অনলাইন ডেস্কঃ
দেশে রূপ বদলেছে করোনা ভাইরাসের। সেই সঙ্গে বদলেছে আক্রান্তের লক্ষণও। এবার আগের থেকে আরো ভয়াবহ রূপে মহামারী এই ভাইরাসটি। গতবারের তুলনায় এবার করোনায় আক্রান্ত রোগীরা অল্প সময়ের মধ্যেই জটিলতর পরিস্থিতির সম্মুখিন হতে হচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকরা জানান, এখন তীব্র শ্বাসকষ্ট, প্রচণ্ড মাথা ব্যথা, ডায়রিয়া, বমির ভাব, অস্থিরতাসম্পন্ন রোগীরাই হাসপাতালে বেশি আসছেন। হাসপাতালে আসা রোগীদের মধ্যে বেশিরভাগই প্রয়োজন হচ্ছে হাইফ্লো অক্সিজেনের। আবার অনেকের মধ্যে এমন অস্থিরতা বিরাজ করছে যে আমাদের কথাই তারা বুঝতে পারছেন না।
প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও প্রখ্যাত মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. এবিএম আবদুল্লাহ মানবকণ্ঠকে বলেন, করোনার নতুন ট্রেইন আসায় রোগীদের অনেক সমস্যা হচ্ছে। আগে করোনা আক্রান্তের ৫-৭ দিন পর লক্ষণ দেখা দিত আর এখন আক্রান্ত হওয়ার আগেই কিংবা ২-৩ দিনের মধ্যেই লক্ষণ দেখা দিচ্ছে। এবার দ্রুত রোগীর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিচ্ছে। সাধারণ লক্ষণের পাশাপাশি এবার শ্বাসকষ্ট, পাতলা পায়খানা, বমির ভাব, অস্থিরতা, মাথা ব্যথাসহ নানা নতুন লক্ষণ দেখা দিচ্ছে।
মুগদা জেনারেল হাসপাতালের সহকারী সার্জন ডা. সৈয়দ অলী মোহাম্মদ রাসেল জানালেন, ‘এবার রোগীদের মধ্যে গতবারের তুলনায় অন্যরকম লক্ষণ দেখতে পাচ্ছেন তারা। এবার কিছু লক্ষণ খুব বেশি দেখা যাচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে পাতলা পায়খানা। গতবার যদি একশ’ জনে একজনের থাকত, এবার সেখানে ১০-১৫ জনের মধ্যে দেখা যাচ্ছে। বমি করার ভাব বা বমি করছেন এমন রোগীও ১০ থেকে ১৫ শতাংশ। অস্থিরতাসম্পন্ন রোগীও এবার বেশি।
ডা. রাসেল জানালেন, ‘এত বেশি রেস্টলেস (অস্থিরতা) রোগী পাওয়া যাচ্ছে যে, তারা স্বাভাবিক কাজ করতে পারছিলেন না। আমাদের কথাও বুঝতে পারছিলেন না তারা। তবে এবার সবচেয়ে বেশি পাওয়া যাচ্ছে ঘ্রাণশক্তি কমে যাওয়া বা খাবারের স্বাদ কম পাওয়া রোগী। গতবারও এটা ছিল। কিন্তু এবার অনেক বেশি। একই সঙ্গে রয়েছে প্রচণ্ড মাথাব্যথা। সেইসঙ্গে শ্বাসকষ্ট তো আছেই।
তিনি বলেন, গতবার শ্বাসকষ্ট নিয়ে আসা রোগী ছিল ১০ থেকে ২০ শতাংশ। তীব্র শ্বাসকষ্ট ছিল চার থেকে পাঁচ শতাংশের। এবার ৬০ থেকে ৭০ শতাংশের শ্বাসকষ্ট এবং তীব্র শ্বাসকষ্ট হচ্ছে প্রায় ২০ থেকে ৩০ শতাংশ রোগীর। এমন রোগীও পেয়েছি যাদের ওয়ার্ডে ১৫ লিটার অক্সিজেন দিয়েও স্যাচুরেশন ঠিক রাখা যাচ্ছে না। অনেকে এক থেকে দেড় ঘণ্টার মধ্যে মারা যাচ্ছে। এ ধরনের রোগীদেরই বেশি আইসিইউ দরকার। কিন্তু তা পাওয়া যাচ্ছে না
চিকিৎসকরা আরো জানিয়েছেন, অনেকেই করোনার উপসর্গে ভুগলেও আরটি-পিসিআর টেস্টে নেগেটিভ আসছে। অথচ এ পরীক্ষাকেই করোনা পরীক্ষার ‘গোল্ড স্ট্যান্ডার্ড’ মানা হয়। আরটি-পিসিআরের মাধ্যমে যে পরীক্ষা হয় তাকে বলা হয় টু-জিন পিসিআর টেস্ট।
ডাক্তাররা বলছেন, নতুন ইউকে ভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত করার মতো ক্যাপাসিটি টু-জিন পিসিআর টেস্টের কম। এখন আরটি-পিসিআর টেস্ট দিয়ে করোনা ডায়াগনোসিস করা যাচ্ছে না।
নতুন ভ্যারিয়েন্টের জটিলতার প্রসঙ্গে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন ও ইনফেকশাস ডিজিজ বিভাগের বিশেষজ্ঞ ডা. ফরহাদ উদ্দিন হাছান চৌধুরী বলেন, অনেক রোগী পাচ্ছি যাদের অক্সিজেন বেশি লাগছে। আক্রান্তদের মধ্যে যাদের অক্সিজেন প্রয়োজন হয় তাদেরই সিভিয়ার বিবেচনা করছি। তরুণ রোগীও বেশি পাচ্ছি এবার।
ডা. ফরহাদ উদ্দিন আরো বলেন, তবে ডায়াগনোসিস না হলেও অনেককে করোনার রোগীদের মতো চিকিৎসা দিতে হবে। আরটি-পিসিআর ছাড়াও করোনা ডায়াগনোসিস করতে এক্সরে ও রক্ত পরীক্ষা করাতে হবে।
আরো ৫৮ জনের মৃত্যু, শনাক্ত ৫ হাজার ৬৮৩ জন: করোনায় আক্রান্ত হয়ে দেশে গত এক দিনে আরো ৫৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। আর এই সময়ে নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে আরো ৫ হাজার ৬৮৩ জন আর সুস্থ হয়েছেন ২ হাজার ৩৬৪ জন। সবমিলিয়ে এখন পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ৯ হাজার ২১৩ জনের, শনাক্ত হয়েছেন ৬ লাখ ৩০ হাজার ২৭৭ জন আর সুস্থ হয়েছেন ৫ লাখ ৪৯ হাজার ৭৭৫ জন। গতকাল করোনা ভাইরাস (কোভিড-১৯) সংক্রান্ত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানায় স্বাস্থ্য অধিদফতর।
স্বাস্থ্য অধিদফতর জানায়, গত ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে মোট ২২৭টি ল্যাবে ২৪ হাজার ৫৪৮টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এ পর্যন্ত পরীক্ষা হয়েছে ৪৭ লাখ ৫২ হাজার ৬৬১টি নমুনা। ২৪ ঘণ্টায় নমুনা পরীক্ষার বিবেচনায় শনাক্তের হার ২৩ দশমিক ১৫ শতাংশ, এ পর্যন্ত মোট শনাক্তের হার ১৩ দশমিক ২৬ শতাংশ। শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ৮৭ দশমিক ২৩ শতাংশ এবং মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৪৬ শতাংশ।