গাজা শাসনের সিদ্ধান্ত নেবে ফিলিস্তিনিরাই

- আপডেট সময় : ১১:৫০:১৭ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১১ অক্টোবর ২০২৫
- / ১০৩৩ বার পড়া হয়েছে
গাজা উপত্যকায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পরও, এই ভূখণ্ডের শাসনব্যবস্থা নিয়ে বিতর্ক ও অনিশ্চয়তা রয়ে গেছে। এমন সময় ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ আন্দোলনের অন্যতম প্রধান সংগঠন হামাস এবং এর মিত্র দলগুলো স্পষ্ট বার্তা দিয়েছে, গাজা কে শাসন করবে, তা নির্ধারণ করবে কেবল ফিলিস্তিনিরা। এতে কোনো বিদেশি হস্তক্ষেপ তারা মেনে নেবে না।
শুক্রবার একটি যৌথ বিবৃতিতে হামাসের ঘনিষ্ঠ দুই সংগঠন, ফিলিস্তিনি ইসলামিক জিহাদ (পিআইজি) এবং পপুলার ফ্রন্ট ফর দ্য লিবারেশন অব প্যালেস্টাইন (পিএফএলপি) জানিয়েছে, গাজার প্রশাসন কেমন হবে, তা সিদ্ধান্ত নেওয়ার একমাত্র অধিকার ফিলিস্তিনিদের। তারা বলেছে, এই সিদ্ধান্ত ফিলিস্তিনি জনগণের সম্মিলিত প্রতিনিধিত্বের ভিত্তিতে নেওয়া হবে। কোনো আন্তর্জাতিক চাপ বা পরিকল্পনার কাছে এই অধিকার তারা ছেড়ে দেবে না।
বিবৃতিতে বলা হয়, ইসরায়েলের একমাত্র লক্ষ্য ছিল গাজার জনসংখ্যাকে জোর করে বাস্তুচ্যুত করা, কিন্তু সেই পরিকল্পনা ব্যর্থ হয়েছে। ফিলিস্তিনি জনগণ প্রতিরোধ করেছে, দৃঢ় থেকেছে, এবং আজও নিজেদের অধিকার রক্ষায় একমত। তারা পুনরায় জোর দিয়ে বলেছে, গাজার ওপর কোনো ধরনের বিদেশি শাসন তারা মেনে নেবে না।
হামাসের এই দুই মিত্র আরও জানিয়েছে, গাজার ভবিষ্যৎ নিয়ে একটি ‘জরুরি জাতীয় বৈঠক’ আয়োজনের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। এর লক্ষ্য হবে ফিলিস্তিনিদের মধ্যে রাজনৈতিক ঐক্য গড়ে তোলা এবং ভবিষ্যৎ কৌশল নির্ধারণ করা। সেই কৌশল হবে অংশীদারত্ব, স্বচ্ছতা ও বিশ্বাসযোগ্যতার ভিত্তিতে, যেখানে জাতীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে নতুন করে সংগঠিত করার উদ্যোগ নেওয়া হবে।
তবে এই বৈঠকে ফিলিস্তিনি স্বায়ত্তশাসিত কর্তৃপক্ষের শীর্ষ দল ফাতাহ অংশ নেবে কি না, সে বিষয়ে এখনো কোনো নিশ্চিত বার্তা পাওয়া যায়নি।
এদিকে, গাজায় চলমান যুদ্ধবিরতির পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের তৈরি একটি ২০ দফা শান্তি পরিকল্পনার উল্লেখ রয়েছে। এই পরিকল্পনায় ‘বোর্ড অব পিস’ নামে একটি আন্তর্জাতিক তদারকি সংস্থা গঠনের কথা বলা হয়েছে, যা গাজার প্রশাসনের ওপর অন্তর্বর্তীকালীনভাবে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করবে। পরিকল্পনা অনুযায়ী, এই বোর্ডের চেয়ারম্যান হবেন ডোনাল্ড ট্রাম্প নিজে। সদস্য হিসেবে থাকবেন যুক্তরাজ্যের সাবেক প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ারসহ আরও অনেকে।
