ধর্ম:মুহাম্মদ ইজহারুল হক। তিনি একজন প্রবীণ বিশ্লেষক, গবেষক ও সুপরিচিত লেখক। ভারতের প্রসিদ্ধ পত্রিকা রোজনামার বিশ্ব পাতার তিনি একজন নিয়মিত লেখক। তার লেখার তথ্য নির্ভরতা ও গভীরতা পাঠককে মুগ্ধ করে।
রবিউল আউয়াল মাস উপলক্ষে তার লেখা একটি কলামে, তিনি স্পেনের আল হামরায় সফরকালে ঘটে যাওয়া একটি ঘটনার কথা বলেন। তিনি স্পেনের মুসলিম ইতিহাস ঐতিহ্যের স্মৃতিচিহ্ন দেখতে গিয়েছিলেন। আন্দালুসিয়ার গৌরবময় অতীতের স্মৃতিচিহ্ন হিসেবে আধুনিক স্পেনের বুকে আজও দাঁড়িয়ে আছে ঐতিহাসিক আলহামরা প্রাসাদ। আলহামরা আন্দালুসে মুসলিম শাসনের শেষ শতকের স্থাপত্যরীতি ও সংস্কৃতির অনন্য নিদর্শন।
গ্রানাডা শহরের পশ্চিমে সাবিক পাহাড়ের উপরে দুর্লভ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমণ্ডিত স্থানে অবস্থিত দৃষ্টিনন্দন আলহামরা প্রাসাদ। প্রাসাদের বাঁ দিক দিয়ে বয়ে গেছে দারো নদী। প্রাসাদে রয়েছে কোর্ট অব লায়ন। এটি কোমারিস প্রাসাদের ঠিক পরেই অবস্থিত। তবে এটি একটি আলাদা ভবন। গ্রানাডার পতনের পর দুটি প্রাসাদকে সংযুক্ত করা হয়।
আরো পড়ুন: এই আমল করলে দারিদ্রতা থেকে মুক্তি পাবেন
পঞ্চম মুহাম্মাদ কোর্ট অব লায়নকে দেখার মতো করেই বানিয়েছিলেন। জটিল পানিপ্রবাহ ব্যবস্থা সম্বলিত মার্বেল বেসিনের ঝর্ণাটি অবস্থিত পাথরে খোদাই করা বারোটি সিংহের পেছনে। মুহাম্মদ জহিরুল হক বলেন, আমি ঘুরে ঘুরে দেখলাম প্রাসাদের সৌন্দর্য। ঠিক তখনই আমার পাশ থেকে এক ব্রিটিশ নারী আমাকে প্রশ্ন করে বসে, এখানে এতগুলো মূর্তি স্থাপন করা হলো, অথচ ইসলামে ভার্স্কয বা মূর্তি সমর্থন করে না।
তাহলে মুসলিম রাজারা এ মূর্তিগুলো কেন স্থাপন করলেন? আমি এক মুহূর্তের জন্য ভরকে গেলাম তার প্রশ্ন শুনে। তারপর মার্কসবাদীদের ইতিহাসের কথা মনে পড়লো। আমি বললাম, এ রাজা মার্কসবাদে বিশ্বাসী ছিলেন। আমার কথা শুনে সে নারী হা হা করে হাসলেন। তুমি তো মুসলমান! সব কথা উত্তর তোমাদরে কাছে থাকে। তবে মূল কথা হলো তোমাদের জীবন তোমাদের রাসূল (সা.) এর বিধি-বিধানের আশপাশেও থাকে না।
লজ্জায় আর দু:খে মাথা নিচু হয়ে আসলো আমার। তীরের মতো কলিজায় গিয়ে আঘাত করলো তার কথাগুলো। আমাদের পাশেই একটি বসার জায়গা ছিল। আমরা সেখানে বসলাম। আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম, ম্যাডাম! আমাদের রাসূল (সা.) সর্ম্পকে আপনার কী জানা আছে? তার আর্দশ আমরা অনুসরণ করি বা না করি, এ বিষয়ে আপনার কী ধারণা আমাকে বলেন?
সে নারী আমাকে অবাক করে দিয়ে বললেন, আমি কয়েক বছর ধরে রাসূল (সা.) এর জীবনী নিয়ে পড়াশোনা করেছি। এখন আমার মনে নেই, তিনি সম্ভবত ফ্রান্স কিংবা নেদারল্যান্ডের একজন ইংরেজি অধ্যাপক ছিলেন। তিনি পাকিস্তানসহ অনেকগুলো মুসলিম দেশ সফর করেছিলেন। তিনি ইসলাম সর্ম্পকে অনেক গবেষণা করেছেন। তিনি বললেন, আল্লাহ তায়ালা তোমাদের রাসূল (সা.) কে বিশ্ববাসীর জন্য রহমত হিসেবে প্রেরণ করেছেন।
তিনি শুধু মুসলমানদের জন্য নয়, পুরো বিশ্বের জন্য রহমত! আপনি কি বিশ্বের মধ্যে এর প্রভাব বিবেচনা করেছেন কখনো? আমি মাথা নেড়ে না বলে জানালাম। যদিও এ বিষয়ে চিন্তা করলে কিছু বলা যেতো। তিনি বলতে লাগলেন, চিন্তা করে দেখেন, বর্তমানে কয়েক মিলিয়ন মুসলিম,অমুসলিম দেশে বসতি স্থাপন করছেন, বসবাস করতে আসছেন, আরো কয়েক মিলিয়ন অমুসলিম দেশ আসার চেষ্টা করছেন, তবে পশ্চিমা দেশগুলো থেকে কতজন লোক মুসলিম দেশে যেতে আগ্রহী?
আরো পড়ুন: দেশে প্রচলিত এবং ইসলামী ধারার ব্যাংকিং ব্যবস্থার মধ্যে পার্থক্য
আমাদের দেশগুলোকে স্বর্গ হিসেবে বিবেচনা করা হয়, একজন যুবক মুসলিম দেশ থেকে আসে, তারপরে সে তার ভাই-বোন, পরিবারের সব সদস্যকে আস্তে আস্তে নিয়ে আসে। আমরা যারা পশ্চিমা দেশগুলোতে বাস করি, মুখে স্বীকার না করলেও মুহাম্মদ (সা.) এর কথা আমরা মানতে চেষ্টা করি। আমরা প্রতিটি ক্ষেত্রে আপনাদের রাসূলের উপদেশ অনুসরণ করেছি। আমার এ কথা আপনার কাছে আর্শ্চয লাগলেও এটাই বাস্তব সত্য। আপনি হয়ত ভাবছেন, আমরা মুসলমান নই, আমরা মুসলমান হওয়ার দাবিও করি না। তবে আপনার রাসূল আপনাদের যে আদেশ দিয়েছেন, আমরা তা অক্ষরে অক্ষরে পালন করার চেষ্টা করি।
বাকি অংশ থাকছে পরের পর্বে। পরের পর্বগুলো জানতে ডেইলি বাংলাদেশের সঙ্গেই থাকুন…