ঢাকা ১১:৩৫ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৪ অক্টোবর ২০২৫, ২৯ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম:
Logo শেষ মুহূর্তে সরে দাঁড়ালেন স্বতন্ত্র প্রার্থী সনেট Logo শাপলা না পাওয়ার প্রশ্নই আসে না: ময়মনসিংহে এনসিপির সারজিস আলম Logo অধ্যক্ষসহ ৫৫ জনের ভুয়া সনদ! বনপাড়া আদর্শ কলেজে নিয়োগ কেলেঙ্কারি ফাঁস Logo মিরপুরের ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে কমপক্ষে ১৬ জনের প্রাণহানির ঘটনায় গভীরভাবে শোক প্রকাশ : তারেক রহমান Logo পানছড়ির জিয়ানগরে ভোট ফর ওয়াদুদ ভূইয়া-ভোট ফর ধানের শীষ ক্যাম্পেইন অনুষ্টিত Logo সব সরকারি কলেজে শিক্ষকদের ক্লাস বর্জন, পরীক্ষাও স্থগিত Logo ১৬ বছরের মধ্যে বাংলাদেশে প্রথম সুষ্ঠু নির্বাচন হবে: প্রধান উপদেষ্টা Logo জয়ের সুযোগ হাতছাড়া করল বাংলাদেশ Logo শান্তি সম্মেলনে গাজা পুনর্গঠন নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত Logo আমেরিকান দূতাবাসের সামনে হঠাৎ নিরাপত্তা জোরদার

সুনামগঞ্জ জেলা হাসপাতাল এক বছরে লোপাট ১৮ কোটি টাকা

Astha DESK
  • আপডেট সময় : ০২:১৯:৪৩ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৫ অগাস্ট ২০২৪
  • / ১০৫৮ বার পড়া হয়েছে

সুনামগঞ্জ জেলা হাসপাতাল এক বছরে লোপাট ১৮ কোটি টাকা

বিশেষ প্রতিনিধিঃ

সুনামগঞ্জ জেলা সদর হাসপাতালে এক বছরেই লোপাট করা হয়েছে সরকারি বরাদ্দের প্রায় ১৮ কোটি টাকা। অডিট প্রতিবেদনে এই দুর্নীতির চিত্র ফুটে উঠেছে। হাসপাতালে এমন সাগরচুরির ঘটনায় দ্রুত ব্যবস্থা নিতে অন্তর্বর্তী সরকারের স্বাস্থ্য উপদেষ্টার কাছে স্মারকলিপি দিয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদস্যরা। ব্যাপক দুর্নীতির বিষয়টি জানাজানির পর জেলার ছাত্র-জনতা ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে।

জানা যায়, সুনামগঞ্জ জেলা সদর হাসপাতালে একটি অটোমেশন যন্ত্র কেনা হয়েছিল ২০১৮ সালে। এটি বাক্সবন্দি অবস্থায় আছে। কিন্তু এই মেশিনের জন্য রাসায়নিক দ্রব্য ক্রয় দেখিয়ে ২০২২-২৩ অর্থবছরে চার কোটি ৭৫ লাখ ৩৫ হাজার টাকা বিল তোলা হয়েছে। এছাড়া হাসপাতালের ১৯টি কম্পিউটারের ক্ষুদ্র যন্ত্রাংশ ক্রয় ও মেরামত দেখিয়ে প্রায় ২৩ লাখ, অনুষ্ঠান, উৎসব, সভা-সেমিনারের ব্যয় ২৪ লাখ, আপ্যায়ন ২১ লাখ, পাপোশ কেনায় ১৪ লাখ, সিল ও স্ট্যাম্প প্যাড কেনায় ১১ লাখ টাকা বিল তোলা হয়েছে। এমন অনিয়ম-দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বুধবার অন্তর্বর্তী সরকারের স্বাস্থ্য উপদেষ্টার কাছে স্মারকলিপি দিয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদস্যরা।

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রাশেদ ইকবাল চৌধুরীর কাছে এই স্মারকলিপি হস্তান্তর করেন তারা। স্মারকলিপিতে বলা হয়, জেলা সদর হাসপাতালে শুধু ২০২২-২৩ অর্থবছরেই প্রায় ১৮ কোটি টাকার অনিয়ম ও দুর্নীতি হয়েছে। ওই অর্থবছরের অডিট প্রতিবেদনে বিষয়টি উঠে এসেছে। এই অনিয়ম-দুর্নীতির সঙ্গে হাসপাতালের স্টোরকিপার সুলেমান আহমদ, হিসাবরক্ষক মো. ছমিরুল ইসলাম ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক মো. আনিসুর রহমান জড়িত বলে জানান হাসপাতালের একাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী।

