শারীরিক সুস্থতা, আত্মিক পবিত্রতা ও গোনাহমুক্ত জীবন মানুষের একমাত্র চাওয়া এবং পাওয়া। এমন কোনো আমল ও কাজ কি আছে, যা দিয়ে মানুষ শারীরিকভাবে সুস্থতা লাভ করবে আবার নিষ্পাপ জীবন ও আত্মিকভাবে পবিত্রতা লাভ করবে?
‘হ্যাঁ’ এমন অনেক আমল রয়েছে, যে আমল মানুষকে শারীরিক সুস্থত ও নিরাপত্তার পাশাপাশি আত্মিক পবিত্রতাসহ নিষ্পাপ মানুষে পরিণত করে দেবে। তার মধ্যে অন্যতম একটি আমল হলো- ‘পরিপূর্ণভাবে ওজু করা।’ ওজুর আমল মানুষকে সদ্য ভূমিষ্ঠ শিশুর মতো নিষ্পাপ করে দেয়।
ওজু এমন একটি ইবাদত, যা মানুষকে শারীরিক ও আত্মিক নিরাপত্তা দেয়। ওজুর মাধ্যমেই মানুষ শারীরিক পবিত্রতা ও সুস্থতা লাভ করে আবার আত্মিক পবিত্রতার অন্যতম উপায়ও এটি। বিজ্ঞানের গবেষণায়ও তা প্রমাণিত।
বৈশ্বিক মহামারি করোনার প্রাদুর্ভাবের মোকাবেলায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনার সঙ্গে ইসলামের এ আমলটি কার্যকরীভাবেই মিলে যায়। ভালোভাবে ওজু করার মাধ্যমে মানুষ এ ভাইরাস থেকে মুক্ত থাকতে পারে।
একজন মুমিন মুসলমান ইচ্ছায় কিংবা অনিচ্ছায় হোক- প্রতিদিন ৫ বার নামাজের জন্য ওজু করেন। এটি ইসলামের নির্দেশ ও বিধান। তাই এ কথা নিশ্চিত করেই বলা যায়, কেউ যদি ন্যূনতম ৫ বার ওজু করে তবে সে শারীরিক প্রবিত্রতা ও করোনার ঝুঁকি থেকে নিরাপদ থাকতে অনেকাংশেই মুক্ত।
আবার এ ওজুর আমলের মাধ্যমেই পরিচ্ছন্ন জীবন লাভের সুসংবাদ দিয়েছেন বিশ্বনবি। পরিপূর্ণভাবে ওজু করার মাধ্যমেই মুমিন মুসলমান সদ্য ভূমিষ্ঠ শিশুর মতো নিষ্পাপ জীবন লাভ করে। হাদিসের একাধিক বর্ণনায় তা ওঠে এসেছে-
– রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঘোষণা দিয়েছেন- ‘যখনই কোনো মুসলিম পরিপূর্ণরূপে ওজু করে নামাজ আদায় করতে দাঁড়ায় আর (নামাজে দাঁড়িয়ে) যা বলছে, তা জেনে বুঝে মনোযোগ সহকারে আদায় করে, সে সদ্য ভূমিষ্ঠ শিশুর মতোই নিষ্পাপ হয়ে নামাজ সম্পন্ন করে।’ (তাবারানি, তারগীব)
– রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘তোমাদের কোনো ব্যক্তি যখন ওজুর পানি নিয়ে কুলি করে, নাকে পানি দেয় এবং তিা পরিষ্কার করে, তখন তার মুখের ভেতরের ও নাকের সব গোনাহ ঝরে যায়। তারপর যখন সে আল্লাহ পাকের নির্দেশ অনুসারে মুখমণ্ডল ধোয়, তখন মুখমণ্ডলের চারদিকের সব গোনাহ পানির সঙ্গে ঝরে যা।
তারপর যখন দুই হাত কনুইসহ ধোয়, তখন তার উভয় হাতের গোনাহসমূ আঙুল বেয়ে পানি সঙ্গে ঝরে পড়ে। এরপর উভয় পা গোড়ালি পর্যন্ত ধোয় তখন উভয় পায়ের আঙুল বেয়ে গোনাহগুলো ঝরে যায়।
এরপর যদি সে দাঁড়িয়ে যথাযথভাবে নামাজ আদায় করে, আল্লাহর প্রশংসা করে ও স্তুতি বর্ণনা করে এবং তার অন্তর আল্লাহর জন্য একাগ্র করে নেয়; তবে সে গোনাহ থেকে এমনভাবে মুক্ত হয়ে যাবে যেন তার মা তাকে এখনই প্রসব করেছেন।’ (মুসলিম)
হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যখন কোনো মুমিন বান্দা ওজু করে এবং মুখ ধোয়, তার মুখের গোনাহ পানির সঙ্গে ধুয়ে যায়। যখন কোনো বান্দা হাত ধোয়, তার হাতের গোনাহ পানির সঙ্গে ধুয়ে যায়। এমনিভাবে যখন ওজু শেষ করেন তখন ওই ব্যক্তি বেগোনাহ মাসুম হয়ে যায়।’ (তিরমিজি)
এ আমলটি ইবাদত বন্দেগির জন্য ফরজ কাজ। আল্লাহ তাআলা কুরআনুল কারিমে মানুষকে এ মর্মে নির্দেশ দিয়েছেন যে-
‘হে মুমিনগণ! যখন তোমরা নামাজের জন্য দাঁড়াবে তখন তোমরা তোমাদের পুরো মুখ, উভয় হাত কনুইসহ ধুয়ে নাও এবং তোমাদের মাথা মসেহ কর এবং দুই পা টাখনু পর্যন্ত ধোও। যদি তোমরা অপবিত্র হও তবে সারা দেহ পবিত্র করে নাও এবং যদি তোমরা রুগ্ন হও, অথবা প্রবাসে থাক অথবা তোমাদের কেউ প্রসাব-পায় খানা সেরে আসে অথবা তোমরা স্ত্রীদের সাথে সহবাস কর, অতঃপর পানি না পাও, তবে তোমরা পবিত্র মাটি দ্বারা তায়াম্মুম করে নাও-অর্থাৎ, স্বীয় মুখ-মন্ডল ও হস্তদ্বয় মাটি দ্বারা মুছে ফেল। আল্লাহ তোমাদেরকে অসুবিধায় ফেলতে চান না; কিন্তু তোমাদেরকে পবিত্র রাখতে চান এবং তোমাদের প্রতি স্বীয় নেয়ামত পূর্ণ করতে চান-যাতে তোমরা কৃতজ্ঞাতা প্রকাশ কর।’ (সুরা মায়িদাহ : আয়াত ৬)
সুতরাং মুমিন মুসলমানের উচিত, যথাযথভাবে ওজু করার মাধ্যমে সব সময় পবিত্র থাকা। হাদিসের নির্দেশনা অনুযায়ী শারীরিক সুস্থতার পাশাপাশি আত্মিক পবিত্রতা ও নিষ্পাপ হিসেবে নিজেকে তৈরি করা।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে নিয়মিত ওজুর আমল যথাযথভাবে করার তাওফিক দান করুন। ওজু করার পর হাদিসের নির্দেশনা আমল করার তাওফিক দান করুন। শারীরিক সুস্থতা ও নিষ্পাপ জীবন লাভের তাওফিক দান করুন। আমিন।