ষ্টাফ রিপোর্টারঃ ময়মনসিংহে প্রকাশ্যে স্বামী-স্রীকে পেটানোর অভিযোগ উঠেছে এক ছাত্রলীগ কর্মীর বিরুদ্ধে। তার নাম ইশরাত হোসেন রাফি। সড়কে মোটরসাইকেল দিয়ে উল্টো পথে আসার সময় প্রাইভেটকারের মালিক মোস্তফা কামাল গাড়ি চালানো অবস্থায় পাশ দিয় যেতে বলায় গালিগালাজ করে পেটানো শুরু করেন রাফি।
কিশোরগঞ্জের ইশাখা ইউনিভার্সিটির ইংরেজি শিক্ষিকা স্রী মাহবুবা (৩২) স্বামীকে বাচাতে ছুটে আসলে তাকেও লাঞ্চিত করা হয়। রাফির সাথে ছিলেন আরো দুজন।
মোস্তফা কামালের স্রী মাহবুবা আক্তার বলেন, গতকাল (২৭ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে ঘটনা। সদরের দিকারকান্দা আমাদের বাসা। তখন কেওয়াটখালী হয়ে নিজের স্বামী, বাচ্চা, মামী শাশুড়ী আর তিন ছেলেমেয়েকে নিয়ে নিজের প্রাইভেটকারে করে গাঙ্গিনাড়পাড় যাচ্ছিলাম। বাসায় সেদিন চালক না থাকায় আমার স্বামী গাড়ি চালাচ্ছিলেন।
নগরীর হাজ্বী কাশেম আলী কলেজের সামনে পর্যন্ত আসতেই চোখে পড়ে বিপরীত দিক থেকে উল্টো পথে অনেক গাড়ি আসছে। তখন দুর্ঘটনা এড়াতে আমার স্বামী হাত দিয়ে ইশারা দেয় বাম পাশ দিয়ে গাড়ি নিয়ে যাওয়ার জন্য। উল্টো দিক থেকে আসা রিক্সাগুলো পাশ দিয়ে চলে যায়।
কিন্তু তখন নামধারী ছাত্রলীগ কর্মী ইশরাত হোসেন রাফি নম্বর প্লেট ছাড়া একটি বাইকে করে পিছনে আরো দুজনকে বসিয়ে উল্টো পথে যাচ্ছিলেন।
আমার স্বামী ইশারা দিয়ে পাশ দিয়ে চলে যাবার কথায় ক্ষিপ্ত হয়ে যান রাফি। অন্যান্য গাড়ি চলে গেলেও তিনি তার বাইক প্রাইভেটকার বরাবর দাড় করিয়ে রাখেন।
আরও পড়ুনঃ কুষ্টিয়ায় এনআইডি জালিয়াতি চক্রের আরও ৪ জন গ্রেফতার
তিনি জানান, কিছুক্ষণ দাড় করিয়ে রাখার পর বলা হয়েছিল ভাই সাইট দেন। তখন ইশরাত হোসেন রাফি আরো বেশী রেগে গিয়ে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করতে থাকে। আর বলতে থাকে আমাকে চিনিষ?
তখন রাফির সাথে তাল মিলাতে শুরু করে পিছনে তার সাথে থাকা আরো দুইজন। কিছুক্ষণ পর তাদের বুঝানোর জন্য গাড়ি থেকে নেমে যান আমার স্বামী।
এরপর রাফি প্রাকাশ্যে ইচ্ছেমতো কিল ঘুষি মারতে থাকে। তখন গাড়ী থেকে নেমে স্বামীকে বাচাতে ছুটে গিয়েছিলাম। তখন স্বামীকে না মারার জন্য অনুরোধ করি।
এরপর আমাকেও গালিগালাজ আর টানাহেঁচড়া করে কিল ঘুষি মারতে শুরু করে। হঠাৎ বুদ্ধি করে গাড়ি থেকে মোবাইলে একটি ছবি তোলা হয়।
এরপরে বাহিরে এসে যখন ছবি তুলতে চেয়েছি ঠিক তখন রাফি বুক ফুলিয়ে বলতে থাকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগ কর্মীকে ছবি তুলে চিনতে হবে? এই বলে মোবাইলটি রাস্তায় ফেলে দেন। তখন রাফিকে কয়েকটা থাপ্পড় মারি।
মাহবুবা আরো জানান, তখন আমি ভয় পেয়ে ডাকচিৎকার শুরু করলে আশপাশের লোকজন এসে আমাদের রক্ষা করেন। এরপর ইশরাত হোসেন রাফিকে লোকজন আটক করলেও দৌড়ে পালিয়ে যায় সাথে থাকা আরো দুজন।
পরে আমি ৯৯৯ এ ফোন করলে কোতোয়ালি মডেল থানার পুলিশ এসে রাফিকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়। রাতেই আমি মামলা দায়ের করি। তবে আসলে সে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র কিনা সে বিষয়ে আমার সন্দেহ আছে।
মাহবুবার স্বামী মোস্তফা কামাল বলেন, আমার বিন্দুমাত্র অন্যায় ছিলোনা। নামধারী ছাত্রলীগ কর্মী সকলের সামনে আমাকে যেভাবে অপমান করেছে তা কোনোদিন ভুলতে পারবোনা। আমি এর সঠিক বিচার চাই। এমন ঘটনা আর করো সাথে যেন না হয় সেটার দাবি জানান তিনি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ময়মনসিংহ মহানগর ছাত্রলীগের একজন নেতা জানান, ইশরাত হোসেন রাফি একসময় মহানগর ছাত্রলীগের কর্মী থাকলেও এখন আর নেই। তবে গতকাল রাফি যেই ঘটনাটি ঘটিয়েছে তা শুনেছি। এটি অপ্রত্যাশিত ঘটনা। এর দায়ভার তাকেই নিতে হবে। ছাত্রলীগ কখনো অন্যায়কে প্রশ্রয় দেয়না।
কোতোয়ালি মডেল থানার উপ পুলিশ পরিদর্শক খায়রুল ইসলাম বলেন, আমরা বিষয়টি জানতে পেরে রাতেই ঘটনাস্থলে গিয়েছি। তখন অনেকের উপস্থিততে রাতে থানা হেফাজতে রাখা হয়েছে।
এ বিষয়ে ময়মনসিংহ কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফিরোজ তালুকদার ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, রাতেই মোস্তফা কামালের স্রী মাহবুবা থানায় মামলা করেছেন।এবং বলেন আইনের উর্ধ্বে কেউ নয়। অভিযুক্ত রাফিকে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে।