নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা থানায় মিথ্যা অপহরণ ও গুমের মামলায় এক নারীসহ তার পরিবারের ছয়জনের বিভিন্ন মেয়াদে কারাভোগ এবং গুম হওয়া যুবক দীর্ঘ ৬ বছর পর আদালতে সশরীরে হাজির হওয়ার ঘটনায় বিভিন্ন সময়ে এই মামলা তদন্তকারী ফতুল্লা থানা পুলিশ ও সিআইডি’র তিন কর্মকর্তাকে তলব করেছেন আদালত।
আগামী সাত কার্যদিবসের মধ্যে তদন্তকারী এই তিন কর্মকর্তাকে তদন্ত প্রতিবেদনসহ আদালতে সশরীরে হাজির হয়ে সঠিক ব্যাখ্যা প্রদান করতে আদেশ দেয়া হয়েছে।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় নারায়ণগঞ্জের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট খ অঞ্চল আদালতের বিচারক এই নির্দেশ দেন। শুক্রবার রাতে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ সিআইডি’র নারায়ণগঞ্জ শাখার বিশেষ পুলিশ সুপার নাসির উদ্দিন গণমাধ্যমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
সিআইডির জেলা প্রধান আরো জানান, মামলার এজাহার থেকে চার্জশিট প্রদান পর্যন্ত পর্যায়ক্রমে ফতুল্লা থানা পুলিশ, জেলা ডিবি পুলিশ ও সিআইডি’র আটজন কর্মকর্তা তদন্ত করেছেন। তাদের মধ্যে খুবই স্বল্প সময়ের জন্য তদন্ত ভার পেয়েছিলেন পাঁচজন কর্মকর্তা। সময় স্বল্পতার কারণে এই পাঁচজন কর্মকর্তা মামলা সম্পর্কে তেমন কোন ধারণাও পান নি। তাই তাদের ব্যাপারে আদালত এখন পর্যন্ত কোন সিদ্ধান্ত বা নির্দেশ দেন নি। শুধুমাত্র এক বছরসহ তারও বেশি দীর্ঘসময় ধরে তদন্তকারী তিন কর্মকর্তার উপর আদালত এই নির্দেশ দিয়েছেন। আগামী সাত কার্যদিবসের মধ্যে লিখিত তদন্ত প্রতিবেদনসহ আদালতে হাজির হতে বলা হয়েছে তাদের। পাশাপাশি তদন্তের সঠিক ব্যাখ্যা দিতেও আদালত তাদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন।
আদালতে তলব করা তিন তদন্ত কর্মকর্তা হলেন- ফতুল্লা থানা পুলিশের উপ-পরিদর্শক মিজানুর রহমান, নারায়ণগঞ্জ সিআইডি পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হারুন অর রশিদ এবং উপ-পরিদর্শক জিয়াউদ্দিন উজ্জ্বল।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, নারায়ণগঞ্জের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট খ অঞ্চল আদালতের বিচারক মো. আফতাবুজ্জামান এই নির্দেশ দেন।
সিলেটে আবার ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে কিশোরী ধর্ষণের অভিযোগ
মামলাটি পর্যায়ক্রমে যারা তদন্ত করেছেন তারা হলেন- ফতুল্লা মডেল থানার এসআই মিজানুর রহমান, গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) এসআই মিজানুর রহমান, এস আই সফিকুর রহমান, এস আই আশরাফুল ইসলাম, পুলিশ পরিদর্শক মোহাম্মদ আফজাল হোসেন তালুকদার, নারায়ণগঞ্জ সিআইডি এসআই জিয়াউদ্দিন উজ্জলসহ দুই ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা।
আসামিপক্ষের দাবি, ২০১৪ সালে চাঁদপুরের মতলবের শাখারীপাড়া গ্রামের আবুল কালামের ছেলে নবম শ্রেনীর ছাত্র মামুনের সাথে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে একই এলাকার রকমত আলীর মেয়ে তাসলিমা খাতুনের সাথে। তবে দুই পরিবারের অভিভাবকরা এই সম্পর্ক মেনে না নেয়ায় তাসলিমাকে পাঠিয়ে দেয়া হয় নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় খালার বাড়িতে। সে বছর ১০ মে সকালে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তির ফোন পাওয়ার পর মামুন নারায়ণগঞ্জের উদ্দেশ্যে যায়। এরপর থেকেই মামুন নিখোঁজ। এমন অভিযোগ এনে ঘটনার দুই বছর পর ২০১৬ সালের ৯ মে মামুনের বাবা আবুল কালাম ছেলেকে অপহরণ ও গুমের অভিযোগে ফতুল্লা থানায় তাসলিমাসহ তার পরিবারের ছয় সদস্যের বিরুদ্ধে ৩৬৪ ধারায় একটি মামলা দায়ের করেন। এ ঘটনায় তাসলিমার মামী মাকসুদার কাছ থেকে জোরপূর্বক ১৬৪ ধারায় মিথ্যা জবানবন্দি রেকর্ড করে ফতুল্লা পুলিশ। পরে চার্জশিট দিলে পুলিশ ছয়জনকে গ্রেফতার করে রিমান্ডে নেয়।
এ বিষয়ে তাসলিমা বলেন, মামুন তার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে অভিমান করে বাড়ি থেকে পালিয়ে যায়। কিন্তু ওর বাবা আবুল কালাম একটি মামলা করে। এতে আসামি করা হয় আমিসহ আমার বাবা রহমতউল্লাহ, ভাই রফিক, খালাতো ভাই সোহেল ও সাগর এবং আমার মামা সাত্তারকে। আর এই মামলায় আমি ও আমার ভাই এক বছর করে জেল খাটি। বাকিরা সবাই এক মাস করে জেল খাটে। জেলের মধ্যেও আমাদের ওপর অনেক নির্যাতন-নিপীড়ন করা হয়। আমাকে গর্ভাবস্থাতেই জেল খাটতে হয়েছে। দফায় দফায় রিমান্ডে নিয়ে জবানবন্দি আদায়ের চেষ্টা করা হয়েছে। এরই মধ্যে মামুন ৩০ সেপ্টেম্বর আদালতে হাজির হয়েছে।
মামুন বলেন, বাবা মায়ের উপর অভিমান করে বাড়ি ছেড়ে চলে গিয়ে এতদিন গাজীপুরে বসবাস করেছি।
জানা যায়, গুমের পর হত্যা করা হয়েছে মামুনকে- এমন অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে মামুনের প্রেমিকা তাসলিমাসহ তার পরিবারের ৬ সদস্য ৪ বছরের বিভিন্ন মেয়াদে জেল খাটার পর হঠাৎ গত ৩০ সেপ্টেম্বর আদালতে উপস্থিত হন খোদ মামুন। দীর্ঘ পাঁচ বছর আত্মগোপনে থাকা প্রেমিক আদালতে স্বশরীরে হাজির হলে মিথ্যা মামলার বিষয়টি সামনে আসে। অভিযোগ ওঠে, ফতুল্লা থানায় মিথ্যা অপহরণ ও গুমের মামলায় প্রেমিকাসহ তার পরিবারের ছয়জনকে জেল খাটিয়ে হয়রানি করা হয়েছে। একই সাথে এই মামলায় থানা পুলিশের বিরুদ্ধে গুম খুনের দায় স্বীকার করিয়ে জোরপূর্বক এক নারীর মিথ্যা জবানবন্দি আদায়েরও অভিযোগ তোলেন আসামিপক্ষের আইনজীবী।