DoinikAstha Epaper Version
ঢাকাশুক্রবার ২৭শে জুন ২০২৫
ঢাকাশুক্রবার ২৭শে জুন ২০২৫

আজকের সর্বশেষ সবখবর

বিএনপির বিপরীতে ৩ দলের সমঝোতার চেষ্টা

Astha Desk
জুন ২৭, ২০২৫ ৩:০৬ অপরাহ্ণ
Link Copied!

বিএনপির বিপরীতে ৩ দলের সমঝোতার চেষ্টা

সাজ্জাদ রায়হানঃ

আগামী সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ থাকছে না এমনটা ধরে নিয়ে রাজনীতিতে চলছে নতুন মেরূকরণের চেষ্টা। এর অংশ হিসেবে বিএনপির বাইরে বৃহত্তর নির্বাচনী সমঝোতার প্রচেষ্টা চালাচ্ছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী।

এছাড়াও আরও একটি ফরমূলা নিয়ে চলছে আলোচনা। তা হলো চরমোনাই পীরের নেতৃত্বাধীন ইসলামী আন্দোলনকে সামনে রেখে ধর্মভিত্তিক দলগুলো একটা প্ল্যাটফর্ম গঠন করবে। আর সংস্কার আলোচনায় বিএনপির বিপরীতে অবস্থান নেওয়া দলগুলো নিয়ে পৃথক মোর্চা গঠন করবে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)।

এই তিন রাজনৈতিক দল (জামাত, এনসিপি ও ইসলামী আন্দোলন) আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো জোট গঠন করবে না। কিন্তু তারা নির্বাচনে একে অন্যকে আসনভিত্তিক ছাড় দেবে।

অপর দিকে জামায়াত, এনসিপি, ইসলামী আন্দোলন, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম, খেলাফত মজলিসের দুই অংশ, এবি পার্টি এবং গণঅধিকার পরিষদের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে এমন একটি চিত্র পাওয়া গেছে।

তাদের দাবি, বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলন করা কয়েকটি দলও বৃহত্তর সমঝোতায় যুক্ত হতে আগ্রহ দেখিয়েছে। এই দলগুলোর নেতাদের ভাষ্য, প্রাথমিক এই পরিকল্পনায় সব দল একমত হয়েছে। তবে এর বাস্তবায়ন বেশ কঠিন।

এই রাজনৈতিক দলগুলো সাংবিধানিক সংস্কার প্রশ্নে আপাতত কাছাকাছি এসেছে। একে অন্যের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে।

জামায়াত, এনসিপি, ইসলামী আন্দোলন, এবি পার্টি, গণঅধিকার, গণসংহতি, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, জেএসডি, জমিয়ত, খেলাফত মজলিসের দুই ভাগসহ সংস্কারের সংলাপে অংশ নেওয়া ২৩টি দল নির্বাচনে প্রাপ্ত ভোটের অনুপাতে উচ্চকক্ষের আসন বণ্টন চায়।

সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানে নিয়োগের ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা কমানোর জন্য জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিল (এনসিসি) গঠনেরও পক্ষে দলগুলো। প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ নির্ধারণ এবং রাষ্ট্রপতি নির্বাচন পদ্ধতিতেও এই দলগুলোর অবস্থান কাছাকাছি। নির্বাচনী সমঝোতার প্রচেষ্টায় যুক্ত দলগুলোর নেতাদের মতে, সংস্কারে বিএনপির অনড় অবস্থান বাকি দলগুলোকে আরও কাছাকাছি আনছে।

মৌলিক সংস্কার, সংখ্যানুপাতিক নির্বাচনের দাবিতে আগামীকাল ২৮ জুন রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মহাসমাবেশ করবে ইসলামী আন্দোলন। এতে জামায়াত, এনসিপিসহ সংখ্যানুপাতিক নির্বাচনের দাবি করা দলগুলোকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। বিএনপিকে এখনও এই সমাবেশে দাওয়াত করা হয়নি।

এবিষয়ে ইসলামী আন্দোলনের মহাসচিব ইউনূস আহমদ বলেন, ইসলামী দল হতে হবে এমন কথা নেই। দেশ, ইসলাম এবং মানবতার কল্যাণে যারাই কাজ করবে, তাদের জন্য দুয়ার উন্মুক্ত। আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগ না থাকায় ভোটের রাজনীতিতে নতুন মেরূকরণ হবে।

