মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত চার মার্কিন নাগরিককে নিয়ে চলছে আলোচনা। মার্কিন নির্বাচনে অংশ নেওয়া এই চারজন হলেন-টেক্সাসের অস্টিন থেকে যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসে একমাত্র বাংলাদেশি প্রতিদ্বন্দ্বী ডেমোক্র্যাটিক দলের প্রার্থী ডোনা ইমাম, জর্জিয়া অঙ্গরাজ্যের স্টেট সিনেটর শেখ রহমান, নিউ হ্যাম্পশায়ার অঙ্গরাজ্যের হাউস অব রিপ্রেজেনটেটিভ আবুল বি. খান ও পেনসিলভেনিয়া অঙ্গরাজ্যের অডিটর জেনারেল পদপ্রার্থী ও সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার উপদেষ্টা ড. নীনা আহমেদ।
এর মধ্যে পেনসিলভানিয়ার অডিটর জেনারেল পদে ড. নীনা আহমেদের জয়ের সম্ভাবনা বেশ প্রবল। এর আগে এই স্টেটের রাজধানী ফিলাডেলফিয়ার ডেপুটি মেয়র এবং সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার এশিয়াবিষয়ক উপদেষ্টা ছিলেন তিনি।
নীনা আহমেদ ডেমোক্রেটিক পার্টির হয়ে ভোটে লড়ছেন। গত ২ জুন হওয়া প্রাইমারিতে তিনি তার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর থেকে ৮০ হাজার ১৩৭ ভোট বেশি পেয়েছিলেন। তিনি পেয়েছিলেন চার লাখ ৭৭ হাজার ৫২৬ ভোট। সেই অর্থে প্রবাসী বাংলাদেশির সংখ্যা সেখানে অত নয়, তিনি সব ধরণের মানুষের মধ্যে সাড়া জাগাতে পেরেছেন বলে মনে করেন তার জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টা ডা. ইবরুল চৌধুরী। তিনি বলেন, স্টেটের ইতিহাসে এই প্রথম কোনো অশ্বেতাঙ্গ মুসলিম নারী ওই পদে বিজয়ী হতে যাচ্ছেন।
ড. নীনা জয়ী হলে তিনিই হবেন পেনসিলভানিয়ায় প্রতিনিধিত্বকারী সর্বোচ্চ পদে থাকা কোনো বাংলাদেশি-আমেরিকান। ফলে এ নিয়ে বাংলাদেশিদের মধ্যে আগ্রহ অনেক। প্রবাসী বাংলাদেশিদের অনেকে এই কভিড-১৯-এর মধ্যেও দিনরাত তার জন্য কাজ করছেন।
ড. নীনা আহমেদ গণমাধ্যমকে বলেন, বর্তমান পরিস্থিতি যদি বিবেচনা করেন, আমরা জরিপগুলোকে অতটা গুরুত্ব দিচ্ছি না। এমনভাবে কাজ করছি যেন আমরা ১০ পয়েন্ট পিছিয়ে রয়েছি; যদিও বিভিন্ন জরিপে দেখা যাচ্ছে, আমি প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর চেয়ে অনেকটা এগিয়ে। যেখানে আমি ৫১ শতাংশ, সেখানে তিনি ৪৪ শতাংশ। তবে শেষ মুহূর্তে অনেক কিছু বদলে যাওয়ার শঙ্কা থাকে। ফলে এটি ধরে রাখার জন্য কাজ করে যাচ্ছি। তবে এটি বলতে পারি, এবার ডেমোক্র্যাটদের মধ্যে জোয়ার দেখা যাচ্ছে। এটি সারা দেশের ক্ষেত্রেই। ফলে আমার নির্বাচনে যেমন আশাবাদী, তেমনি প্রেসিডেন্ট পদে জো বাইডেন ও ভাইস প্রেসিডেন্ট পদে কমলা হ্যারিস জয়ী হবেন বলে আমার বিশ্বাস।
এদিকে টেক্সাসে হঠাৎ করেই আলোকবর্তিকা হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন বাংলাদেশি-আমেরিকান ডোনা ইমাম। তিনি ইউএস জাতীয় কংগ্রেসে সেখানকার ডিস্ট্রিক্ট ৩১ থেকে হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভসের প্রার্থী হয়েছেন। রিপাবলিকান এই স্টেটে ডেমোক্র্যাট প্রার্থী হয়েও ডোনা বেশ সাড়া জাগিয়েছেন। বিজয়ী হওয়ার মতো পরিস্থিতিও তৈরি করেছেন তিনি। টেক্সাসের প্রেসিডেনশিয়াল নির্বাচনে ডেমোক্রেটিক ইলেকটর ও ডোনা ইমামের উপদেষ্টা নিশান খান গণমাধ্যমকে বলেন, ভালো জাগরণ তৈরি করেছেন ডোনা। তার জয়ের ব্যাপারে আমরা ভীষণভাবে আশাবাদী।
