অপরাধের সাথে কোনো সংশ্লিষ্ঠতা নেই অথচ ভুল আসামি হয়ে প্রায় চার বছর ধরে কারাগারে থাকা রাজধানী পল্লবীর বেনারসি কারিগর মো. আরমানকে মুক্তির নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। একইসাথে তাকে ২০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে পুলিশ মহাপরিদর্শকের (আইজিপি) প্রতি নির্দেশ দিয়েছেন উচ্চ আদালত। এছাড়া মো. আরমানকে আসামি করার ঘটনায় জড়িত পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন- ব্যারিস্টার হুমায়ন কবির পল্লব। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন- ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল নওরোজ মো. রাসেল চৌধুরী।গত বছরের ২৩ এপ্রিলে ভুল আসামি হয়ে প্রায় চার বছর ধরে কারাগারে থাকা বেনারসি কারিগর মো. আরমানকে কেন মুক্তির নির্দেশ দেয়া হবে না- তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছিলেন হাইকোর্ট। রুলে নির্দোষ মো. আরমানকে কারাগারে রাখায় কেন পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ দেয়া হবে না- তাও জানতে চাওয়া হয়।
একই বছরের ২১ এপ্রিলে মো. আরমানকে আদালতের হাজির করার নির্দেশনা ও মুক্তি চেয়ে হাইকোর্টে রিট দায়ের করা হয়।ল’ অ্যান্ড লাইফ ফাউন্ডেশনের পক্ষে ব্যারিস্টার হুমায়ন কবির পল্লব রিট আবেদনটি দায়ের করেন।রিটে স্বরাষ্ট্র সচিব, আইজিপি, ঢাকার জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও পল্লবীর ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাসহ (ওসি) সংশ্লিষ্টদের বিবাদী করা হয়।গত বছরের ১৮ এপ্রিল একটি জাতীয় দৈনিকে ‘কারাগারে আরেক জাহালম’ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। ওই প্রতিবেদন সংযুক্ত করে রিট আবেদনটি দায়ের করা হয়েছিল।
প্রতিবেদনে বলা হয়, অপরাধী না হয়েও পাটকল শ্রমিক জাহালমকে জালিয়াতির ৩৩ মামলার আসামি হয়ে তিন বছর কারাভোগ করতে হয়েছিল। অনেক ঘাটের জল পেরিয়ে শেষ পর্যন্ত উচ্চ আদালতের হস্তক্ষেপে তিনি কারামুক্ত হন। চাঞ্চল্যকর এ ঘটনা এখন মানুষের মুখে মুখে। এর রেশ না কাটতেই আরেক জাহালমকাণ্ড বেরিয়ে এসেছে অনুসন্ধানে।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, পল্লবীর বেনারসি কারিগর মো. আরমান নির্দোষ হয়েও ১০ বছরের সাজাপ্রাপ্ত আসামি হিসেবে তিন বছর ধরে কারাভোগ করছেন। রাজধানীর পল্লবী থানার একটি মাদক মামলায় ১০ বছরের সাজাপ্রাপ্ত আসামি মাদক কারবারি শাহাবুদ্দিন বিহারি এ মামলার প্রকৃত আসামি। কিন্তু তার পরিচয়ে, তার পরিবর্তে সাজাভোগ করছেন আরমান। শুধু পিতার নামে মিল থাকায় পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে শাহাবুদ্দিন নামে আদালতে সোপর্দ করেছে বলে জোর অভিযোগ করেছে তার পরিবার। অন্যদিকে প্রকৃত আসামি শাহাবুদ্দিন কারাগারের বাইরে দিব্যি মাদক কারবার চালিয়ে যাচ্ছেন। এ ঘটনায় প্রশ্ন জেগেছে, এটি কি পুলিশের ভুল, নাকি সচেতন অপরাধ? উৎকোচের বিনিময়েই কি প্রকৃত মাদক কারবারিকে রক্ষার অপতৎপরতা চালানো হচ্ছে? যদি তা-ই হয়, তবে এ ঘটনায় কে কে দায়ী? তাদের আইনের মুখোমুখি করা সম্ভব কি?