এর ব্যাখ্যায় তিনি বলেছেন, বিএনপি মূলত আওয়ামীবিরোধী মনোভাবের ভোটারদের প্ল্যাটফর্ম। নির্বাচনে নৌকার বিরোধিতা করে বারবার ধানের শীষে ভোট দিয়েছে তারা। এবারে নির্বাচনে নৌকা না থাকায় আওয়ামীবিরোধী ভোট ধানের শীষ একা পাবে না। নানা ভাগে ভাগ হবে।

তিনি বলেন, নির্বাচনে নৌকা প্রতীক থাকলে আওয়ামী লীগকে ঠেকাতে অভ্যুত্থানে অংশ নেওয়া দলগুলো বিএনপির নেতৃত্ব মেনে চলতে বাধ্য হতো। আওয়ামী লীগ ফিরলে আবার নির্যাতনের শিকার হতে হবে এ ভয়ে দলগুলো বিএনপি যে কয়টি আসন দিত, তা মেনে নিত। আওয়ামী লীগ নির্বাচন থেকে ছিটকে যাওয়ায় এ পরিস্থিতি এখন আর নেই।

গত ২০ জুন দলটির সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার ঘোষণা দেন,
আওয়ামী লীগ না থাকায় ভোটের মাঠে নিজেদের দ্বিতীয় বৃহত্তম দল বলছে জামায়াত। ইসলামী দলগুলোর মধ্যে এক ধরনের সমঝোতা হয়েছে। ইসলামী দলগুলো আগামী নির্বাচনে একসঙ্গে থাকবে।

একজন জ্যেষ্ঠ নেতা বলেন, আদর্শিক কারণে জোট গঠন কঠিন কাজ। কওমি ঘরানার অনেক দলের রাজনৈতিক ভিত্তিই জামায়াত বিরোধিতা। তারা চাইলেও জামায়াতের সঙ্গে জোট করবে না। আবার জামায়াতের পক্ষে বাম ঘরানার দলের সঙ্গে জোট করা সম্ভব না। তাই বৃহত্তর সমঝোতার প্রচেষ্টাই বাস্তবসম্মত।

আরো পড়ুন :  আটকের পর ডিবি হেফাজতে নেয়া হয়েছে সাবেক সিইসি কেএম নুরুল হুদাকে

জামায়াতের নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মোঃ তাহের বলেন, নির্বাচনের তফশিল ঘোষণা হওয়ার পর পরিস্থিতি বলবে জোট হবে, নাকি সমঝোতা হবে। জামায়াত বৃহত্তর নির্বাচনী সমঝোতার ধারণার বিরোধী নয়। ভোটের হাওয়া বইতে শুরু করলে সমঝোতার বিষয়টি পরিষ্কার হবে।

তিনি বলেন, এখন মূল লক্ষ্য মৌলিক সংস্কার এবং নির্বাচনের জন্য সবার সমান সুযোগ (লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড) সৃষ্টি করা। যেসব দল মৌলিক সংস্কার, সুষ্ঠু নির্বাচন চায় তাদের সঙ্গে জামায়াতের সহযোগিতাপূর্ণ সম্পর্ক আছে।

জামায়াত ইতোমধ্যে ২৯৬ আসনে প্রার্থী ঘোষণা করেছে। তার মধ্যে রংপুর বিভাগের ৩৩, খুলনা বিভাগের ৩৬, রাজশাহী বিভাগের ১২, দক্ষিণ চট্টগ্রামের ৮টিসহ সিলেট, কুমিল্লা, পিরোজপুরসহ বিভিন্ন জেলায় শ’খানেক আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার সক্ষমতা রয়েছে জামায়াতের।

গত তিনটি নির্বাচন বিতর্কিত হওয়ায় মোট ভোটারের প্রায় অর্ধেকই জীবনে প্রথমবারের মতো প্রকৃত অর্থে ভোট দেবেন। অন্য দলগুলোকে টিকতে হলে প্রতিদ্বন্দ্বিতার পরিবেশ তৈরি করতে হবে। কোনো দলের পক্ষে একা তা সম্ভব নয়। এ কারণেই বৃহত্তর সমঝোতার প্রচেষ্টা করা হচ্ছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।

