মানুষের জন্য মনোনীত একমাত্র জীবন ব্যবস্থার নাম হলো ইসলাম। ইসলামি জীবন পদ্ধতি জানার অন্যতম মাধ্যম কুরআন এবং সুন্নাহ। সে কারণে মানুষের প্রতিটি কথা ও কাজই কুরআন-সুন্নাহ মোতাবেক পালিত হবে। কথায় কথায় হাদিসের উদ্ধৃতি দিতে গিয়ে এমন কোনো কথা বা কাজ করা যাবে না যা হাদিসে নেই। এমনটি জঘন্য অপরাধ। তা বিরত থাকতে বলেছেন স্বয়ং বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।
অনেকেই নিজেদের পক্ষে কথায় কথায় হাদিসের উদ্ধৃতি দিয়ে থাকেন। হাদিসের এসব উদ্ধৃতি দেয়ার ব্যাপারে সতর্ক করেছেন স্বয়ং বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। যেন তাঁর নামে কোনো মিথ্যা ছড়িয়ে না পড়ে। কেননা হাদিসের নামে মিথ্যা বলায় রয়েছে কঠোর শাস্তি।
একটি বিষয় লক্ষণীয়
কুরআন সুন্নাহ’র সঠিক উদ্ধৃতি দেয়া ভালো ও কল্যাণের। ইসলামের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলেম-ওলামাসহ অনেকেই পক্ষ-বিপক্ষ মতামত তুলে ধরতে নিজেদের মধ্যে কুরআন-সুন্নাহর উদ্ধৃতি দিয়ে থাকেন। কিন্তু নিজেদের মতের পক্ষে দলিল বা যুক্তি দাঁড় করাতে অনেকেই সঠিক পথ থেকে দূরে সরে যান। এসব ক্ষেত্রে মূল বিষয় থেকে সরে গিয়ে খেয়াল-খুশি মতো যে কোনো কথাকে ‘হাদিস’ বলে বক্তব্য তুলে ধরার চেষ্টা করা দুঃসাহিক অপচেষ্টার শামিল।
হাদিস বর্ণনার ক্ষেত্রে সতর্কতা
হজরত আবদুল্লাহ ইবনে জুবায়ের রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, আমি আমার বাবা হজরত জুবায়ের রাদিয়াল্লাহু আনহুকে বললাম; আমি তো আপনাকে অন্যান্য সাহাবায়ে কেরামের মতো আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের হাদিস বর্ণনা করতে শুনি না। তিনি বললেন, ‘জেনে রাখ! আমি তাঁর (রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে দূরে থাকিনি, কিন্তু আমি তাঁকে বলতে শুনেছি- ‘যে (হাদিসের উদ্ধৃতি দিতে গিয়ে) আমার উপর মিথ্যারোপ করবে; সে যেন জাহান্নামে তাঁর ঠিকানা বানিয়ে নেবে (এজন্য হাদীস বর্ণনা করি না)।’ (বুখারি, মুসলিম)
– হজরত আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, এ কথাটি তোমাদের কাছে বহু হাদিস বর্ণনা করতে গিয়ে প্রতিবন্ধকতা হয়ে দাঁড়ায় যে- নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে ইচ্ছাকৃতভাবে আমার উপর মিথ্যারোপ করে; সে যেন জাহান্নামে তার ঠিকানা বানিয়ে নেয়।’ (বুখারি)
– হজরত সালামা ইবনে আকওয়া রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন আমি নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি, ‘যে ব্যক্তি আমার উপর এমন কথা আরোপ করে যা আমি বলিনি, সে যেন জাহান্নামে তার ঠিকানা বানিয়ে নেয়।’ (বুখারি)
– হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘আমার নামে তোমরা নাম রেখো; কিন্তু আমার উপনামে (কুনিয়াতে) তোমরা নাম রেখো না। আর যে আমাকে স্বপ্নে দেখে সে ঠিক আমাকেই দেখে। কারণ শয়তান আমার আকৃতির ন্যায় আকৃতি ধারণ করতে পারে না। আর যে ইচ্ছা করে আমার উপর মিথ্যারোপ করে, সে যেন জাহান্নামকে তার বাসস্থান বানিয়ে নেয়।’ (বুখারি, মুসলিম)
– হজরত আলি রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘তোমরা আমার উপর মিথ্যারোপ করো না। কারণ আমার উপর যে মিথ্যারোপ করবে সে জাহান্নামে যাবে।’ (বুখারি, মুসলিম)
মনে রাখতে হবে
কুরআন-সুন্নাহর আলোকে জীবন গঠন করাই ইসলামের নির্দেশনা। সে আলোকে জীবন গঠন করতে দিকনির্দেশনা দিয়েছেন প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি আলাইহি ওয়া সাল্লাম। তিনি বলেছেন-
‘আমি তোমাদের মাঝে দুটি জিনিস রেখে যাচ্ছি, যারা এ দুটি জিনিস আঁকড়িয়ে ধরবে; তারা কখনও গোমরাহ বা পথভ্রষ্ট হবেন না। তার একটি হলো- কিতাবুল্লাহ বা আল্লাহর কিতাব আর দ্বিতীয়টি হলো- সুন্নাতি বা আমার সুন্নাহ।’
সুতরাং মুমিন মুসলমানের উচিত, সঠিক ও সহিহ হাদিসের আলোকে জীবন গড়া। নিজের পক্ষে শক্তি ও সমর্থন যোগাতে অন্যায় ও ভুল কথাকে হাদিসে বলে প্রচার না করা। কেননা হাদিস নয়, এমন কথাকে হাদিস বলে প্রচার করার শাস্তি উল্লেখিত হাদিসগুলোতে বর্ণিত হয়েছে। যার শেষ পরিণতি জাহান্নাম।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে নিজেদের দল বা ব্যক্তি স্বার্থে অযথা কথায় কথায় হাদিসের উদ্ধৃতি দেয়া থেকে দূরে থাকার তাওফিক দান করুন। সঠিক কথা ও কাজে প্রকৃত হাদিসের উদ্ধৃতি দেয়ার মাধ্যমে ইসলামি জিন্দেগি যাপন করার তাওফিক দান করুন। আমিন।