DoinikAstha Epaper Version
ঢাকাশুক্রবার ৩রা মে ২০২৪
ঢাকাশুক্রবার ৩রা মে ২০২৪

আজকের সর্বশেষ সবখবর

মহিউদ্দিনের মা মনে করতে পারছেন না ছেলে তার ফাঁসির আসামী

মামুনুর রশীদ ফরিদপুর প্রতিনিধি
জুলাই ২৫, ২০২৩ ১১:০৯ পূর্বাহ্ণ
Link Copied!

আইনের উর্ধে কেউ নয়! অপরাধ করলে আইনের ধারায় শাস্তি হয়। কারন অন্ধত্ব সাদৃশ্যে কাল কাপড়ে চোখবাঁধা হাতের দারিপাল্লার আইন নিরপেক্ষ বিধায় চাঞ্চল্যকর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. তাহের আহমেদ হত্যা মামলার চার নম্বর আসামী ড. মহিউদ্দিন ফাঁসির দণ্ডাদেশপ্রাপ্ত আসামী।

২০০৬ সালের ১লা ফেব্রুয়ারি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সংঘটিত ওই হত্যা মামলায় গত ১৭ বছর ধরে তিনি জেল হাজতে অবস্থান করলেও ড. মহিউদ্দিনের মা সেতারা বেগম মনে করতে পারছেন না তার সন্তান কোথায় আছেন! তিনি বলতেও পারছেন নয় তার ছেলের ফাঁসির রায় হয়েছে এবং আসামী হয়ে জেলখানায়। যে কোন সময়ে যে কোন দিন তার ছেলেকে ফাঁসির কাষ্ঠে ঝুলে পড়তে হচ্ছে। গত ১৭ বছর ধরে দেখা নেই মা ও ছেলের। মা সেতারা বেগমের বয়স ৯০ ছুই ছুই। শারীরিক ও মানসিক শক্তির পাশাপাশি চরম আত্মভোলা হয়ে গ্রামের বাড়িতে কোনভাবে পার করছেন নিজের জীবন। তিনি শুধু জানেন তার আদরের ছেলে অভিমান করে বাড়িতে আসছে না। দিনের পর দিন বড় ছেলের জন্য অপেক্ষায় দুচোখের পানি শুকিয়ে ফেলেছেন অন্ধত্বের করিডোরে থাকা মিয়া মোহাম্মদ মহিউদ্দিনের বিধবা মা সেতারা বেগম। শুধু তাই নয় তিনি কানেও কম শুনতে পান।

বাড়িতে কেউ গেলে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকেন। কারো সাথে তেমন কথা বলেন না। শুধু দুটি হাত উচিয়ে আল্লাহর দরবারে মঙ্গল কামনা করেন  ছেলের জন্য। শুধু পরিবারের লোকজন জানেন আইনের সকল পথ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় যে কোন সময় কান্নার রোল জেগে উঠবে ড. মহিউদ্দিন পরিবারে।

সরজমিনে ড. মহিউদ্দিনের গ্রামের বাড়ি ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলার তুজারপুর ইউনিয়নের জান্দি গ্রামে গিয়ে দেখা যায় এক ভিন্ন চিত্র। স্বজনদের ও গ্রামের সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা হয়। কথা হয় ড. মিয়া মোঃ মহিউদ্দিনের বাল্যবেলার বন্ধু মহলের বেশ কয়েকজনের সাথে। গ্রামের মানুষ তাকে তিনি সূর্য মিয়া হিসেবেপরিচিত ছিলেন। তাদের অনেকের ভাষ্যমতে সূর্য মিয়া অত্যান্ত বিনয়ী ও ভদ্র এবং ছেলে বেলা থেকেই মেধাবী শিক্ষার্থী ছিলেন। উপজেলা শহর থেকে কয়েক কিমি গ্রামের মেঠোপথ পেড়িয়ে ড. মিয়া মোঃ মহিউদ্দিন ওরফে সূর্য মিয়ার বাড়ি। ইটের ওয়াল করা টিন সেঁটের সুনসান নীরবতার একটি বাড়ি। পিতা মৃত আব্দুল মান্নান মিয়া। খুলনা জুট মিলে কর্মরত ছিলেন। তিন ভাই ও দুই বোনের মধ্যে ড. মহিউদ্দিন মা সেতারা বেগমের বড় সন্তান। দুই মেয়ের বিয়ে হওয়ায় পরের বাড়িতে অবস্থান করছেন। সেজ ছেলে বাচ্চু সাইপ্রাসে। মেজ ছেলে আরজু ব্যবসা করার সুবাধে মাকে নিয়ে গ্রামের বাড়িতে থাকেন। তিনিই বিধবা মায়ের দেখভাল করেন।

