মার্কিন ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকের এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রে শীর্ষ ১ শতাংশ ধনীর কাছে সম্মিলিতভাবে ৩৪ লাখ ২০ হাজার কোটি ডলারের সম্পদ রয়েছে। করোনার এই সময়ে করা এটি পর্যবেক্ষণে ব্যাংকটি বলছে, জাতি, বয়স ও শ্রেণিভেদে মার্কিনদের সম্পদের বণ্টনে ব্যাপক অসাম্য দেখা দিয়েছে। সম্পদ বৃদ্ধির এই দৌড়ে পিছিয়ে নেই বিশ্বের সবচেয়ে বড় গণতন্ত্রের দেশ ভারতের ধনীরাও। ফোর্বস ম্যাগাজিনে প্রকাশিত বিলিয়নিয়ারের তালিকায় ভারতে নতুন করে ১৫ জনের নাম উঠে এসেছে।
নভেল করোনাভাইরাস বদলে দিয়েছে বিশ্বের অর্থনীতির সব অনুমান। বদলে গেছে উন্নয়ন আর অবনমনের সূচকও। ধনীদের ব্যবসায় এবং সম্পদের পরিমাণ কমার আশঙ্কা করা হলেও কিছু ক্ষেত্রে ঘটেছে একেবারেই উল্টো ঘটনা। ধনিরা হয়েছেন আরও ধনি। সম্পদ অর্জনে গড়েছেন রেকর্ড। ছাড়িয়ে গেছেন নিজেদের প্রত্যাশাকেও। অসাম্যের ফলে ধনীরা আরও ধনী হয়েছেন। আর মধ্য ও নিম্নবিত্তরা মন্দার চক্রে ঘুরপাক খেয়ে কমাচ্ছেন জীবনযাত্রার মান। করোনায় বাড়ছে দারিদ্র্যতা আর ধনির সম্পদ।
মার্কিন ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের ৫০ জন শীর্ষ ধনীর কাছে যে পরিমাণ সম্পদ রয়েছে, দেশটির অর্ধেক নাগরিকের মোট সম্পদ যোগ করলে তার সমান হবে। অন্যদিকে দরিদ্র ৫০ শতাংশ মার্কিনের মোট সম্পদের পরিমাণ মাত্র ২ লাখ ৮ হাজার কোটি ডলার, যা যুক্তরাষ্ট্রের মোট হাউসহোল্ড ওয়েলথের মাত্র ১ দশমিক ৯ শতাংশ। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ ৫০ বিত্তবানের কাছেও সম্মিলিতভাবে সম্পদ রয়েছে প্রায় ২ লাখ কোটি ডলার।
চলতি বছরের শুরুর দিকে এ ৫০ জনের সম্পদ ছিল ৩৩ হাজার ৯০০ কোটি ডলার সমমূল্যের। করোনা মহামারির মধ্যে তারা সম্পদের পাহাড় গড়েছেন। ভারতে নতুন করে শতকোটি ডলারের মালিকের তালিকায় যারা ঢুকেছেন তারা হলেন, মুরলীধর বিমল কুমার জ্ঞানচন্দানি, রাধেশ্যাম গোয়েনকা, বিনি বনসল, রাধেশ্যাম আগরওয়ালা। চলমান বাস্তবতায় মূলত তাদের সম্পদ বাড়ছে, যারা অনলাইন ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত।
দেশটিতে শীর্ষ ধনীর তালিকায় আছেন মুকেশ আম্বানি, যার সম্পদের পরিমাণ ৮ হাজার ৮২০ কোটি ডলার। বিশ্বের শীর্ষ ধনীর তালিকায় ষষ্ঠতম ধনী ব্যক্তিও তিনি। দ্বিতীয় স্থানে রয়েছেন, ভারতের এইচসিএল টেকনোলজিসের প্রতিষ্ঠাতা শিব নাদার। তার সম্পদের পরিমাণ ২ হাজার ৬০ কোটি ডলার। এরপর রয়েছেন আদানি গ্রুপের কর্ণধার গৌতম আদানি। রয়েছেন কোটাক মাহিন্দ্র গ্রুপের কর্ণধার উদয় কোটাক, আছেন ভারতের জনপ্রিয় চেন শপ ডিমার্ট’র কর্ণধার রাধাকৃষ্ণ দামানি ও তার পরিবার। সিরাম ইনস্টিটিউটের কর্ণধার সাইপ্রাস পুণওয়ালারও রয়েছেন এ তালিকায়।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রে বর্তমানে ৫০ শতাংশের বেশি করপোরেশন ইকুইটি ও মিউচুয়াল ফান্ড শেয়ার মাত্র ১ শতাংশ সম্পদশালীর দখলে রয়েছে। পরবর্তী ৯ শতাংশ বিত্তবান এক-তৃতীয়াংশের বেশি ইকুইটি শেয়ারের মালিক। সব মিলিয়ে ১০ শতাংশ শীর্ষ ধনী সম্মিলিতভাবে ৮৮ শতাংশ ইকুইটি শেয়ার নিয়ন্ত্রণে রেখেছেন। ফলে পুঁজিবাজারে শেয়ারদর বেড়ে গেলে তা কেবল ধনীদের সম্পদমূল্যই বাড়াচ্ছে।
ফেডের প্রতিবেদন বলছে, যুক্তরাষ্ট্রের শ্রমবাজারে মিলেনিয়াল (১৯৮১ থেকে ১৯৯৬ সালের মধ্যে যাদের জন্ম) অর্থাৎ তরুণ কর্মীদের সংখ্যাই বেশি (৭ কোটি ২০ লাখ)। অথচ তারা যুক্তরাষ্ট্রের মোট সম্পদের মাত্র ৪ দশমিক ৬ শতাংশের মালিক। এ সম্পদও তিন মিলেনিয়াল উদ্যোক্তা—ফেসবুক ইনকরপোরেশনের সহপ্রতিষ্ঠাতা মার্ক জাকারবার্গ ও ডাস্টিন মস্কোভিটজ এবং ওয়ালমার্ট সাম্রাজ্যের বর্তমান কর্ণধার লুকাস ওয়ালটনের মতো হাতেগোনা কয়েকজনের হাতেই রয়েছে।
ফেডপ্রধান জেরোমি পাওয়েল বলেছেন, ‘করোনা মহামারি সম্পদ ও অর্থনৈতিক অসাম্য আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে।’ তিনি অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে সরকারকে আরও বেশি সহায়তা দেয়ার আহ্বান জানান। করোনা মহামারিকালীন অর্থনীতিতে সবচেয়ে বেশি সুবিধাভোগীদের মধ্যে প্রযুক্তি কোম্পানি-সংশ্লিষ্টদের আধিক্য রয়েছে। তাদের মধ্যে সবার ওপরে রয়েছেন আমাজন ডটকম প্রতিষ্ঠাতা জেফ বেজোস। চলতি বছর তার সম্পদমূল্য বেড়েছে ৬৪ শতাংশ।