স্বনির্ভর বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় পুনর্ব্যক্ত করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, অন্যের সহায়তা না নিয়ে আর্থ-সামাজিকভাবে স্বনির্ভরতা অর্জনের মাধ্যমে বাংলাদেশকে আরও মর্যাদাপূর্ণ অবস্থানে নিতে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পালন করছি।
বৃহস্পতিবার (২৯ অক্টোবর) গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে স্বাধীনতা পদক প্রদান অনুষ্ঠানে একথা বলেন তিনি।
রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে স্বাধীনতা পুরস্কার প্রাপ্তদের হাতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষে পদক তুলে দেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক। এসময় গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে এ অনুষ্ঠানে অংশ নেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতার যে স্বপ্ন, যে চেতনায় আমার লাখো শহীদ বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়ে স্বাধীনতা এনে দিয়ে গেছেন, তাদের এবং আমার লাখো মা-বোনের সেই আত্মত্যাগের কথা স্মরণ করেই আমরা এই বাংলাদেশকে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত সোনার বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তুলতে চাচ্ছি।
‘মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ী জাতি হিসেবে সারাবিশ্বে বাংলাদেশ মাথা উঁচু করে চলবে। আমরা কেন অন্যের কাছে হাত পেতে, মাথা নিচু করে চলবো। ’
মুক্তিযোদ্ধাদের নামের আগে ‘বীর’ লিখতে হবে: মন্ত্রণালয়
১৫ আগস্ট ঘাতকদের হাতে জাতির পিতা সপরিবারে নিহত হওয়ার ঘটনা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা যুদ্ধ বিধ্বস্ত বাংলাদেশ গড়ে তুলছিলেন। বাংলাদেশকে উন্নতির দিকে নিয়ে যেতে শুরু করেন। কিন্তু ৭৫ এর পর আমরা সেই সম্ভাবনা ও অধিকারটা হারিয়েছিলাম।
স্বাধীনতা পদকপ্রাপ্তদের অভিনন্দন জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আপনারা সবাই আপনাদের নিজ নিজ ক্ষেত্রে বিশেষ অবদান রেখে যাচ্ছেন। আমাদের চিকিৎসাসেবায় বলেন, শিক্ষা বলেন, সংস্কৃতি বলেন- প্রতিটি ক্ষেত্রেই আপনাদের অবদান রয়েছে। কাজেই আমি আপনাদের আন্তরিক অভিনন্দন জানাই।
শেখ হাসিনা বলেন, একটি সমাজের জন্য, একটি জাতির জন্য, একটি দেশের জন্য অবদান রেখে তাদের সম্মান করা, গুনীজনের সম্মান করা এটা আমি মনে আমাদের কর্তব্য।
করোনা দ্বিতীয় ধাক্কার বিষয়ে সর্তক করে দেশবাসীকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার পরামর্শ দেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, আবার নতুনভাবে এর প্রাদুর্ভাব দেখা গেছে ইউরোপে। ইউরোপে যখন আসে এর ধাক্কাটা আমাদের দেশেও আসে। আমরা এখন থেকে প্রস্তুত, আমরা এখন থেকেই তৈরি হচ্ছি। বিভিন্নভাবে আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি। প্রত্যেকটা জেলা হাসপাতালকে আমরা প্রস্তুত রাখছি।
এবছর স্বাধীনতা পদকে ভূষিত হয়েছেন মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক প্রয়াত কমান্ডার আবদুর রউফ ও শহীদ বুদ্ধিজীবী মুহম্মদ আনোয়ার পাশা।
স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধে অবদানের জন্য বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী (বীর প্রতীক) ও আজিজুর রহমান; চিকিৎসাবিদ্যায় অবদান রাখায় অধ্যাপক ডা. মো. উবায়দুল কবীর চৌধুরী এবং অধ্যাপক ডা. একেএম এ মুকতাদির; সংস্কৃতিতে অবদানের জন্য কালীপদ দাস ও অভিনেত্রী ফেরদৌসী মজুমদারকে স্বাধীনতা পদক দেওয়া হয়।
এছাড়া শিক্ষায় অবদান রাখায় ভারতেশ্বরী হোমস প্রতিষ্ঠানটিকে স্বাধীনতা পদক দেওয়া হয়েছে।
অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম।
গণভবন প্রান্তে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব আহমদ কায়কাউস, প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিমসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
স্বাধীনতা পদক দেশের সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় বেসামরিক পুরস্কার। ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে সরকার ১৯৭৭ সাল থেকে প্রতিবছর এ পুরস্কার দিয়ে আসছে।
এর আগে করোনা মহামারির কারণে গত ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসে জাতীয় স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদনসহ সব কর্মসূচি বাতিল করা হয়। একইসঙ্গে স্বাধীনতা পদক দেওয়ার কর্মসূচিটিও স্থগিত করা হয়েছিল। এখন এই পদক তুলে দেওয়া হলো।