জেলা পরিষদের “ভুল” অনুধাবন: দুটি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির সংশোধন
স্টাফ রিপোর্টারঃ
সম্প্রতি খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদ এবং খাগড়াছড়ি বাজার ফান্ডের দুটি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির বৈষম্যমূলক শর্ত নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা হয়েছে। যেখানে “উপজাতীয় প্রার্থীদের অগ্রাধিকার দেওয়া হবে” বলে শর্তাবলীতে উল্লেখ ছিলো। যা ছিলো রাষ্ট্রের সর্বশেষ কোটা সংস্কার নীতির (প্রজ্ঞাপন) সাথে অসঙ্গতিপূর্ণ।
পরিস্থিতি এমন এক প্রশ্নের সামনে এসে দাঁড়িয়েছিলো যে, রাষ্ট্রীয় নির্দেশনা ছাড়া কোনো নিয়োগবিধি চালু রাখার প্রয়াস কী প্রকারান্তরে সংবিধান ও সাম্যের নীতিকে উপেক্ষা নয়?
এ বিষয়ে খাগড়াছড়ি প্রেস ক্লাবের সাংগঠনিক সম্পাদক মোঃ দিদারুল আলম রাজু তার ভেরিফাই ফেইজবুকে এক পোষ্টে বলেন, প্রতিবাদের পটভূমিতে আমরা দেখতে পাচ্ছি, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বিষয়টি অবশেষে আমলে নিয়েছে। আজ তারা বিজ্ঞপ্তিগুলোতে সংশোধনী সংযোজন করেছে। নতুন বিজ্ঞপ্তিতে আগের “উপজাতীয় প্রার্থীদের অগ্রাধিকার দেওয়া হবে” এর পরিবর্তে “কোটা সম্পর্কিত যাবতীয় বিধি-বিধান প্রতিপালন করা হবে” সংশোধনী দেওয়া হয়েছে।
এটি নিঃসন্দেহে ইতিবাচক ও আশাব্যঞ্জক একটি পদক্ষেপ। আপাতভাবে ধরে নিচ্ছি এটি রাষ্ট্রীয় কোটা সংস্কারের সিদ্ধান্তের প্রতি সম্মান। এটি নাগরিকদের মধ্যে ন্যায়ের বার্তা দেবে এবং পাহাড়ি জনপদের সকল জনগোষ্ঠীর মধ্যে আস্থা ও সমতার বাতাবরণ তৈরিতে সহায়ক হবে। তবে শর্তটা “কোটা সম্পর্কিত সরকারি সর্বশেষ বিধি-বিধান অনুসরণ করা হবে” এমন হলে আরও স্পষ্ট বার্তা দিতো। তবুও আমরা আশা রাখি, সংশোধনীর এই শর্তটিতে নতুন করে কোনো শুভঙ্করের ফাঁকি দেওয়ার প্রচেষ্টা থাকবে না। নইলে আমাদের পুনর্বার লিখতে হবে, প্রতিবাদের আওয়াজ তুলতে হবে।
আমরা প্রত্যাশা করছি, রাষ্ট্রের নীতিশৃঙ্খলা ও সমতা প্রতিষ্ঠার প্রতীক হিসেবে এই ধারা অব্যাহত রাখবেন। যেখানে মেধা, যোগ্যতা ও সংবিধান নির্ধারিত নীতির প্রতি শ্রদ্ধা থাকবে।
আবারও জেলা পরিষদ কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানাই এই ভুল অনুধাবনের জন্য। এই সংশোধনী যেনো ভবিষ্যতের জন্য একটি উদাহরণ হয়ে থাকে, সতর্ক বার্তা হিসেবেও কাজ করে। যাতে কোনো অবস্থাতেই বিধিবহির্ভূত ভাষা বা পক্ষপাতমূলক নীতির ছায়াও নিয়োগ প্রক্রিয়ায় না পড়ে।
