“ফলোআপ” ভাঙ্গায় পুরুষ শুন্য গ্রামে আতঙ্কে প্রবাসী নারীরা
মামুনুর রশীদ/ফরিদপুর প্রতিনিধিঃ
সরকারী খাস জমির দখলকৃত ক্ষেতের ধান কাঁটার পাশাপাশি এলাকায় আধিপত্য বিস্তার কেন্দ্র করে ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলার দাঙ্গা প্রবণ একটি ইউনিয়ন হিসেবে পরিচিত আলগী ইউনিয়নের বিবদমান দুটি গ্রাম্য দলের সংঘাতে আলমগীর মাতুব্বর (৬০) নামে একজন বৃদ্ধা নিহত হওয়ার পর থেকে গোটা এলাকায় থমথম অবস্থা বিরাজ করছে। দিন যেমন করেই পার হোক না কেন রাত নামতেই পুরুষ শুন্য গ্রামে মহিলা ও শিশুরা অজানা আতংক নিয়ে রাত কাটাচ্ছেন বলে এমন অভিযোগ সাধারণ মহিলা ও প্রবাসী নারীদের অভিযোগ।
জানা গেছে, ছোট খারদিয়া গ্রামে ছানু মাতুব্বর, বাবলু মাতুব্বর ও সরো মাতুব্বর একটি পক্ষের নেতৃত্ব দেওয়ার পাশাপাশি অপর পক্ষের নেতৃত্ব দেন আদম ব্যবসায়ী কাওসার মাতুব্বর ও জলিল মাতুব্বর।
দুটি পক্ষের লোকজনের সাথে গ্রামের সরকারি একটি হালট নিয়ে দীর্ঘদিনের কোন্দলের সূত্রতায় আদম ব্যবসায়ী কাওসার মাতুব্বর পক্ষের বৃদ্ধা আলমগীর মাতুব্বর চিকিৎসাধীন অবস্থায় রোববার ভাঙ্গা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে মারা যান। তার মৃত্যুর খবর গ্রামে পৌছাতেই প্রতিপক্ষের লোকজনের ঘর বাড়িতে নারী ও পুরুষসহ গ্রাম্য দলের সমর্থকেরা দেশীয় অস্ত্র নিয়ে হামলা চালায়।
ভাংচুর করে ঘরের মালামাল। বাড়ির মহিলাদের উপস্থিতিতে লুটপাটের পাশাপাশি মহিলাদের উপর হামলা চালিয়ে তাদের আহত করে। প্রাণের ভয়ে প্রায় ১৫ থেকে ২০টি পরিবারের নারী ও তাদের শিশু সন্তানেরা ভয়ে প্রকম্পিত হয়ে উঠে। ভুক্তভোগীদের তথ্য মতে অনেকেই জানান, রাতের বেলায় নিজেদের বাড়িতে থাকার কোন রকম সাহস করিনি। কারন দিনের আলোয়ে আমাদের উপর যে করে হামলা চালিয়ে ঘরের মালামাল লুটপাট করে আমাদের উপর আঘাত করা হয়েছে সেই কথা ভাবতেই গাঁ শিহরিয়ে উঠছে।
ছোট খারদিয়া গ্রামের বিভিন্ন প্রবাসী পরিবার নাম প্রকাশ না করার অনিচ্ছুক শর্তে বলেন, একদিকে গ্রাম্য কোন্দলে একজন নিহত হওয়ার ঘটনায় গোঁটা এলাকায় চরম উত্তেজনা বইছে। কার সাথে কার কবেকার গ্রাম্য কোন্দল বা কার মেয়ের বিয়েতে কারে দাওয়াত দেওয়া হয় নি বা সুন্নতে খৎনা খেতে পারে নি এসব নিয়ে অপরাজনীতি শুরু হয়েছে। এছাড়াও ঘটনার সাথে জড়িত নয় এমন পরিবারের সদস্যদের মামলায় আসামি করার জন্য গ্রামের কিছু মাতুব্বর সর্দারে গভীর ষড়যন্ত্রের জাল বুনন করছে।
একাধিক পরিবারের মতামত দাঙ্গা হাঙ্গামা বা আলমগীর মাতুব্বরের উপর যারা হামলা চালিয়েছে এবং তার মৃত্যুর জন্য যারা দায়ী তাদেরকে বিচারের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া হোক কিন্ত সাধারণ পরিবারকে অযথা মামলায় আসামি করে যেন হয়রানীর শিকার হতে না হয়। প্রবাসী পরিবারের পুরুষেরা বাড়িতে না থাকায় অর্থাৎ প্রবাসী হওয়ায় বাড়ির মহিলারা শিশু ও বৃদ্ধ বাবা-মা বা শাশুড়িদের সাথে নিয়ে বসবাস করতে চরম উদবিঘ্নতায় মাঝে রয়েছে। বিশেষত সারাদিন যেমন তেমন কাটলেও রাতের আঁধার নেমে আসতেই মনের মাঝে অজানা ভয় ও আতঙ্ক নিয়ে থাকতে হচ্ছে। রাতভর বিভিন্ন বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে কে বা কারা নজরদারীর নামে সাধারণ মানুষকে হয়রানী করে যাচ্ছে বলে অভিযোগ প্রবাসী পরিবারগুলোর।
প্রতিপক্ষের হামলায় আহত হয়ে ভাঙ্গা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন শিক্ষার্থী সুরভি আক্তার বলেন, আমার পিতার সাথে গ্রাম্য দলাদলির কারণে আমাদের বাড়িতে হামলা ও ভাঙচুর করা হয়েছে। কিন্ত আমি বার বার বললাম আমি একজন এইচএসডি পরীক্ষার্থী। সামনের আমার পরীক্ষা। কিনু কিছুতেই তার মানতে চাইলো না। উপরন্ত চেয়ারদিয়ে দিয়ে আমাকে পিটিয়ে আহত করা হোল। আমি একজন মেয়ে মানুষ আমার উপরে যারা হামলা করেছে তাদের বিচার চাই?
