DoinikAstha Epaper Version
ঢাকাবুধবার ১লা মে ২০২৪
ঢাকাবুধবার ১লা মে ২০২৪

আজকের সর্বশেষ সবখবর

নলছিটিতে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ক্ষুদ্র মেরামত কাজে ব্যাপক অনিয়ম

Astha Desk
জুলাই ১২, ২০২২ ১১:৫৩ অপরাহ্ণ
Link Copied!

আমির হোসেন, ঝালকা‌ঠি প্রতি‌নি‌ধিঃ

প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচির (পিইডিপি-৪) আওতায় ঝালকাঠির নলছিটি উপজেলায় প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ক্ষুদ্র মেরামতের কাজে সীমাহীন অনিয়ম ও দুর্নীতি হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

কাগজে কলমে নামমাত্র কাজ দেখিয়ে ১ কোটি ৬৬ লাখ টাকা উঠিয়ে নেয়া হয়েছে। নীতিমালা অনুযায়ী এ প্রকল্পের কাজ ৩০ জুনের মধ্যে সমাপ্ত করার কথা থাকলেও নির্ধারিত সময়ে কোন স্কুলেই কাজ শুরু হয়নি। আর এ অনিয়মের সাথে শিক্ষা অফিসের কিছু অসাধু কর্মকর্তা ও অফিস সহকা‌রি জড়িত রয়েছেন।

উপজেলা শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, ১৬৭টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে ২০২১-২২ অর্থবছরে মাইনর (ক্ষুদ্র) মেরামতের জন্য ৮৩টি বিদ্যালয়ের বিপরীতে ২ লাখ টাকা করে ১ কোটি ৬৬ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয় প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, বিদ্যালয়ের ক্ষুদ্র মেরামতের এসব কাজ বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির (এসএমসি) মাধ্যমে করার কথা। কিন্তু বিদ্যালয়গুলো কেনাকাটা না করেই দোকান থেকে ফাঁকা ভাউচার সংগ্রহ করে। এরপর তাতে প্রাক্কলন (এস্টিমেট) অনুযায়ী লিখে বরাদ্দের টাকা তুলে নেয়। আর এই ভুয়া ভাউচার তৈরিতে উপজেলা শিক্ষা ও প্রকৌশলীর কার্যালয়ের লোকজন সহায়তা করেছেন।

এদিকে বিদ্যালয়গুলোতে কাগজে-কলমে ২০২০ সালের ৩০ জুনের মধ্যে এ প্রকল্পের কাজ সমাপ্ত দেখানো হয়। কিন্তু অধিকাংশ বিদ্যালয়ে মেরামত কাজ এখনো শুরুই হয়নি। তবে ভুয়া বিল-ভাউচার জমা দিয়ে হিসাবরক্ষণ কার্যালয় থেকে বরাদ্দকৃত সমুদয় টাকা ছাড় নিয়ে নিয়ম বহির্ভূতভাবে শিক্ষা কর্মকর্তার অ্যাকাউন্টে জমা রাখা হয়েছে। বিদ্যালয়ে মেরামত প্রয়োজন না থাকলে বা এলজিইডি কর্তৃক মেজর মেরামতের জন্য দরপত্র প্রক্রিয়া চলমান থাকলে বরাদ্দপ্রাপ্ত অর্থ ব্যয় না করে সমর্পণ নিয়ম থাকলেও একাধিক বিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে তা মানা হয়নি।

উপজেলা হিসাবরক্ষণ অফিস সূত্রে জানা গেছে, ক্ষুদ্র মেরামতের জন্য বরাদ্দকৃত ১ কোটি ৬৬ লাখ টাকা দুই দফায় এসেছে। প্রথম দফায় ২০২১ সালের ২৮ ডিসেম্বর ১ কোটি ৩০ লাখ টাকা বরাদ্দ আসে। বাকি ৩৬ লাখ টাকা চলতি বছরের ২২ মে আসে।
সমুদয় টাকা ৩০ জুনের আগে বিভিন্ন সময় হিসাবরক্ষণ অফিস থেকে ছাড় করানো হয়। ওই টাকা বরাদ্দপ্রাপ্ত বিদ্যালয়গুলোর অ্যাকাউন্টে না দিয়ে শিক্ষা কর্মকর্তার অ্যাকাউন্টে নেয়া হয়েছে। এছাড়াও ৯৭টি বিদ্যালয়ের অনুকূলে রুটিন মেইনটেন্যান্স বাবদ আসা মোট ৩৮ হাজার ৮০ হাজার টাকা হিসাবরক্ষণ অফিস থেকে ছাড় করিয়ে একই অ্যাকাউন্টে রাখা হয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক শিক্ষক অভিযোগ করেন, ২০২১-২০২২ অর্থ বছরে উপজেলা শিক্ষা অফিস ভবন মেরামত বাবদ ৪০ হাজার টাকা বরাদ্ধ হয়। অর্থ বছর শেষ হয়ে গেলেও কোন কাজ না করেই বিল তোলা হয়েছে। এছাড়াও রুটিন মেইনটেন্যান্স ও স্লি‌পের টাকা বিদ্যালয়গুলোর অ্যাকাউন্টে না দিয়ে শিক্ষা কর্মকর্তার অ্যাকাউন্টে রেখে দিয়েছেন।