স্মারকলিপিতে উল্লেখ করা হয়, ২০২২-২৩ অর্থবছরে হাসপাতালে কেনাকাটাসহ ৩২টি খাতে অর্থ ব্যয়ে ১৮ কোটি টাকার অডিট আপত্তি পড়েছে। হাসপাতালে এই সময়ে তত্ত্বাবধায়ক ছিলেন মো. আনিসুর রহমান। বর্তমানে তিনি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সিলেট বিভাগীয় পরিচালক। সুলেমান ও ছমিরুলকে এখান থেকে জুলাইয়ে বদলি করা হলেও মো. আনিসুর রহমান এক আদেশে আবার তাদের এখানে বহাল করেন। তবে হাসপাতালে তাদের হাজিরা ও বেতন এখন বন্ধ রয়েছে।

স্মারকলিপিতে অডিট প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে আরও বলা হয়েছে, ওষুধ, যন্ত্রপাতি, কেমিকেল ও লিলেন সামগ্রী ক্রয়ে সর্বনিু দরদাতাকে কাজ দেওয়া হয়নি। এতে চারটি কেনাকাটায় সরকারের দুই কোটি ৫৬ লাখ ৯১ হাজার ৯৬৯ টাকার আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। সরকারের এসেনসিয়াল ড্রাগস কোম্পানি লিমিটেড (ইউসিএল) থেকে ওষুধ না কেনায় সরকারের ৪৫ লাখ ৬০ হাজার টাকা ক্ষতি হয়েছে। প্রয়োজন না থাকা সত্ত্বেও ২২ লাখ টাকার সার্জিকেল সামগ্রী কেনা হয়েছে।

পর্যাপ্ত আউটসোর্সিং জনবল থাকা সত্ত্বেও মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন ছাড়া অনিয়মিত শ্রমিকদের মজুরি দেখিয়ে ৮১ লাখ ৭০ হাজার টাকা প্রদান করা হয়েছে। মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা লঙ্ঘন করে অধিকহারে ইউসিএল বহির্ভূত ওষুধ ক্রয় দেখিয়ে সরকারের এক কোটি ৩৪ লাখ ৮৮ হাজার টাকা ক্ষতি করা হয়েছে। আসবাবপত্র ও সরঞ্জামাদি সরবরাহ না করা সত্ত্বেও ঠিকাদারকে ১৫ লাখ ২৯ হাজার ৭৫০ টাকা বিল প্রদান, মন্ত্রণালয়ের প্রশাসনিক অনুমোদন ও ব্যয় মঞ্জুরি ব্যতীত ৯৭ লাখ ৭১ হাজার ১২৭ টাকা বকেয়া বিল প্রদান, চাহিদা ছাড়া প্রায় ৪৩ লাখ টাকার প্রয়োজনের অতিরিক্ত লিলেন সামগ্রী ক্রয় করে বাক্সবন্দি রাখা হয়েছে।

প্রধান স্টোর থেকে বিভিন্ন ওয়ার্ডে বিতরণকৃত লিলেন সামগ্রী গ্রহণের পক্ষে কোনো প্রমাণ উপস্থাপন না করতে পারায় সরকারের ক্ষতি ৪৬ লাখ ৯৯ হাজার ৮৭৫ টাকা। বাস্তবে বর্জ্য সংরক্ষণাগার ও অফিস সরঞ্জাম মেরামত না করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে ১৩ লাখ টাকা বিল দেওয়া হয়েছে। হাসপাতালের কেবিনে ভর্তিকৃত রোগীর কেবিন ভাড়া থেকে প্রাপ্ত প্রায় ২১ লাখ টাকা সরকারি কোষাগারে জমা দেওয়া হয়নি।

সর্বনিু দরদাতাকে কাজ না দিয়ে কর্মকর্তারা যোগসাজশে ঢাকার ফরচুন করপোরেশন নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে উচ্চদরে কাজ দিয়েছেন। এতে চারটি কেনাকাটায় সরকারের দুই কোটি ৫৬ লাখ ৯১ হাজার ৯৬৯ টাকার আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, হাসপাতালের চিকিৎসক, নার্স ও অফিশিয়াল প্রয়োজনে এ সময়ে তিন হাজার ৭২০টি সিল ও স্ট্যাম্প ক্রয় করা হয়েছে। এতে ব্যয় হয়েছে ১১ লাখ ৫০ হাজার টাকা। সুনামগঞ্জ শহরের শফিক আর্ট, শ্যামল ফটোস্ট্যাট ও পিনাক আর্টের নামে বিল ভাউচার করা হলেও এসব প্রতিষ্ঠান থেকে বলা হয়েছে তারা এসব সরবরাহ করেনি।