চরমোনাই পীরের দলের সঙ্গে মামুনুল হকের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, জমিয়ত, খেলাফত, ইসলামী ঐক্যজোট এবং নেজামে ইসলাম পার্টি গত এপ্রিল থেকে সমঝোতার লক্ষ্যে আলাপ-আলোচনা করছে। লিয়াজোঁ কমিটিও গঠন করেছে। কওমি মাদ্রাসাভিত্তিক সংগঠন হেফাজতে ইসলামঘনিষ্ঠ এই দলগুলো বলছে, তারা ইসলামপন্থিদের ভোট আগামী নির্বাচনে এক বাক্সে আনতে চায়।

গত ২০ জানুয়ারি বরিশালে ইসলামী আন্দোলনের আমির মুফতি সৈয়দ রেজাউল করীমের সঙ্গে দেখা করে ইসলামপন্থিদের ভোট এক বাক্সে আনার কথা বলেন জামায়াত আমির ডা. শফিকুর রহমান। এর পরের সপ্তাহেই ইসলামী আন্দোলনের কার্যালয়ে গিয়ে ১০ দফায় সই করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

তবে চরমোনাই পীরের দল, কয়েক মাস ধরেই নানা অভিযোগ তুলে বিএনপির সমালোচনা করছে।

বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের যুগ্ম মহাসচিব আতাউল্লাহ আমীন বলেন, ইসলামপন্থি দলগুলো ভোট এক বাক্সে আনতে একমত হয়েছে। একক ইশতেহার বা কর্মসূচি হয়তো হবে না, শুধু নির্বাচনী সমঝোতা হবে।

নবগঠিত এনসিপির সঙ্গে এবি পার্টিসহ কয়েকটি দলের সমঝোতা হতে পারে। বিএনপি ইতোমধ্যে গণঅধিকারের সভাপতি নুরুল হক নুর এবং সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খানকে আসন ছাড়ার ইঙ্গিত দিয়েছে। তাদের সহায়তা করার জন্য স্থানীয় বিএনপিকে চিঠি দিয়েছে।

জেএসপির আ স ম আবদুর রহমার, নাগরিক ঐক্যের মাহমুদুর মান্না এবং গণসংহতির জুনায়েদ সাকিকে কর্মসূচি পালনে সহায়তার জন্য বিএনপি চিঠি দিয়েছে স্থানীয় নেতাদের।
এ চিঠিই এখন তাদের বিপদের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। মনোনয়নপ্রত্যাশী বিএনপির স্থানীয় নেতারা শত্রু ভাবছেন চিঠি নিয়ে আসা যুগপৎ আন্দোলনের সমমনা দলগুলোর নেতাদের। পটুয়াখালীতে ইতোমধ্যে আক্রান্ত হয়েছেন নুরুল হক নুর।

সমমনা হয়েও গণঅধিকার, গণসংহতি, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, জেএসডি, নাগরিক ঐক্যসহ কয়েকটি দল মৌলিক সংস্কারে বিএনপির বিপরীতে অবস্থান নিয়েছে। এতে দলগুলোর সঙ্গে এনসিপি, এবি পার্টিসহ অন্যরা কাছাকাছি এসেছে।

জামায়াত থেকে বেরিয়ে আসা নেতারা এবি পার্টি গঠন করেছে। এ দলটি যে বলয়ে থাকবে, তাদের সঙ্গে সমঝোতা করা কঠিন হবে জামায়াতের জন্য।

এনসিপির সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেন, সংস্কারের জন্য সমভাবাপন্ন রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সমঝোতার কথা চলছে। নির্বাচনী সমঝোতা নিয়ে ভাবা হবে সংস্কারের পর।

বিনা অনুমতিতে এই সাইটের সংবাদ, আলোকচিত্র অডিও ও ভিডিও ব্যবহার করা বেআইনি।
সেহরির শেষ সময় - ভোর ৩:৪২
ইফতার শুরু - সন্ধ্যা ১৮:৫৩
  • ফজর
  • যোহর
  • আছর
  • মাগরিব
  • এশা
  • সূর্যোদয়
  • ৩:৪৭
  • ১২:০৪
  • ১৬:৪১
  • ১৮:৫৩
  • ২০:২০
  • ৫:১২