বড় ভাই প্রসঙ্গে ড.মহিউদ্দিনের ছোট ভাই আরজু মিয়া জানান, ১৯৮১ সালে তার ভাই  ড. মিয়া মহিউদ্দিন ভাঙ্গা সরকারি কেএম কলেজ থেকে ইন্টারমিডিমেট পাস করেন। ছাত্র জীবনে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে অতপ্রতভাবে জড়িত ছিলেন। ভাঙ্গায় কলেজের গণ্ডি শেষ করে তিনি রাজশাহী চলে যান। অতপর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভূতত্ত্ব ও খনি বিদ্যা নিয়ে পড়ালেখা শুরু করেন। ছোট বেলা থেকে মেধাবী মুখ হওয়ার সুবাদে ছাত্রজীবন শেষ করে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে একই বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে চাকুরি জীবন শুরু করেন। ব্যক্তিগত জীবনে ইয়াফী ও ইউসি নামে একটি ছেলে ও একটি কন্যা সন্তানের পিতা তার বড় ভাই ডক্টর মহিউদ্দিন। তিনি আরও জানান, তার বড় ভাই একজন স্বর্ণপদক প্রাপ্ত শিক্ষার্থী এবং দেশে ও বেলজিয়ামে মাস্টার্স সম্পন্ন করেন। জাপান থেকে তার বড় ভাই ড. মিয়া মহিউদ্দিন পিএইচডি ডিগ্রী করে দুটি পোস্ট ডক করেন এবং জাপানে ডিসিটিং প্রফেসর হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
নিজের মায়ের  প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে বেশ কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন আরজু মিয়া। ফের নিজেকে সামলিয়ে জানান,আমার বিধবা মা আজও জানেন না তার বড় সন্তান হত্যা মামলায় ফাঁসির দণ্ডাদেশ মাথায় নিয়ে আজও দীর্ঘদিন ধরে জেলখানার চার দেয়ালে বন্দি জীবন যাপন করছেন। শুধু তাই নয়? মা সেতারা বেগমকে জানাতে পারেননি আদালতের রায়ে বড় ভাই ফাঁসির আসামী।

যে কোন দিন তাদের বড় ভাইকে ফাঁসির কাষ্ঠে ঝুলিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করা হবে। মায়ের শারীরিক অবস্থা ও বয়সের বিবেচনায় একই সাথে ছেলের জন্য অপেক্ষা করতে করতে মায়ের চোখের জল শুকিয়ে গিয়ে আজ অন্ধত্ব হয়ে কোন রকমের বেঁচে আছেন তাদের মা। একবুক আশা নিয়ে মা পথ চেয়ে আছেন তার বুকের মানিক সূর্য মিয়া অভিমান ভেঙ্গে মায়ের কাছে ছুটে আসবে।

আরো পড়ুন :  অর্থ আত্মসাৎ মামলায় জামিন পেয়েছেন ড. ইউনূস

মায়ের সেই বিশ্বাস ভাঙতে চাইনি বলে বিধবা মাকে বাড়ির লোকজন কেউ মাকে জানাতে পারেন নি যে কোন দিন ক্ষন সময়ে ফাঁসির কাষ্ঠে উঠবে আদরের সন্তান সূর্য মিয়া। হয়ত জীবিত নয় কাফনের কাঁপর পরিধানে চীর ঘুমের ঘোরে মায়ের সঙ্গে শেষ দেখা হবে ড. মিয়া মহিউদ্দিনের।

তুজারপুর ইউনিয়ন আওয়ামীলীগ ৮ নং ওয়ার্ডের সাবেক সভাপতি আশুতোষ বিশ্বাস জানান, ড. মিয়া মহিউদ্দিন পরিবার এলাকার একটি সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবার। ছোট বেলা থেকে আমাদের সাথে তাদের উঠাবসা ছিল। কোন সময় তাদের পরিবারের সাথে কোনধরনের ঝুঁট ঝামেলা শুনা যায়নি। কিন্ত রাজশাহী থাকার সুবাধে বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন অধ্যাপককে হত্যাকরার সাথে জড়িত থাকার ঘটনায় আদালত তার ফাঁসির আদেশ দিয়েছে আমরা মিডিয়ায় খবর দেখেছি। আমাদের এলাকার একজন মেধাবী সন্তানের ফাঁসির খবরে অনেকটা খারাব লাগছে। কিন্ত বিষয়টি ফয়সালা দিয়েছেন আদালত। এর চেয়ে বেশী কিছু বলার নেই।