এই আন্তর্জাতিক বোর্ডের অধীনে গঠিত হবে একটি টেকনোক্র্যাটিক প্রশাসন, যারা গাজার শাসনব্যবস্থা পরিচালনা করবে। যুদ্ধবিরতির প্রথম পর্যায়ে হামাস ও ইসরায়েল এই পরিকল্পনার সঙ্গেই সম্মত হয়েছে বলে দাবি করা হলেও, গাজার ভবিষ্যৎ শাসনব্যবস্থা কার হাতে যাবে, তা নিয়ে এখনো কোনো নির্দিষ্ট ঘোষণা আসেনি।
এদিকে, যুদ্ধবিরতির শর্ত অনুযায়ী, প্রথম ৭২ ঘণ্টার মধ্যে কোনো ধরনের প্রকাশ্য উদ্যাপন বা জনসমাবেশ না করে হামাসকে অবশিষ্ট জিম্মিদের মুক্তি দিতে বলা হয়েছে। এছাড়া প্রতিদিন গাজায় অন্তত ৬০০টি ত্রাণবাহী ট্রাক প্রবেশের নিশ্চয়তা দেওয়া হয়েছে। চুক্তিতে সুপেয় পানি সরবরাহ, ধ্বংসস্তূপ অপসারণ এবং বাস্তুচ্যুতদের জন্য অস্থায়ী আশ্রয়শিবির স্থাপনের বিষয়ও উল্লেখ রয়েছে।
যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পর গাজার উপকূলীয় অঞ্চল থেকে ইসরায়েলি বাহিনী সরে যেতে শুরু করেছে। এরপর হাজার হাজার বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনি ধ্বংসপ্রাপ্ত গাজা নগরীতে ফিরতে শুরু করেছে। ফিলিস্তিনি সিভিল ডিফেন্স বিভাগ জানিয়েছে, গতকাল সেখানকার বিভিন্ন রাস্তা ও ধ্বংসস্তূপ থেকে ৬৩টি মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। তবে এখনও বহু মানুষ নিখোঁজ, যাদের অনেকেই হয়তো ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকে আছেন।
আল–জাজিরার গাজা প্রতিনিধির বরাতে জানা গেছে, শহরে ফেরার পথে চারদিকে শুধুই ধ্বংসযজ্ঞ দেখা গেছে। এক সময় যেখানে ভবন ছিল, এখন সেখানে ধূলা, ধ্বংসাবশেষ আর ছিন্নভিন্ন বস্তু। তিনি জানান, গাজা ছাড়ার সময় যেসব ভবনে বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিদের আশ্রয় নিতে দেখা গিয়েছিল, সেগুলো আর চোখে পড়েনি। অর্থাৎ, সেগুলোরও অস্তিত্ব নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে।
গাজার সরকারি গণমাধ্যম দফতর এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, উপত্যকাটির পূর্ণ পুনর্গঠনের জন্য এখনই জরুরি পদক্ষেপ নিতে হবে। যুদ্ধবিরতির প্রথম ধাপে ধ্বংসস্তূপ সরাতে প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি পাঠানোর আহ্বান জানানো হয়েছে। একইসঙ্গে বলা হয়েছে, বিতর্কিত সংস্থা জিএইচএফকে পাশ কাটিয়ে জাতিসংঘসহ নিরপেক্ষ আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোকে দিয়ে গাজায় ত্রাণ ও পুনর্গঠন কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে।
তবে জিএইচএফ জানিয়েছে, তারা যুদ্ধবিরতির সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানালেও গাজায় তাদের কার্যক্রম আগের মতোই চালিয়ে যাবে। সূত্র: আল-জাজিরা