পার্বত্য চট্টগ্রাম সম-অধিকার আন্দোলন এর সাধারণ সম্পাদক মোঃ এরশাদ উল্লাহ য়োগ তার ভেরিফাই ফেইজবুকে এক পোষ্টে লিখেছেন, নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির সংশোধন আমাদের ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের একটি তাৎপর্যপূর্ণ অর্জন, কিন্তু এই সাময়িক সংশোধন স্থায়ী সমাধান নয়। স্থায়ী সমাধান এখনো বাকি।
খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদ ও বাজার ফান্ড কর্তৃক প্রকাশিত দুটি বিতর্কিত নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির বৈষম্যমূলক শর্ত সংশোধন করে নতুন বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছে—এটি নিঃসন্দেহে আমাদের প্রতিবাদের তাৎপর্যপূর্ণ সাফল্য। আমরা জেলা পরিষদ কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানাই, অন্তত ভুল অনুধাবন স্বীকার করে তা সংশোধনের উদ্যোগ নেওয়ার জন্য। কিন্তু এটি কেবলমাত্র জনচাপের প্রতিক্রিয়ায় নেওয়া একটি অস্থায়ী পদক্ষেপ স্থায়ী সমাধান নয়।
আমরা মনে করি, এ সংশোধন কোনো অনুগ্রহ নয়, এটি ছিল তাদের সাংবিধানিক ও নৈতিক দায়িত্ব।
পার্বত্য চট্টগ্রামে দীর্ঘদিন ধরেই আমরা দেখেছি—পার্বত্য জেলা পরিষদ গঠনের পর থেকে প্রশাসনিক ক্ষমতা একচেটিয়া হাতে রেখে একটি নির্দিষ্ট গোষ্ঠীর স্বার্থে বণ্টন, নিয়োগ, সুযোগ-সুবিধা ইচ্ছেমতো বন্টন করা হয়েছে। কখনো ‘জাতিসত্তার সহানুভূতি’র আড়ালে, আবার কখনো সরাসরি রাজনৈতিক পক্ষপাতের মাধ্যমে একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রচিন্তার বিরুদ্ধাচরণ করা হয়েছে।
এই অবিচার, বৈষম্য ও বঞ্চনার বিরুদ্ধে আমরা রুখে দাঁড়িয়েছি। পার্বত্য চট্রগ্রাম সম-অধিকার আন্দোলন ইতোমধ্যে এই ইস্যুতে হাইকোর্টে একটি রিট পিটিশন দাখিল করেছে। আশা করি দু-এক দিনের মধ্যেই শুনানির তারিখ নির্ধারিত হবে এবং সেই শুনানীতে একটি সময়োপযোগী, স্পষ্ট ও নীতিনির্ধারক রায় আসবে—যা ভবিষ্যতে প্রশাসনিক ক্ষমতার অপব্যবহারে এক দৃঢ় রূদ্ধদ্বার হিসেবে কাজ করবে।
আমরা চাই না, এই সংশোধন কেবল একবারের জন্য চাপ সামাল দেওয়ার কৌশল হোক। আমরা চাই, এটি হোক একটি স্থায়ী শিক্ষা, একটি নৈতিক দৃষ্টান্ত।
এখন সময় এসেছে—পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রশাসনিক কাঠামোতে সাংবিধানিক সমতা ও রাষ্ট্রীয় নীতিমালার প্রতি অবিচল শ্রদ্ধা প্রতিষ্ঠার। পাহাড়ি-বাঙালি সকল জনগোষ্ঠীকে সমান মর্যাদা ও সুযোগ নিশ্চিত করার। রাষ্ট্রযন্ত্রকে হতে হবে পক্ষপাতহীন, ন্যায্য এবং স্বচ্ছ।
আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, কোনো ‘শর্তের খেলা’ দিয়ে সংবিধানকে পাশ কাটিয়ে রাষ্ট্রকে বিকৃত করার চেষ্টাকে আর সফল হতে দেওয়া যাবে না। আমাদের আন্দোলন চলবে যতদিন না পার্বত্য চট্রগ্রামে প্রকৃত সমঅধিকার নিশ্চিত করা।