জর্জিয়া অঙ্গরাজ্যের স্টেট সিনেটর পদে দ্বিতীয়বারের মতো নির্বাচিত হওয়ার পথে রয়েছেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত শেখ রহমান। এবার তিনি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হতে চলেছেন। ডেমোক্রেটিক পার্টি থেকে তিনি এই নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। গত ৯ জুন হওয়া দলীয় প্রার্থী বাছাইয়ের নির্বাচনে তার বিরুদ্ধে কেউ নির্বাচনে অংশ নেয়নি। একই সঙ্গে সিনেট ডিস্ট্রিক্ট আসন-৫-এ রিপাবলিকানও কোনো প্রার্থী দেয়নি। ফলে শেখ রহমানের বিজয়ী হওয়া সময়ের ব্যাপার বলেই ধরে নেওয়া যায়। এর ফলে ৩ নভেম্বরের ভোটগ্রহণের দিন শেখ রহমানকে ভোট চাওয়ার প্রয়োজন পড়বে না। শুধু দিনটি অতিবাহিত হলেই তাকে বিজয়ী ঘোষণা করা হবে। সেই সঙ্গে ওই আসনে দ্বিতীয় মেয়াদে সিনেটর হিসেবে শপথ নেবেন তিনি।
জর্জিয়া এমনিতেই এখন রেড স্টেট হিসেবে পরিচিত। তবে এবার এই স্টেটকে সুইং বলা হচ্ছে। রিপাবলিকান এই স্টেটে অনেকটাই ভালো করছেন ডেমোক্র্যাটরা। ফলে প্রথম মেয়াদে ডেমোক্রেটিক পার্টি থেকে এখানে প্রথম কোনো বাংলাদেশি-আমেরিকান হিসেবে শেখ রহমানের সিনেটর হওয়াটা খবরের জন্ম দিয়েছিল। সেই সঙ্গে তিনিই ছিলেন এই স্টেটের প্রথম কোনো মুসলিম আইন প্রণেতা।
শেখ রহমান গণমাধ্যমকে বলেন, বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠী মিলে গড়ে ওঠা গৌরবের আমেরিকা। আমার এলাকায় অন্যান্য জাতিগোষ্ঠীর সংখ্যাই বেশি। তাদের সবার আস্থা অর্জন করতে পারাটা খুবই আনন্দের।’ তিনি বলেন, ‘দেখুন, আমাদের সবারই উচিত কাজ করে যাওয়া। বাংলাদেশি-আমেরিকান, বিশেষ করে তরুণদের বলব, অবশ্যই রাজনীতি সচেতন হতে হবে। এ দেশের রাজনীতিতে অংশ নিতে হবে।
অন্যদিকে নিউ হ্যাম্পশায়ার স্টেটের হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভস পদে রিপাবলিকান পার্টির হয়ে চূড়ান্ত মনোনয়ন পেয়েছেন আবুল বি খান। ডিস্ট্রিক্ট রকিংহাম ডিস্ট্রিক্ট ২০ অনেক দিন ধরে রিপাবলিকানদের দখলে। এর আগে পরপর তিনবার তিনি ওই আসন থেকে বিজয়ীও হয়েছেন। ফলে ধরেই নেওয়া হচ্ছে, এবারও তিনি বিজয়ী হবেন। এর আগেই আবুল খান স্টেটে গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন পদে ছিলেন।
একটা সময় ছিল যখন গোটা যুক্তরাষ্ট্রে প্রবাসী বাংলাদেশিদের সমর্থন ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রতি একচেটিয়া ছিল। তবে ইদানীং রিপাবলিকানদের প্রতি সমর্থন আগের তুলনায় বাড়ছে। ডেমোক্রেটিক পার্টির সঙ্গে সম্পর্কিত বিভিন্ন ক্লাব গড়ে তুলেছিলেন প্রবাসীরা। তাদেরই একটি নিউইয়র্কভিত্তিক নিউ আমেরিকান ডেমোক্রেটিক ক্লাব। একই ধরনের রিপাবলিকান সংগঠনও গড়ে উঠছে। নিউ ইয়র্কে গড়ে ওঠা বাংলাদেশি-আমেরিকান রিপাবলিকান অ্যালায়েন্সের কো-চেয়ারম্যান বিদ্যুৎ সরকার বলেন, ‘রাজনীতিতে সব মতের মানুষই থাকবে—এটাই স্বাভাবিক।’ সে সঙ্গে এবারের নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের বিজয়ের সম্ভাবনাই বেশি দেখছেন তিনি।