করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে দেশে টিকা প্রয়োগ করা হবে। আগামী ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথম দিকে শুরু হবে টিকাদান কর্মসূচি। এর জন্য নাম-ঠিকানা নিবন্ধন শুরু হবে ২৬ জানুয়ারি। এর আগেই ২৫ জানুয়ারির মধ্যে টিকা দেশে এসে পৌঁছাবে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিকল্পনা অনুযায়ী টিকা দেশে এসে পৌঁছানোর পর দুদিন সংরক্ষণ করে রাখা হবে। পরে স্বাস্থ্য অধিদফতরের তালিকা অনুযায়ী জেলায় জেলায় পাঠানো হবে। এজন্য ৬৪টি জেলা ও ৪৮৩টি উপজেলায় ইপিআই স্টোর প্রস্তুত রাখা হচ্ছে। টিকা দেশে আসার এক সপ্তাহ পর অর্থাৎ ফেব্রুয়ারির শুরুতে সারা দেশে টিকা দেওয়া শুরু হবে। গর্ভবতী মা এবং ১৮ বছরের নিচে যাদের বয়স তাদের দেহে এই ভ্যাকসিন প্রয়োগ করা হবে না। টিকা দেওয়া হবে বিনামূল্যে। ধাপে ধাপে ৩ কোটি ৪০ লাখ মানুষকে টিকা দেওয়ার জন্য ৬ কোটি ৮০ লাখ ডোজ ভ্যাকসিন আসবে।
টিকা দেওয়ার জন্য ৭৩৪৪টি দল নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রথম ডোজ টিকা দেওয়ার ৮ সপ্তাহ পর দ্বিতীয় ডোজ দিতে হবে। এই ৮ সপ্তাহ সময়ের মধ্যে পর্যায়ক্রমে প্রথম ডোজ টিকা দেওয়া হবে। প্রথমে ৫০ লাখ মানুষকে টিকা দেওয়া হবে। প্রথম মাসে ৫০ লাখ মানুষ ও তার পরের মাসে নতুন করে ৫০ লাখ মানুষকে টিকা দেওয়া হবে। এভাবে ধাপে ধাপে ৩ কোটি ৪০ লাখ মানুষ টিকা পাবেন। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, ইউনিয়ন পরিষদ, জেলা সদর হাসপাতাল, সরকারি-বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজ, বিশেষায়িত হাসপাতাল, পুলিশ বিজিবি হাসপাতাল ও সিএমএইচ, বক্ষব্যাধি হাসপাতাল হবে টিকা কেন্দ্র।
টিকার জন্য যারা নিবন্ধন বা রেজিস্ট্রেশন করবেন তাদেরকে নামের ক্রমিক তালিকা অনুযায়ী নির্ধারিত দিনে নির্ধারিত কেন্দ্রে টিকা নিতে আসতে হবে। প্রথম ডোজ টিকা নেওয়ার পর রেজিস্ট্রেশন কার্ড সংরক্ষণ করে রাখতে হবে। এই কার্ড দেখিয়ে দ্বিতীয় ডোজ টিকা নিতে হবে। ডিজিটাল পদ্ধতিতে অনলাইন নিবন্ধন, ভ্যাকসিন কার্ড, সম্মতিপত্র, ভ্যাকসিন সনদ প্রদানে আইসিটি বিভাগ, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি অধিদফতর কর্তৃক ‘সুরক্ষা ওয়েবসাইট’ প্রস্তুত করা হয়েছে। সবার আগে ভ্যাকসিন পাবেন কোভিড-১৯ স্বাস্থ্যসেবায় সরাসরি সম্পৃক্ত সকল সরকারি স্বাস্থ্যকর্মী। এরপর পর্যায়ক্রমে কোভিড-১৯ স্বাস্থ্যসেবায় সরাসরি সম্পৃক্ত সকল অনুমোদিত বেসরকারি ও প্রাইভেট স্বাস্থ্যকর্মী, মুক্তিযোদ্ধা, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সম্মুখসারির সদস্যরা, সামরিক ও বেসামরিক প্রতিরক্ষা বাহিনীর সদস্যরা, রাষ্ট্র পরিচালনায় অপরিহার্য কার্যালয়, কর্মকর্তা-কর্মচারী, সম্মুখসারির গণমাধ্যমকর্মী, নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি।
টিকা নেওয়ার জন্য সকলকেই সম্মতিপত্রে স্বাক্ষর করতে হবে যে, টিকা গ্রহণের সময় বা পরে যে কোনো অসুস্থতা, আঘাত বা ক্ষতি হলে তার দায় স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারী বা সরকারের নয়। পাশর্^প্রতিক্রিয়া বা কারও কোনো সমস্যা হয় কি না তা ফলোআপ রাখা হবে। পাশর্^প্রতিক্রিয়ার ক্ষেত্রে দ্রুত চিকিৎসা দেওয়ার জন্য ভ্রাম্যমাণ চিকিৎসক দল থাকবে। টিকা পরিবহন, সংরক্ষণ ও প্রদানের সময় যথাযথ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে দেশের পুলিশ বাহিনী সর্বাত্মক সহায়তা প্রদান করবে। ভ্যাকসিন বিষয়ক সরকারি প্রচার-প্রচারণা নিশ্চিত করতে তথ্য মন্ত্রণালয় সার্বিক দায়িত্ব পালন করবে। টিকা সংরক্ষণের জন্য ইপিআই স্টোরসমূহকে প্রস্তুত রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছে। সরকারে এসব উদ্যোগ প্রশংসার দাবি রাখে। সুষ্ঠুভাবে করোনার টিকা প্রয়োগ হোক- এই কামনা।