বাগেরহাট পৌর মেয়র খান হাবিব কারাগারে, প্রতিবাদে সড়ক অবরোধ
বাগেরহাট পৌরসভার মেয়র ও আওয়ামী লীগ নেতা খান হাবিবুর রহমান ও পৌরসভার সাবেক সচিব মোহাম্মদ রেজাউল করিমকে দুর্নীতির মামলায় কারাগারে পাঠিয়েছে আদালত। বুধবার দুপুরে বিশেষ ট্রাইব্যুনাল আদালতের বিচারক মোহা. রবিউল ইসলাম শুনানি শেষে তাদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। দুর্নীতির মামলা শুনানিতে মেয়র খান হাবিবুর রহমানের পক্ষে প্রায় ৩০০ আইনজীবী অংশ নেন। দুর্নীতির মামলায় আওয়ামী লীগ নেতা বুধবার জামিন নিতে যাওয়ার খবরে তার দলের কয়েক হাজার নেতাকর্মী সমর্থক আদালত পাড়ায় ভিড় করেন।
আওয়ামী লীগ নেতা খান হাবিবুর রহমান তিন সপ্তাহ আগে উচ্চ আদালতে জামিন প্রার্থনা করলে হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ তাকে নিম্ন আদালতে আত্মসমর্পণ করার নির্দেশ দেন। উচ্চ আদালতে আদেশে তিনি বুধবার সকালে বিশেষ ট্রাইব্যুনাল আদালতে-১ আত্মসমর্পণ করে জামিন প্রার্থনা করলে বিচারক মোহা. রবিউল ইসলাম তাদের জামিন আবেদন না মঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
এদিকে, আওয়ামী লীগ নেতা পৌর মেয়র খান হাবিবুর রহমানের জামিন মঞ্জুর না হওয়ায় বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মী বাগেরহাট-খুলনা মহাসড়কে আগুন জ্বালিয়ে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করতে থাকে। এ সময় সড়কে প্রায় ৪০ মিনিট যান চলাচল বন্ধ ছিল। পরে পুলিশ এসে অবরোধকারীদের শান্ত করে সড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক করে।
২০২১ সালের ২৫ নভেম্বর দুদকের সমন্বিত খুলনা জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক (এডি) তরুণ কান্তি ঘোষ বাদী হয়ে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে মেয়র খান হাবিবুর রহমান ও তৎকালীন সচিব রেজাউল করিমসহ ১৮ জনের বিরুদ্ধে দুটি মামলা দায়ের করেন। মামলার অপর আসামি মোহাম্মদ রেজাউল করিম বর্তমানে মাগুরা পৌরসভার সচিব হিসেবে কর্মরত আছেন।
দুদকের আইনজীবী মিলন কুমার ব্যানার্জী সাংবাদিকদের বলেন, দণ্ডবিধির ৪০৯/৪২০/১০৯ ধারাসহ ১৯৪৭ সালের ২ নম্বর দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারার মামলায় প্রায় আড়াই ঘণ্টা শুনানি শেষে আদালতের বিচারক বাগেরহাট পৌরসভার মেয়র খান হাবিবুর রহমান ও তৎকালীন সচিব রেজাউল করিমের জামিন না মঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানো আদেশ দেন। উচ্চ আদালতের নির্দেশনা মেনে মেয়র খান হাবিবুর রহমান বুধবার নিম্ন আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন প্রার্থনা করেন।
বাগেরহাট জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি একে আজাদ ফিরোজ টিপু সাংবাদিকদের বলেন, আওয়ামী লীগ নেতা খান হাবিবুর রহমান তিন সপ্তাহ আগে উচ্চ আদালতে জামিন প্রার্থনা করলে হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ তাকে নিম্ন আদালতে আত্মসমর্পণ করার নির্দেশ দেন। উচ্চ আদালতে আদেশে তিনি বুধবার সকালে বিশেষ ট্রাইব্যুনাল আদালতে-১ আত্মসমর্পণ করে জামিন প্রার্থনা করলে বিচারক মোহা. রবিউল ইসলাম তাদের জামিন আবেদন না মঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
বাগেরহাট সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কে এম আজিজুল ইসলাম এই প্রতিবেদককে বলেন, বুধবার দুপুর পৌনে একটার দিকে দুর্নীতির মামলায় বাগেরহাট পৌরসভার মেয়র ও আওয়ামী লীগ নেতা খান হাবিবুর রহমানকে আদালত কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেওয়ার খবর পেয়ে আদালত পাড়ায় থাকা কিছু বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মী বাগেরহাট-খুলনা মহাসড়কে আগুন জ্বালিয়ে যান চলাচল বন্ধ করে দেয়। পরে পুলিশ খবর পেয়ে সেখানে যেয়ে তাদের শান্ত করে যান চলাচল স্বাভাবিক করে।
দুদকের সমন্বিত খুলনা জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক (এডি) তরুণ কান্তি ঘোষ মামলার নথির বরাত দিয়ে এই প্রতিবেদককে বলেন, ২০১৭ সালের ২৩ মার্চ বাগেরহাট পৌরসভার মেয়র খান হাবিবুর রহমান অবৈধভাবে ১৭ জনকে পৌরসভার বিভিন্ন পদে নিয়োগ দিয়ে এক কোটি ২৬ লাখ ৮৮ হাজার ৫৩ টাকা উত্তোলন করে আত্মসাত করেছেন। এছাড়া ২০১৪ ও ২০১৫ অর্থ বছরে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় পৌরসভার উন্নয়নের জন্য স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক লিমিটেডে দুই কোটি টাকা জমা করে। এই টাকা আবাহনী ক্লাব ও ডায়াবেটিস হাসপাতালের নতুন ভবন নির্মাণের জন্য ৫০ লাখ টাকা করে বরাদ্দ দেয়। পৌর মেয়র খান হাবিবুর রহমান ও তৎকালীন সচিব মোহম্মদ রেজাউল করিম ভবন নির্মাণ না করে পরস্পর যোগসাজসে ব্যাংক থেকে এক কোটি টাকা উত্তোলন করে আত্মসাত করেন। ২০২০ সালে পৌর মেয়র খান হাবিবুর রহমানের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ অনুসন্ধান করতে যেয়ে তার সত্যতা পেয়েছে দুদক। তাদের বিরুদ্ধে পরস্পর যোগসাজসে সরকারের অর্থ আত্মসাতের প্রাথমিক সত্যতা পেয়ে দণ্ডবিধির ৪০৯/৪২০/১০৯ ধারাসহ ১৯৪৭ সালের ২ নং দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫ (২) ধারায় পৃথক দুটি মামলা করা হয়।
মামলার অপর আসামিরা হলেন, পৌরসভার সাবেক সচিব মোহম্মদ রেজাউল করিম, পাম্প চালক দিপু দাস, নিতাই চন্দ্র সাহা, মো. মেহদেী হাসান, বাজার শাখার আদায়কারী মো. আসাদুজ্জামান, মো. সৌদি করিম, সাব্বির মাহমুদ, পারভীন আক্তার, স্বাস্থ্য সহকারী সেতু পাল পুজা, সহকারী লাইসেন্স পরিদর্শক জ্যোতি দেবনাথ, সহকারী কর আদায়কারী মো. মারুফ বিল্লাহ, বালি শফিকুল ইসলাম, পানি শাখার ক্লার্ক শারমিন আক্তার বনানী, ট্রাক চালক মো. হাচান, সুইপার সুপারভাইজার হাসনা আক্তার, মো. জিলানী ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী তানিয়া। বর্তমানে এরা সবাই বরখাস্ত হয়ে আছেন।