মেসার্স সামিহা এন্টারপ্রাইজ নামে সুনামগঞ্জের একটি প্রতিষ্ঠানকে বিভিন্ন সময়ে প্রায় ৬৭ লাখ টাকার বিল দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে মনোহরী, অফিস সরঞ্জাম ও অন্যান্য সামগ্রী ক্রয় বাবদ ২২ লাখ ৯১ হাজার, অফিস আসবাব ও সরঞ্জাম সরবরাহ না করলেও ১৫ লাখ ২৯ হাজার টাকা, অনাবাসিক ভবনের বর্জ্য সংরক্ষণাগার ও অফিস সরঞ্জাম মেরামত না করলেও ১৩ লাখ ৭৯ হাজার টাকা, আসবাবপত্র মেরামত না করলেও ১৫ লাখ টাকার বিল প্রদান করা হয়েছে।

শহরের মেসার্স জননী ক্লথ স্টোর, মেসার্স রায় ট্রেডার্স ও মেসার্স অনিক ট্রেডার্স নামের তিনটি প্রতিষ্ঠানকে বিভিন্ন সময়ে ব্যবহার্য দ্রব্যাদি ক্রয়ের নামে প্রায় ২০ লাখ টাকা বিল দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে পাপোশ আছে ১২ লাখ টাকার।

স্টোরকিপার সুলেমান আহমদ ও মোঃ ছমিরুল ইসলাম কোনো অনিয়মের সঙ্গে জড়িত নন বলে দাবি করেছেন।

সুলেমান আরও বলেন, অডিট আপত্তি সব অফিসেই আছে। নথিপত্র যাচাই করে এসবের জবাব দেব আমরা। এখানে কোনো অনিয়ম হয়নি। মো. আনিসুর রহমানও বলেছেন তিনি কোনো অনিয়ম করেননি।

তিনি বলেন, আমরা প্রতিটি আপত্তির জবাব দেব। শনিবার হাসপাতালের বর্তমান তত্ত্বাবধায়ক মো. মাহবুবুর রহমান বলেছেন, আমি চলতি বছরের ১৩ মার্চ দায়িত্ব নিয়েছি। কোনো অনিয়ম-দুর্নীতি সহ্য করব না বলে হাসপাতালে দায়িত্বরত সবাইকে জানানোর পর উলটো আমাকেও নানাভাবে হয়রানি ও হুমকি দেওয়া হচ্ছে। আমি স্বাস্থ্য উপদেষ্টা, স্বাস্থ্য বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করে দুদকের তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা নিতে প্রতিবেদন পাঠাব।

ট্যাগস :

সুনামগঞ্জ জেলা হাসপাতাল এক বছরে লোপাট ১৮ কোটি টাকা

আপডেট সময় : ০২:১৯:৪৩ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৫ অগাস্ট ২০২৪

সুনামগঞ্জ জেলা হাসপাতাল এক বছরে লোপাট ১৮ কোটি টাকা

বিশেষ প্রতিনিধিঃ

সুনামগঞ্জ জেলা সদর হাসপাতালে এক বছরেই লোপাট করা হয়েছে সরকারি বরাদ্দের প্রায় ১৮ কোটি টাকা। অডিট প্রতিবেদনে এই দুর্নীতির চিত্র ফুটে উঠেছে। হাসপাতালে এমন সাগরচুরির ঘটনায় দ্রুত ব্যবস্থা নিতে অন্তর্বর্তী সরকারের স্বাস্থ্য উপদেষ্টার কাছে স্মারকলিপি দিয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদস্যরা। ব্যাপক দুর্নীতির বিষয়টি জানাজানির পর জেলার ছাত্র-জনতা ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে।