মালয়শিয়া প্রবাসী (নাম প্রকাশ না করার শর্তে) একটি পরিবার জানায়, রোববার সারাদিন প্রতিপক্ষের লোকজন ও তাদের মহিলারা সারাদিন বিভিন্ন বাড়িতে পুরুষেরা ভাংচুরের তাণ্ডব চালিয়ে নদী হয়ে নৌকায় করে মুক্সুদপুর এলাকার আত্মীয় স্বজনের বাড়িতে মালামাল নিয়ে গেছে। তাদের মহিলারা লুটে নিয়েছে ফ্রিজের রাখা বিভিন্ন খাদ্য মালামাল সামগ্রী। রাতের বেলায় তাদের হামলার ভয়ে পরিবারের শিশুদের দিয়ে অন্য গ্রামে গিয়ে অনাহারে রাত কাঁটাতে হয়েছে অনেক পরিবারকে। অভিযোগকারীদের ভাষ্যমতে ১৫ থেকে ২০টি প্রবাসী পরিবারের বাড়িতে হামলা ভাংচুরের ঘটনাসহ ঘরের মালামাল ও টাঁকা পয়সা লুটসহ প্রায় কোটি টাঁকার ক্ষতি সাধন করা হয়েছে।
এদিকে আলমগীর মাতুব্বর নিহতের ঘটনায় সোমবার তার পরিবারের পক্ষ থেকে ভাঙ্গা থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলায় ৫৭ জন এজাহারভুক্ত নামীয় আসামীসহ অজ্ঞাত বেশ কয়েকজনকে আসামী করা হয়েছে। পুলিশ আসামীদের গ্রেপ্তারে তাদের অভিযান অব্যহত রেখেছে বলে জানিয়েছেন ভাঙ্গা থানার অফিসার ইন চার্জ জিয়ারুল ইসলাম। প্রতিপক্ষের বাড়িসহ প্রবাসী বেশ কয়েকটি পরিবারের উপরে হামলার ঘটনা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে অফিসার ইন চার্জ জানান, সঙ্ঘাত বা সংঘর্ষ হলে ভাঙ্গায় হামলা ও লুটের একটা সংস্কৃতি এখানকার কিছু মানুষের ভিতর দেখা গেলেও যে কোন অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি এড়াতে আলগী ইউনিয়নের ছোট খারদিয়া গ্রামে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রাখা হয়েছে। এরপরেও এধরনের কোন কেউ অভিযোগ কেউ করলে বিষয়টি অবশ্যই পুলিশ তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করে।
উল্লেখ্য উপজেলার আলগী ইউনিয়নের বিবদমান দুটি গ্রাম্য দলের সংঘাতে আলমগীর মাতুব্বর (৬০) নামে একজন বৃদ্ধা গত শনিবার বিকেলে হামলার শিকার হয়ে আহত হন। ভাঙ্গা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রোববার সকালে তিনি মারা যান। এনিয়ে নিহতের পক্ষের লোকজন ইউনিয়নের ছোট খারদিয়া গ্রামে প্রতিপক্ষের লোকজনের ঘর বাড়িতে ভাঙচুর ও লুটপাঁটের ব্যাপক তাণ্ডব চালায়। তাদের হামলার থেকে রক্ষা পায়নি আবাল, বৃদ্ধ ও প্রবাসী পরিবারের নারীরা।