সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার আসিফ ইমতিয়াজ খান জিসাদ হত্যা মামলায় তাঁর স্ত্রী সাবরিনা শহীদ নিশিতাসহ চারজনকে আগাম জামিন দিয়েছেন হাইকোর্ট। তাঁদের আগামী ১৫ নভেম্বরের মধ্যে বিচারিক আদালতে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে নিম্ন আদালতকে মামলার গুরুত্ব বিবেচনা করে জামিন আবেদন নিষ্পত্তি করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
আজ বুধবার বিচারপতি মো. হাবিবুল গনি ও বিচারপতি মো. রিয়াজ উদ্দিন খানের বেঞ্চ এ আদেশ দেন। আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন (মানিক) ও বি এম আবদুর রাফেল। মামলার বাদী আসিফের বাবা শহীদুল ইসলাম খানও শুনানি করেন। আসামিপক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মো. ওজি উল্লাহ; সঙ্গে ছিলেন আনোয়ারুল আজিম পাটোয়ারী।
আগাম জামিন পাওয়া অন্য আসামিরা হলেন ব্যারিস্টার আসিফ ইমতিয়াজের শ্বশুর এ এস এম শহিদুল্লাহ মজুমদার, শাশুড়ি রাশেদা শহীদ ও শ্যালক সায়মান শহীদ নিশাত।
গত ১১ সেপ্টেম্বর ভোরে রাজধানীর কলাবাগান থানার কাঁঠালবাগান ফ্রি স্কুল স্ট্রিটের ১৬৩ নম্বর বাসার নিচ থেকে সাবেক সংসদ সদস্য (এমপি) শহিদুল ইসলামের ছেলে ব্যারিস্টার আসিফ ইমতিয়াজ খান জিসাদের (৩৩) লাশ উদ্ধার করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। প্রথমে শ্বশুরবাড়ির পক্ষ থেকে বলা হয়, আসিফ নয়তলার বারান্দা থেকে লাফিয়ে পড়ে আত্মহত্যা করেছেন। তবে এটি আত্মহত্যা, না হত্যাকাণ্ড; এ নিয়ে ধুম্রজাল সৃষ্টি হয়।
পরে ১৭ সেপ্টেম্বর ব্যারিস্টার আসিফের বাবা শহীদুল ইসলাম খান বাদী হয়ে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্টেট আদালতে হত্যা মামলা দায়ের করেন। তখন ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সাদবীর ইয়াছির আহসান চৌধুরী কলাবাগান থানাকে অভিযোগটি নিয়মিত মামলা হিসেবে গ্রহণের নির্দেশ দেন।
মামলার বিবরণে বাদী উল্লেখ করেন, নিহত ব্যারিস্টার আসিফ ইমতিয়াজের শ্বশুরবাড়ির লোকজনের কথায় তিনি প্রথমে একটি অপমৃত্যুর মামলা করেছিলেন। কিন্তু পরবর্তী সময়ে পারিপার্শ্বিক ঘটনা, সুরতহাল প্রতিবেদন ও আসামিদের আচরণে তাঁর মনে হয়, আসিফ লাফিয়ে পড়ে আত্মহত্যা করেননি বরং তাঁকে হত্যা করে উপর থেকে ফেলে দেওয়া হয়েছে। তাই দণ্ডবিধির ৩০২/৩৪ ধারায় এই মামলাটি করেছেন।
পারিবারিকভাবে জানানো হয়, সাবরিনা শহীদ নিশিতাকে ভালোবেসে বিয়ে করেন আসিফ। এই বিয়ে মেনে নেয়নি আসিফের পরিবার। এ কারণে বাবাসহ পরিবার মিরপুরে থাকলেও স্ত্রীকে নিয়ে কাঁঠালবাগানের শ্বশুরবাড়িতেই থাকতেন আসিফ। তাঁদের কোনো সন্তান নেই।
যেদিন আসিফের লাশ উদ্ধার করা হয় সেদিন তাঁর শ্যালক সায়মান নিশাদ গণমাধ্যমের কাছে দাবি করেছিলেন, আসিফ ও সাবরিনার মধ্যে পারিবারিক কারণে ঝগড়া হতো। আসিফ মাদকাসক্ত ছিলেন। চার মাস উত্তরায় একটি মাদকাসক্ত পুনর্বাসন কেন্দ্রেও ছিলেন তিনি। ঘটনার দিন রাতেও স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ঝগড়া হয়। একপর্যায়ে আসিফ নয়তলার বারান্দা থেকে রেলিংয়ের ওপর দিয়ে লাফিয়ে নিচে পড়েন। সংকটাপন্ন অবস্থায় আসিফকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।
অপরদিকে আসিফের বাবা শহিদুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেছিলেন, আসিফ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী। মতিঝিলে দেশ ট্রেডিং করপোরেশনের লিগ্যাল অ্যাডভাইজার ছিলেন। তাঁর শ্বশুরবাড়ির লোকজনই ভোরে খবর দেয় আসিফের অবস্থা ভালো না, তাঁকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। পরে সেখানে গিয়ে তিনি আসিফকে মৃত দেখতে পান।
শহিদুল ইসলাম ১৯৮৬-৯০ মেয়াদে সিরাজগঞ্জ-৫ (বেলকুচি-কামারখন্দ) আসনের এমপি ছিলেন। আসিফ ব্যারিস্টারি পাস করে সুপ্রিম কোর্টে প্র্যাকটিস করছিলেন।