেলাগুলো হলো পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও, কুড়িগ্রাম, জয়পুরহাট, রাজশাহী, মেহেরপুর, চুয়াডাঙ্গা ও খাগড়াছড়ি। আর রোগী বৃদ্ধির হার ৭৫ থেকে ৯৯ শতাংশ ছিলো সীমান্তবর্তী জেলা যশোর, ঝিনাইদহ, নওগাঁ, দিনাজপুর, লালমনিরহাট, ফেনী, শেরপুর ও কুষ্টিয়া।