ই-ভ্যালি আইন লঙ্ঘন করছে- স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলছে, ই–ভ্যালি দণ্ডবিধি, ১৮৬০–এর পাঁচটি ধারা, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন, ২০০৯–এর দুটি ধারা লঙ্ঘন করে যাচ্ছে।
প্রতিবেদন দিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ ও ইক্যাব।
একক কোম্পানি হিসেবে সবচেয়ে বেশি অভিযোগ এখন ই–ভ্যালির বিরুদ্ধে।
অনুমতি ছাড়া ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ডের লোগো ব্যবহার করায় ই–ভ্যালির বিরুদ্ধে মামলা।
অনলাইনে পণ্য বেচাকেনার প্রতিষ্ঠান ই–ভ্যালি পণ্য বিক্রির কথা বলে মানুষের কাছ থেকে অগ্রিম টাকা নিচ্ছে, কিন্তু অনেককেই সময়মতো পণ্য দিচ্ছে না। গ্রাহকেরা যে পণ্যের ফরমাশ (অর্ডার) দিচ্ছেন, অনেক সময় তাঁরা পাচ্ছেন অন্য ধরনের পণ্য। এমনকি মানহীন পণ্যও সরবরাহ করা হচ্ছে।
পণ্য সরবরাহ করতে না পারলে ই–ভ্যালি গ্রাহকদের টাকা ফেরত দেওয়ার কথা, কিন্তু প্রতিষ্ঠানটি তা নিজের কাছে রেখে দিচ্ছে। আর এসবের মাধ্যমে ই–ভ্যালি দণ্ডবিধি, ১৮৬০–এর পাঁচটি ধারা, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন, ২০০৯–এর দুটি ধারা এবং ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, ২০১৮–এর একটি ধারা লঙ্ঘন করে যাচ্ছে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ এসব কথা জানিয়ে গত মাসে একটি প্রতিবেদন জমা দিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে। অগ্রিম টাকা দিয়ে পণ্য বা টাকা কিছুই ফেরত পাননি, এমন গ্রাহকদের সাক্ষাৎকার এবং প্রচলিত আইন পর্যালোচনা করে প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সাতটি সংস্থাকে চিঠি দিয়েছিল গত বছরের ৩ সেপ্টেম্বর। এর মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিল শুধু স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দণ্ডবিধি ১৮৬০ ও ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের আইন ২০০৯ অনুযায়ী অগ্রিম মূল্য নেওয়ার পর সময়মতো পণ্য সরবরাহ না করা অপরাধমূলক বিশ্বাসভঙ্গ ও প্রতারণা। এর শাস্তি এক থেকে তিন বছরের সশ্রম কারাদণ্ড।
ক্যাশব্যাক অফারে গ্রাহকদের টাকা ফেরত না দিয়ে নিজের ওয়ালেটে রাখছে ই–ভ্যালি। আবার পণ্য কেনার সময় গ্রাহকদের ১০০ শতাংশ অর্থ ব্যবহার করতে দিচ্ছে না। এ ধরনের অপরাধের দায়ে সাত বছরের কারাদণ্ড হতে পারে, এ কথাও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।
ই–ভ্যালি তার গ্রাহকদের সঙ্গে হটলাইন নম্বর, সাপোর্ট ই-মেইল, ই–ভ্যালি অ্যাপ্লিকেশন ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যথাযথভাবে যোগাযোগ করে না বলেও উঠে এসেছে প্রতিবেদনে, যা শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
অগ্রিম মূল্য পরিশোধের বদলে ই–ভ্যালিকে ‘ক্যাশ অন ডেলিভারি’ পদ্ধতি প্রবর্তনে বাধ্য করতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের প্রতি অনুরোধ করা হয়েছে প্রতিবেদনে।
ই–ভ্যালির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মোহাম্মদ রাসেল এ নিয়ে গত রোববার বলেন, ‘কিছু পর্যবেক্ষণ দিয়েছে জননিরাপত্তা বিভাগ, অপরাধ করেছি এমন কিছু সেখানে বলা হয়নি।’
ই–ভ্যালি হুমকিস্বরূপ
এদিকে ই–ভ্যালির ব্যবসা পদ্ধতি পর্যালোচনা করতে ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ই-ক্যাব) অনুরোধে গত ১ সেপ্টেম্বর সাত সদস্যের একটি কমিটি গঠিত হয়। কমিটি ই–ক্যাবকে গত অক্টোবরেই প্রতিবেদন জমা দেয়। তবে এত দিন তা নিজের কাছেই রেখে দেয় ই–ক্যাব। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় দুই মাস আগে প্রতিবেদনের একটি সারসংক্ষেপ ই–ক্যাব থেকে চেয়ে এনেছে বলে জানা গেছে।
কমিটির সদস্যরা হলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চার সহযোগী অধ্যাপক মার্কেটিং বিভাগের রাফিউদ্দীন আহমেদ, তথ্যপ্রযুক্তি ইনস্টিটিউটের বি এম মইনুল হোসেন, ব্যবসায় প্রশাসন ইনস্টিটিউটের (আইবিএ) ইফতেখারুল আমিন, ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস বিভাগের সুবর্ণ বড়ুয়া, আইনজীবী শাওন এস নভেল, এসিসিফিনট্যাক্সের প্রতিষ্ঠাতা ও অংশীদার ফায়সাল মাহমুদ সজীব এবং ই-ক্যাবের গবেষণা বিভাগের প্রধান সদরুদ্দিন ইমরান।