জানা যায়, সুনামগঞ্জ জেলা সদর হাসপাতালে একটি অটোমেশন যন্ত্র কেনা হয়েছিল ২০১৮ সালে। এটি বাক্সবন্দি অবস্থায় আছে। কিন্তু এই মেশিনের জন্য রাসায়নিক দ্রব্য ক্রয় দেখিয়ে ২০২২-২৩ অর্থবছরে চার কোটি ৭৫ লাখ ৩৫ হাজার টাকা বিল তোলা হয়েছে। এছাড়া হাসপাতালের ১৯টি কম্পিউটারের ক্ষুদ্র যন্ত্রাংশ ক্রয় ও মেরামত দেখিয়ে প্রায় ২৩ লাখ, অনুষ্ঠান, উৎসব, সভা-সেমিনারের ব্যয় ২৪ লাখ, আপ্যায়ন ২১ লাখ, পাপোশ কেনায় ১৪ লাখ, সিল ও স্ট্যাম্প প্যাড কেনায় ১১ লাখ টাকা বিল তোলা হয়েছে। এমন অনিয়ম-দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বুধবার অন্তর্বর্তী সরকারের স্বাস্থ্য উপদেষ্টার কাছে স্মারকলিপি দিয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদস্যরা।

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রাশেদ ইকবাল চৌধুরীর কাছে এই স্মারকলিপি হস্তান্তর করেন তারা। স্মারকলিপিতে বলা হয়, জেলা সদর হাসপাতালে শুধু ২০২২-২৩ অর্থবছরেই প্রায় ১৮ কোটি টাকার অনিয়ম ও দুর্নীতি হয়েছে। ওই অর্থবছরের অডিট প্রতিবেদনে বিষয়টি উঠে এসেছে। এই অনিয়ম-দুর্নীতির সঙ্গে হাসপাতালের স্টোরকিপার সুলেমান আহমদ, হিসাবরক্ষক মো. ছমিরুল ইসলাম ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক মো. আনিসুর রহমান জড়িত বলে জানান হাসপাতালের একাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী।

স্মারকলিপিতে উল্লেখ করা হয়, ২০২২-২৩ অর্থবছরে হাসপাতালে কেনাকাটাসহ ৩২টি খাতে অর্থ ব্যয়ে ১৮ কোটি টাকার অডিট আপত্তি পড়েছে। হাসপাতালে এই সময়ে তত্ত্বাবধায়ক ছিলেন মো. আনিসুর রহমান। বর্তমানে তিনি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সিলেট বিভাগীয় পরিচালক। সুলেমান ও ছমিরুলকে এখান থেকে জুলাইয়ে বদলি করা হলেও মো. আনিসুর রহমান এক আদেশে আবার তাদের এখানে বহাল করেন। তবে হাসপাতালে তাদের হাজিরা ও বেতন এখন বন্ধ রয়েছে।

স্মারকলিপিতে অডিট প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে আরও বলা হয়েছে, ওষুধ, যন্ত্রপাতি, কেমিকেল ও লিলেন সামগ্রী ক্রয়ে সর্বনিু দরদাতাকে কাজ দেওয়া হয়নি। এতে চারটি কেনাকাটায় সরকারের দুই কোটি ৫৬ লাখ ৯১ হাজার ৯৬৯ টাকার আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। সরকারের এসেনসিয়াল ড্রাগস কোম্পানি লিমিটেড (ইউসিএল) থেকে ওষুধ না কেনায় সরকারের ৪৫ লাখ ৬০ হাজার টাকা ক্ষতি হয়েছে। প্রয়োজন না থাকা সত্ত্বেও ২২ লাখ টাকার সার্জিকেল সামগ্রী কেনা হয়েছে।

পর্যাপ্ত আউটসোর্সিং জনবল থাকা সত্ত্বেও মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন ছাড়া অনিয়মিত শ্রমিকদের মজুরি দেখিয়ে ৮১ লাখ ৭০ হাজার টাকা প্রদান করা হয়েছে। মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা লঙ্ঘন করে অধিকহারে ইউসিএল বহির্ভূত ওষুধ ক্রয় দেখিয়ে সরকারের এক কোটি ৩৪ লাখ ৮৮ হাজার টাকা ক্ষতি করা হয়েছে। আসবাবপত্র ও সরঞ্জামাদি সরবরাহ না করা সত্ত্বেও ঠিকাদারকে ১৫ লাখ ২৯ হাজার ৭৫০ টাকা বিল প্রদান, মন্ত্রণালয়ের প্রশাসনিক অনুমোদন ও ব্যয় মঞ্জুরি ব্যতীত ৯৭ লাখ ৭১ হাজার ১২৭ টাকা বকেয়া বিল প্রদান, চাহিদা ছাড়া প্রায় ৪৩ লাখ টাকার প্রয়োজনের অতিরিক্ত লিলেন সামগ্রী ক্রয় করে বাক্সবন্দি রাখা হয়েছে।