প্রতিবেশী শফি মাতুব্বর জানান,ড. মিয়া মহিউদ্দিন আমাদের ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের সহসভাপতি ছিলেন। একসাথে আমরা রাজনীতি করেছি। চুঙ্গা ফুঁকিয়ে নৌকা মার্কার জন্য মহিউদ্দিন আর আমি  ভোট চেয়েছি। কিন্ত যে কোন সময়ে তার ফাঁসি হবে শুধু এমন খবর শুনে আমরা গ্রামের সাধারণ মানুষ বেশ বিচলিত। আদালতের রায়ের প্রতি আমরা শ্রুদ্ধাশীল উল্লেখ করে তিনি বলেন কষ্ট শুধু আওয়ামীলীগ সরকার আমলেই সরকারের সমর্থনকারী পরিবারের একজন মেধাবী ছেলের ফাঁসি হতে যাচ্ছে! এরপরেও বলতে চাই দেশের জননী বঙ্গবন্ধুর কন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী  আইনের সকল পথ বন্ধ হয়ে গেলেও আপনার মানবতা ও মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে যদি প্রানভিক্ষা পাওয়া যায় ভাঙ্গার সাধারণ জনগণ আপনার প্রতি সেই শ্রদ্ধার জায়গা থেকে আবেদন করছেন ড. ম

মহিউদ্দিনের পরিবারের জন্য।

ভাঙ্গা উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি খন্দকার মিরন জানান, আদালতের রায়ের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে বলছি আমরা আইনের উর্ধে কেউ নয়। ড. মিয়া মহিউদ্দিনের পরিবার আওয়ামীলীগের রাজনীতির সাথে জড়িত এটা সত্য। তবে দেশের একটি চাঞ্চল্ক্যের ঘটনায় আদালতের রায়ে অপরাধ প্রমাণিত বিধায় এর বেশী কোন মন্তব্য করতে চাননি তিনি।

উল্লেখ্য ২০০৬ সালের ১ ফেব্রুয়ারি রাবির কোয়ার্টারের ম্যানহোল থেকে উদ্ধার করা হয় অধ্যাপক তাহেরের মরদেহ। ফেব্রুয়ারির ৩ তারিখে নিহত অধ্যাপক তাহেরের ছেলে সানজিদ আলভি আহমেদ রাজশাহী মহানগরীর মতিহার থানায় অজ্ঞাতপরিচয় কয়েকজনকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। এ মামলায় ২০০৭ সালের ১৭ মার্চ ছয় জনকে অভিযুক্ত করে চার্জশিট দেয় পুলিশ। বিচার শেষে ২০০৮ সালের ২২ মে রাজশাহীর দ্রুত বিচার আদালত চার জনকে ফাঁসির আদেশ ও দুই জনকে খালাস দেন। ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন, একই বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মিয়া মোঃ মহিউদ্দিন, নিহত অধ্যাপক ড. তাহেরের বাসার কেয়ারটেকার মো. জাহাঙ্গীর আলম, জাহাঙ্গীর আলমের ভাই নাজমুল আলম ও নাজমুল আলমের স্ত্রীর ভাই আবদুস সালাম। খালাস পাওয়া চার্জশিটভুক্ত দুই আসামি হলেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রশিবিরের তৎকালীন সভাপতি মাহবুবুল আলম সালেহী ও আজিমুদ্দিন মুন্সী।

২০০৮ সালে বিচারিক আদালতের রায়ের পর নিয়ম অনুযায়ী ডেথ রেফারেন্স (মৃত্যুদণ্ড নিশ্চিতকরণ) হাইকোর্টে আসে। পাশাপাশি আসামিরা আপিল করেন। শুনানি শেষে ২০১৩ সালের ২১ এপ্রিল অধ্যাপক ড. এস তাহের হত্যা মামলায় দুই আসামির ফাঁসির দণ্ডাদেশ বহাল এবং অন্য দুই আসামির দণ্ড কমিয়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ দেন হাইকোর্ট। ফাঁসির দণ্ডাদেশ বহাল রাখা দুই আসামি হলেন অধ্যাপক ড. মিয়া মোহাম্মদ মহিউদ্দিন ও কেয়ারটেকার মো. জাহাঙ্গীর আলম। যাবজ্জীবন কারাদণ্ড পাওয়া দুই আসামি হলেন নাজমুল আলম ও আবদুস সালাম।

বিনা অনুমতিতে এই সাইটের সংবাদ, আলোকচিত্র অডিও ও ভিডিও ব্যবহার করা বেআইনি।
সেহরির শেষ সময় - ভোর ৪:০২
ইফতার শুরু - সন্ধ্যা ৬:৩১
  • ফজর
  • যোহর
  • আছর
  • মাগরিব
  • এশা
  • সূর্যোদয়
  • ৪:০৭
  • ১১:৫৯
  • ৪:৩১
  • ৬:৩১
  • ৭:৫০
  • ৫:২৪