দেশের ছোট শহরগুলোর মধ্যে কিশোরগঞ্জ একটি ছোট শহর। এই শহরবাসীর নিত্যদিনের যাতাযাতের একমাত্র বাহন অটোরিকশা। নিরাপদ ও পরিবেশবান্ধব এই রিকশাগুলো আজ তাদের গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিশোরগঞ্জ জেলায় লাইসেন্সবিহীন ব্যাটারিচালিত তিন চাকার এ বাহনের সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলছে।
শহরেই প্রতিদিন চলাচল করছে ৩-৪ হাজার অটোরিকশা। যেখানে কিশোরগঞ্জ পৌরসভার অনুমোদন আছে মাত্র ৬৫০ অটোরিকাশার। প্রয়োজনের তুলনায় বেশি অটোরিকশা চলাচল করার ফলে যানজটে ভোগান্তির শিকার হচ্ছে শহরের ভেতরের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী, হাসপাতালের রোগী যানবাহনের যাত্রী, চালক ও স্থানীয় ব্যবসায়ীরা।
এদিকে জেলা শহরের একরামপুর মোড়। একরামপুরের তিন রাস্তার এই মোড়কে জেলা শহরের ট্রাফিক ব্যবস্থার ‘হৃদযন্ত্র’ বলা। জেলার পূর্বাঞ্চলের কয়েকটি উপজেলার- করিমগঞ্জ, ইটনা, মিঠামইনসহ হাওরাঞ্চলের বিপুলসংখ্যক যানবাহন রাজধানী ঢাকাসহ অন্যান্য এলাকায় যেতে হলে পার হতে হয় মোড়টি। বিপরীত দিকের বহু যানবাহন জেলার পূর্বাঞ্চলে যেতে হলেও একরামপুর মোড় ধরেই যেতে হয়। এই মোড় হয়েই যাতায়াত করতে হয় শহরের দক্ষিণ-পূর্ব কোণের রেলস্টেশন, শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ সদর উপজেলার দক্ষিণাংশ, নিকলী ও কটিয়াদী উপজেলারও অনেক এলাকায়। আর দিনের বেশির ভাগ সময় এ মোড় থাকে অটোরিকশার দখলে। এতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজটে বসে থেকে নাকাল হতে হয় যাত্রীদের। অনেক সময় পথচারীদের হেঁটে চলারও উপায় থাকে না।
একরামপুর এলাকায় মঙ্গলবার বিকেল ৩টার দিকে এ্যাম্বুলেন্সে রোগী নিয়ে যানজটে আটকে ছিলেন মিজান মিয়া। তিনি করিমগঞ্জ থেকে তার বৃদ্ধ বাবাকে শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসার পথে একরামপুর মোড়ের যানজটে পড়েন। মিজানের ভাষ্য, একরামপুর থেকে হাসপাতালে যেতে ৫-৭ মিনিটের বেশি লাগার কথা নয়। কিন্তু যানজটের কারণে প্রায় ঘন্টাখানেক সময় ব্যয় হচ্ছে।
শাহীন আলম নামে একজন অটোচালক জানান, যানজটের কারণে তাদের আয়ও কমে যাচ্ছে। যে গন্তব্যে আগে আধা ঘণ্টায় তিনবার যাতায়াত করতে পারতেন, সেখানে এখন একবার যেতেই আধা ঘণ্টা লেগে যায়।
শহরের মনিপুরঘাট এলাকার বাসিন্দা রাকিবুল ইসলাম বলেন, অবৈধ অটোরিকশার কারণে যানজট বাড়ছে। এগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলে শহরের যানজট কিছুটা হলেও কমানো সম্ভব।
কিশোরগঞ্জ জেলায় নবনিযুক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হাছান চৌধুরী বলেন, কিশোরগঞ্জ শহরের অধিকাংশ রাস্তা সরু হওয়ায় যানজটের তীব্রতা বেড়েছে। আগে যে অটোরিকশাগুলো শহরে ঢুকতে দেওয়া হতোনা সেগুলো এখন ঢুকে যানজট বাড়াচ্ছে। আমাদের ট্রাফিক বিভাগের সদস্যরা দিনরাত চেষ্টা করে যাচ্ছেন। তবে ইজিবাইকের সংখ্যা অনেক বেশি হওয়ায় এবং অদক্ষ চালকের কারণে যানজট বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত চালকরা ইজিবাইক চালালে যানজট কম থাকতো। আমি লন্ডনের অধিকাংশ রাস্তা দেখেছি সরু। তাদের ট্রাফিক ব্যবস্থা খুবই চমৎকার। আমি যেহেতু আগে ট্রাফিকে কাজ করেছি সেহেতু আমরাও কিশোরগঞ্জ শহরকে লন্ডনের মতো যানজটমুক্ত শহর হিসেবে উপহার দিতে চাই।