প্রধান স্টোর থেকে বিভিন্ন ওয়ার্ডে বিতরণকৃত লিলেন সামগ্রী গ্রহণের পক্ষে কোনো প্রমাণ উপস্থাপন না করতে পারায় সরকারের ক্ষতি ৪৬ লাখ ৯৯ হাজার ৮৭৫ টাকা। বাস্তবে বর্জ্য সংরক্ষণাগার ও অফিস সরঞ্জাম মেরামত না করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে ১৩ লাখ টাকা বিল দেওয়া হয়েছে। হাসপাতালের কেবিনে ভর্তিকৃত রোগীর কেবিন ভাড়া থেকে প্রাপ্ত প্রায় ২১ লাখ টাকা সরকারি কোষাগারে জমা দেওয়া হয়নি।

সর্বনিু দরদাতাকে কাজ না দিয়ে কর্মকর্তারা যোগসাজশে ঢাকার ফরচুন করপোরেশন নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে উচ্চদরে কাজ দিয়েছেন। এতে চারটি কেনাকাটায় সরকারের দুই কোটি ৫৬ লাখ ৯১ হাজার ৯৬৯ টাকার আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, হাসপাতালের চিকিৎসক, নার্স ও অফিশিয়াল প্রয়োজনে এ সময়ে তিন হাজার ৭২০টি সিল ও স্ট্যাম্প ক্রয় করা হয়েছে। এতে ব্যয় হয়েছে ১১ লাখ ৫০ হাজার টাকা। সুনামগঞ্জ শহরের শফিক আর্ট, শ্যামল ফটোস্ট্যাট ও পিনাক আর্টের নামে বিল ভাউচার করা হলেও এসব প্রতিষ্ঠান থেকে বলা হয়েছে তারা এসব সরবরাহ করেনি।

মেসার্স সামিহা এন্টারপ্রাইজ নামে সুনামগঞ্জের একটি প্রতিষ্ঠানকে বিভিন্ন সময়ে প্রায় ৬৭ লাখ টাকার বিল দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে মনোহরী, অফিস সরঞ্জাম ও অন্যান্য সামগ্রী ক্রয় বাবদ ২২ লাখ ৯১ হাজার, অফিস আসবাব ও সরঞ্জাম সরবরাহ না করলেও ১৫ লাখ ২৯ হাজার টাকা, অনাবাসিক ভবনের বর্জ্য সংরক্ষণাগার ও অফিস সরঞ্জাম মেরামত না করলেও ১৩ লাখ ৭৯ হাজার টাকা, আসবাবপত্র মেরামত না করলেও ১৫ লাখ টাকার বিল প্রদান করা হয়েছে।

শহরের মেসার্স জননী ক্লথ স্টোর, মেসার্স রায় ট্রেডার্স ও মেসার্স অনিক ট্রেডার্স নামের তিনটি প্রতিষ্ঠানকে বিভিন্ন সময়ে ব্যবহার্য দ্রব্যাদি ক্রয়ের নামে প্রায় ২০ লাখ টাকা বিল দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে পাপোশ আছে ১২ লাখ টাকার।

স্টোরকিপার সুলেমান আহমদ ও মোঃ ছমিরুল ইসলাম কোনো অনিয়মের সঙ্গে জড়িত নন বলে দাবি করেছেন।

সুলেমান আরও বলেন, অডিট আপত্তি সব অফিসেই আছে। নথিপত্র যাচাই করে এসবের জবাব দেব আমরা। এখানে কোনো অনিয়ম হয়নি। মো. আনিসুর রহমানও বলেছেন তিনি কোনো অনিয়ম করেননি।

তিনি বলেন, আমরা প্রতিটি আপত্তির জবাব দেব। শনিবার হাসপাতালের বর্তমান তত্ত্বাবধায়ক মো. মাহবুবুর রহমান বলেছেন, আমি চলতি বছরের ১৩ মার্চ দায়িত্ব নিয়েছি। কোনো অনিয়ম-দুর্নীতি সহ্য করব না বলে হাসপাতালে দায়িত্বরত সবাইকে জানানোর পর উলটো আমাকেও নানাভাবে হয়রানি ও হুমকি দেওয়া হচ্ছে। আমি স্বাস্থ্য উপদেষ্টা, স্বাস্থ্য বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করে দুদকের তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা নিতে প্রতিবেদন পাঠাব।