বাংলাদেশে এখনো ‘ধর্ষণ’ সংজ্ঞায়িত করা হয় ১৮৬০ সালের দণ্ডবিধি অনুযায়ী। ২০০০ সালে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন প্রণীত হলেও ধর্ষণের সংজ্ঞা নির্ধারণের ক্ষেত্রে এখনো রয়ে গেছে ১৮৬০ সালে ব্রিটিশদের তৈরি করা ফৌজদারি দণ্ডবিধি। চলতি বছরে এ আইন পরিবর্তন হলে তা হবে ১৬০ বছর পর।
বৃহস্পতিবার আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, ধর্ষণের সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদণ্ডের বিধান রেখে আইন সংশোধনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। আগামী সোমবার মন্ত্রিসভায় এ প্রস্তাব উত্থাপন করা হবে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশেই এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
ওসি তরিকুলের চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে মানববন্ধনে জেলেরা
বাংলাদেশে ২০০০ সালের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ৯(১) ধারায় ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি যাবজ্জীবন ও ৯(২) ধারায় ধর্ষণের কারণে মৃত্যু হলে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের বিধান রয়েছে। এছাড়া জরিমানারও বিধান রয়েছে।
এ প্রসঙ্গে সংবিধান বিশেষজ্ঞ ড. শাহ্দীন মালিক বলেন, ব্রিটিশরা ১৮৬০ সালে প্যানাল কোর্টের ৫১১টি ধারার মধ্যে মাত্র ছয়টি অপরাধের শাস্তি হিসেবে মৃত্যুদণ্ডের বিধান রেখেছিল। আমাদের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, ২০০০-এ ৩৪টি ধারার মধ্যে ১০টির অধিকটিতে মৃত্যুদণ্ডের বিধান রয়েছে।
বাংলাদেশ সংবিধান অনুযায়ী, যদি কোন পুরুষ বিবাহ বন্ধন ব্যতীত ষোল বৎসরের অধিক বয়সের কোন নারীর সঙ্গে তার সম্মতি ছাড়া বা ভীতি প্রদর্শন বা প্রতারণামূলকভাবে তার সম্মতি আদায় করে, অথবা ষোল বৎসরের কম বয়সের কোন নারীর সঙ্গে তার সম্মতিসহ বা সম্মতি ব্যতিরেকে যৌন সঙ্গম করেন, তাহলে তিনি ওই নারীকে ধর্ষণ করেছেন বলে গণ্য হবেন।
বাংলাদেশের আইনে বর্তমানে ধর্ষণের সাজা হিসেবে যেসব শাস্তির উল্লেখ আছে তা নিচে তুলে ধরা হলো—
৯ (১) যদি কোন পুরুষ কোন নারী বা শিশুকে ধর্ষণ করেন, তাহলে তিনি যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডনীয় হবেন এবং এর অতিরিক্ত অর্থদণ্ডেও দণ্ডনীয় হবেন।
৯ (২) যদি কোন ব্যক্তি কর্তৃক ধর্ষণ বা ওই ধর্ষণ পরবর্তী তার অন্যবিধ কার্যকলাপের ফলে ধর্ষিতা নারী বা শিশুর মৃত্যু ঘটে, তা হলে ওই ব্যক্তি মৃত্যুদণ্ডে বা যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডনীয় হবেন এবং এর অতিরিক্ত অন্যুন এক লাখ টাকা অর্থদণ্ডেও দণ্ডনীয় হবেন।
৯ (৩) যদি একাধিক ব্যক্তি দলবদ্ধভাবে কোন নারী বা শিশুকে ধর্ষণ করেন এবং ধর্ষণের ফলে উক্ত নারী বা শিশুর মৃত্যু ঘটে বা তিনি আহত হন, তা হলে ঐ দলের প্রত্যেক ব্যক্তি মৃত্যুদণ্ডে বা যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডনীয় হবেন এবং এর অতিরিক্ত অন্যুন এক লক্ষ টাকা অর্থদণ্ডেও দণ্ডনীয় হবেন।
৯ (৪) যদি কোন ব্যক্তি কোন নারী বা শিশুকে-
(ক) ধর্ষণ করে মৃত্যু ঘটানোর বা আহত করার চেষ্টা করেন, তাহলে উক্ত ব্যক্তি যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডনীয় হইবেন এবং এর অতিরিক্ত অর্থদণ্ডেও দণ্ডনীয় হবেন;
(খ) ধর্ষণের চেষ্টা করেন, তাহা হইলে উক্ত ব্যক্তি অনধিক দশ বত্সর কিন্তু অন্যুন পাঁচ বত্সর সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডনীয় হবেন এবং এর অতিরিক্ত অর্থদণ্ডেও দণ্ডনীয় হবেন।
৯ (৫) যদি পুলিশ হেফাজতে থাকাকালীন সময়ে কোন নারী ধর্ষিতা হন, তা হলে যাহাদের হেফাজতে থাকাকালীন উক্তরূপ ধর্ষণ সংঘটিত হয়েছে, সেই ব্যক্তি বা ব্যক্তিগণ ধর্ষিতা নারীর হেফাজতের জন্য সরাসরিভাবে দায়ী ছিলেন, তিনি বা তারা প্রত্যেকে, ভিন্নরূপ প্রমাণিত না হলে, হেফাজতের ব্যর্থতার জন্য, অনধিক দশ বত্সর কিন্তু অন্যুন পাঁচ বত্সর সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডনীয় হবেন এবং এর অতিরিক্ত অর্থদণ্ডেও দণ্ডনীয় হবেন।
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের তথ্যমতে, বিশ্বের ১০৬টি দেশ মৃত্যুদণ্ড রহিত করেছে। এছাড়া ৮০টিরও বেশি দেশ রয়েছে, যেখানে মৃত্যুদণ্ডের বিধান থাকলেও সেটির ব্যবহার নেই। অ্যামনেস্টির তথ্য অনুযায়ী, ২০১৮ সালে বাংলাদেশে ২৩০ জনের মতো ব্যক্তিকে সাজা হিসেবে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়েছে। পূর্ববর্তী মামলায় দণ্ডাদেশপ্রাপ্ত অপরাধীসহ সব মিলিয়ে ওই বছর দেশে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত মোট আসামির সংখ্যা ছিল দেড় হাজারের বেশি। এশিয়া ও প্যাসিফিক অঞ্চলের দেশগুলোর মধ্যে যেসব দেশ সাজা হিসেবে সবচেয়ে বেশি মৃত্যুদণ্ড দিয়ে থাকে, বাংলাদেশ তার একটি।