ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মুখে গত ৫ আগস্ট পদত্যাগ করে ভারতে পালিয়ে যান ফ্যাসিস্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর আওয়ামী লীগসহ এর শরিক দলগুলোর নেতাদের নামে একের পর এক হত্যা মামলা করা হচ্ছে। তাদের মধ্যে দুজন ১৪ দলের অন্যতম শরিক জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সভাপতি ও সাবেক মন্ত্রী হাসানুল হক ইনু এবং ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি ও সাবেক মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন পৃথক দায়ের হওয়া মামলায় বর্তমানে রিমান্ডে রয়েছেন।
গোয়েন্দা সূত্র জানায়, ডজনের বেশি গ্রেপ্তার হয়ে রিমান্ডে থাকা আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, উপমন্ত্রী, এমপি, নেতা ও শেখ হাসিনার দোসর সরকারি কর্মকর্তারা জিজ্ঞাসাবাদে একে অপরে ঘাড়ে দোষ চাপাচ্ছেন। বিশেষ করে শেখ হাসিরার একগুয়েমি স্বৈরাচারী মনোভাব দায়ী করছেন। তাদের পথ অনুসরণ করছেন ১৪ দলের অন্যতম শরিক রাশেদ খান এবং মেনন-হাসানুল হক ইনুও। রিমান্ডে থাকা দুজনই শেখ হাসিনার ওপর দায় চাপাচ্ছেন। এবং নিজেদের সাধু সাজানোর চেষ্টা করছেন। যদিও গোয়েন্দা কর্মকর্তারা সুনির্দিষ্ট করে তাদের দুজনের অপরাধের কথা বললে তখন তারা চুপ থাকছেন।
ডিএমপি ও ডিবি সূত্রে জানা গেছে, জিজ্ঞাসাবাদে ছাত্র আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের কূটকৌশল সম্পর্কে তথ্য দিয়েছেন হাসানুল হক ইনু। তিনি বলেন, শেখ হাসিনা সরকারের প্রথম পাঁচ বছর আমি মন্ত্রী ছিলাম। পরের ১০-১১ বছরে আমরা সরকারে ছিলাম না। তবে ১৪ দলে জোটের শরিক ছিলাম। জোটের শরিক হিসেবে আমরা শেখ হাসিনাকে অনেক পরামর্শ দিয়েছি। ছাত্রদের দাবি মেনে নিতে বলেছি। যেসব পুলিশ সদস্য ছাত্রদের ওপর গুলি চালিয়েছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বলেছি। টাকা পাচারকারীদের ধরতে বলেছিলাম। উনি চীন সফরে যাওয়ার আগেও বেশকিছু পরামর্শ দিয়েছিলাম। আমাদের কোনো পরামর্শই তিনি কানে নেননি।
জিজ্ঞাসাবাদে ইনু বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রীকে উদ্দেশ করে শেখ হাসিনা বলেছিলেন, সে কোটায় বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছে। অথচ কোটার বিরোধিতা করে। তাহলে সে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রত্ব বাতিল করে রাস্তায় নামুক। এভাবে তার কথা বলা ঠিক হয়নি।
ইনু দাবি করেন, ছাত্র আন্দোলন দমনের বিষয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছিলেন, ‘তাদের দমাতে ছাত্রলীগই যথেষ্ট।’ এই মন্তব্যটি ছাত্র-জনতার ওপর বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছিল।
অন্যদিকে ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি ও সাবেক মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন বলেছেন, ১৯৭৫ সালে জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার কারণে এ দেশের মানুষের প্রতি চরম ক্ষোভ ছিল শেখ হাসিনার। তাই তার আচার-আচরণ এমন ছিল যে, দেশের মানুষ মরুক বা বাঁচুক এ নিয়ে কোনো মাথাব্যথা নেই। উনি চেয়েছিলেন শুধু ক্ষমতা। আজীবন ক্ষমতায় থাকার লোভ তাকে পেয়ে বসেছিল। এই মানসিকতাই তার জন্য কাল হয়েছে।
মেনন বলেন, ছাত্র-জনতার আন্দোলন কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের আগে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আমরা অনেক পরামর্শ দিয়েছিলাম। তিনি আমাদের কোনো কথাই শোনেননি।
অর্থনৈতিক দুরবস্থার কথা তাকে বারবার মনে করিয়ে দিয়েছি। ছাত্র-জনতার দাবি মেনে নিতে বলেছি। উনি আমাদের কোনো কথায় কর্ণপাত করেননি। শেখ হাসিনা পুলিশ, আনসার, বিজিবি এবং সেনাবাহিনীর ওপর নির্ভর করে ক্ষমতায় থাকতে চেয়েছিলেন। গোয়েন্দাদের তিনি বলেন, ‘জয়কালে ক্ষয় নাই মরণকালে ওষুধ নাই’-এ প্রবাদটি শেখ হাসিনার জন্য সত্য প্রমাণিত হয়েছে। কারণ গত ১৫ বছরে শেখ হাসিনা যতগুলো সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, সবই তার পক্ষে গিয়েছে। আর এবার ছাত্র আন্দোলনকে ঘিরে তিনি যত সিদ্ধান্ত নিয়েছেন সবই তার বিপক্ষে গিয়েছে।