তারা আরও জানান, ক্ষুদ্র মেরামতসহ সব উন্নয়ন কাজে অফিস খরচ বাবদ ৫-৭ শতাংশ টাকা দিতে হয়। তা না হলে শিক্ষা অফিসের কর্মকর্তারা কোনো কাগজে স্বাক্ষর করেন না। এছাড়াও প্রকৌশল অফিসে প্রাক্কলন তৈরির জন্য খরচ দিতে হয়েছে।

মঙ্গলবার (৫ জুলাই) ও সোমবার (৪ জুলাই) ক্ষুদ্র মেরামতের বরাদ্দপ্রাপ্ত ২৫টি বিদ্যালয়ে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, চলতি বছরের ৩০ জুনের মধ্যে কাজ সমাপ্তির বাধ্যবাধকতা থাকলেও অনেক বিদ্যালয়ে কাজ শুরুই হয়নি। যদিও কাজ সমাপ্ত দেখিয়ে বরাদ্দকৃত টাকা ৩০ জুনের মধ্যে তোলা হয়েছে। কয়েকটি বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতিসহ অন্যান্য সদস্যরা বরাদ্দের ব্যাপারে জানেনই না। তবে বিষয়টি নিয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন একাধিক অভিভাবক। সঠিক তদন্তের মাধ্যমে এ অনিয়ম উদঘাটনের দাবি জানিয়েছে তারা।

সমস্ত অভিযোগ ও অনিয়মের অভিযোগ অস্বীকার করে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. রুহুল আমিন বলেন, ‘বরাদ্দের টাকা শিক্ষা কর্মকর্তার সরকারি অ্যাকাউন্টে আনার নিয়ম আছে। সেখান থেকে বিদ্যালয়গুলোর অ্যাকাউন্টে দেয়া হচ্ছে। আর শিক্ষা অফিস ভবন মেরামতের জন্য বরাদ্দকৃত অর্থ যথাযথভাবে খরচ করা হয়েছে। অফিস খরচ বাবদ ৫-৭ পার্সেন্ট টাকা নেওয়ার বিষয়টি সত্য নয়।’

প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হলেও কাজ শুরু না হওয়ার ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘বিদ্যালয়ে ম্যানেজিং কমিটি না থাকায় কাজ করতে বিলম্ব হয়েছে। উপজেলা পরিদর্শন ও শিক্ষা কমিটির মাধ্যমে উন্নয়ন কাজ তদারকি করা হবে।’ তবে কোন বিদ্যালয়ে কাজ না হলে সেক্ষেত্রে বরাদ্দকৃত অর্থ কিভাবে সরকারি কোষাগারে ফেরত দেয়া হবে-এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘কাজ আদায় করে নেয়া হবে। এখানে কোনো অনিয়ম হওয়ার সুযোগ থাকবে না।’

কয়েকটি বিদ্যালয়ে এলজিইডি কর্তৃক মেজর মেরামতের জন্য দরপত্র প্রক্রিয়া চলমান থাকলেও বরাদ্দপ্রাপ্ত অর্থ সমর্পণ না করে ব্যয় করা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘বরাদ্দের টাকা দিয়ে বিদ্যালয়ের অন্য (পুরাতন) ভবনের সংস্কার কাজ করা যাবে।’

কাজ না করে ভুয়া বিল-ভাউচার দাখিল করে টাকা উত্তোলনের অভিযোগের জবাবে তিনি বলেন, ‘এটি সরকারি সিস্টেম। বাংলাদেশ সরকারের এই সিস্টেমটি ভুল। এটা নিয়ে আমি কথা বলতে পারবো না।’

বরিশাল বিভাগীয় প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. জালাল উদ্দিন বলেন, উন্নয়ন প্রকল্পের অর্থ উত্তোলন ও ব্যয়ে অনিয়ম হয়ে থাকলে তদন্ত করে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

বিনা অনুমতিতে এই সাইটের সংবাদ, আলোকচিত্র অডিও ও ভিডিও ব্যবহার করা বেআইনি।
সেহরির শেষ সময় - ভোর ৪:০২
ইফতার শুরু - সন্ধ্যা ৬:৩১
  • ফজর
  • যোহর
  • আছর
  • মাগরিব
  • এশা
  • সূর্যোদয়
  • ৪:০৭
  • ১১:৫৯
  • ৪:৩১
  • ৬:৩১
  • ৭:৫০
  • ৫:২৪