শুভ’র সাথে শুভকথন।
সাইফ শুভ। জামালপুরের ছেলে। ভালোবাসেন গান ও গানের জগৎ। স্টেজে তার একচ্ছত্র আধিপত্য। মানুষের মন ভরিয়ে তোলাটা তার নেশা পেশা দুটোই। আজকের আয়োজনে আমাদের সাথে আছেন সংগীতশিল্পী সাইফ শুভ। সাথই থাকুন।
জানঃ কেমন আছেন শুভ ভাই?
শুভঃ আলহামদুলিল্লাহ সৃষ্টিকর্তার কৃপায় ভালো আছি।
জানঃ গান বাজনা চলছে কেমন?
শুভঃ covid-19 আমাদের স্বাভাবিক জীবনযাপনে কে ভীষণভাবে ব্যাহত করেছে। সব কিছু কেমন যেনো বদলে গিয়েছে, স্বাভাবিক গতিতে কাজে ফিরতে পারছি না বলে কাজের গতি কিছুটা কম, তবে স্টুডিও ওয়ার্ক করছি নিয়মিত, এভাবেই চলছে।
জানঃ ঈদকে সামনে রেখে কী কোনো পরিকল্পনা আছে নতুন গানের?
শুভঃ প্রতি বছরের মতো ঈদ উৎসবকে সামনে রেখে নতুন গানের কাজ করি। এ বছর মোহাম্মদ সুয়াইব এর কথায় রাজন সাহার সুর এবং সংগীতায়োজনে “যত দূরে যাও” শিরোনামের একটি গানের অডিও রেকর্ডিং শেষ করেছি, গানটির ভিডিওর কাজ চলছে, খুব শীঘ্রই গানটি স্টুডিও জয়া’র অফিশিয়াল ইউটিউব চ্যানেল এবং অফিশিয়াল ফেইসবুক পেইজে প্রকাশ পাবে।এছাড়াও বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের বিখ্যাত গান “রমজানের ঐ রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ” গানটির একটি রিমেক ভার্সনে কণ্ঠ দিয়েছি, গানটি ঈদের আগেই একটি ইউটিউব চ্যানেলে প্রকাশ পাবে।
জানঃ আমি খেয়াল করেছি আপনার মৌলিক গানের সংখ্যা খুবই কম—কেনো?
শুভঃ মৌলিক গান একজন শিল্পীর পরিচয় বহন করে। আমি মনে করি, বছরে ৫০টি গান রিলিজ না করে মানসম্মত ১টি গান রিলিজ করা উত্তম। মানসম্মত একটি গানই একজন শিল্পী কে বাঁচিয়ে রাখার জন্য যথেষ্ট। তাছাড়া শ্রোতাদের গান শুনবার জন্য সময় দেওয়াটাও আমার কাছে ভীষণ জরুরি বলে মনে হয়। মূলত গানের মান ধরে রাখতে এবং শ্রোতাদের গান শোনার সময় দিতেই নিজের মৌলিক গান একটু সময় নিয়ে প্রকাশ করছি।
জানঃ স্টেজ প্রোগ্রাম বেশি করেন জানি। কোন ধরণের প্রোগ্রাম করেন বেশি?
শুভঃ আমার কাছে মঞ্চ স্বর্গের মতো মনে হয়। মঞ্চই একমাত্র জায়গা যেখানে শ্রোতাদের সামনে নিজেকে নিজের মত করে মেলে ধরতে পারি। মঞ্চই একমাত্র জায়গা যেখানে শ্রোতাদের তাৎক্ষনিক প্রতিক্রিয়া উপভোগ করতে পারি। আসলে মঞ্চে গান গাইবার জন্য মঞ্চটি কোন ধরনের সেটা মুখ্য বিষয় নয়। বরং আমার কাছে মঞ্চের পরিবেশই মুখ্য বিষয় বলে মনে হয়। আমি মূলত ওপেন কনসার্ট গুলো বেশি করে থাকি, ওখানে গান গাইতেই আমি বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি।
জানঃ গান শেখার অনুপ্রেরণা কোথায় পেলেন?
শুভঃ গান শেখার অনুপ্রেরণা পেয়েছি আমার পরিবার থেকেই। আমার আম্মা প্রচন্ড গান প্রেমী একজন মানুষ, মূলত আম্মার অনুপ্রেরণাই আমাকে সুর সাধনায় উৎসাহী করেছে। আম্মার পরে আমার স্ত্রী “মিলি” আমাকে সব সময় গানের ব্যাপারে উৎসাহ এবং অনুপ্রেরণা দেওয়ার কাজটি নিরলস ভাবে করে যাচ্ছে।
জানঃ আপনি কী মনে করেন বর্তমানে একজন শিল্পী শুধু গান গেয়েই সচ্ছল হতে পারে?
শুভঃ দেখুন গান এবং সচ্ছলতা দুটো একদমই আলাদা বিষয়। গান হচ্ছে হৃদয়ের খোরাক, আর স্বচ্ছলতা জীবনের প্রয়োজন। একজন মানুষের স্বাভাবিক জীবন যাপনের জন্য পয়সার বিকল্প নেই, এটা বাস্তবতা। আমাদের সমাজের বাকি ১০জন মানুষের মত শিল্পীও মানুষ শিল্পীরও মৌলিক চাহিদা থাকে সাথে থাকে কিছু পারিবারিক ও সামাজিক দায়িত্ব, সকল কিছু মেইনটেইন করে চলতে গেলে পয়সার বিকল্প কিছু নেই। শুনতে অপ্রিয় হলেও সত্য আমাদের দেশের শিল্প সংস্কৃতির সাথে জড়িত অধিকাংশ মানুষেরই জীবনের শেষ পরিণতি ভীষণ করুন হয়! এটা আপনার আমার সকলেরই জানা। আমার মতে গানকে পেশা হিসেবে নিয়ে সচ্ছলতার স্বপ্ন না দেখাই ভাল, এটা কঠিন বাস্তবতা। শুধু গান গাওয়াকে একমাত্র পেশা হিসেবে না নিয়ে গান গাওয়ার পাশাপাশি একটি স্থায়ী উপার্জনের মাধ্যম সকল শিল্পীরই থাকা উচিত বলে আমার মনে হয়। এতে করে জীবনও বাঁচবে শিল্পীসত্তা এবং সম্মানও বাঁচবে।
জানঃ মিউজিক ইন্ডাস্ট্রি নিয়ে আপনার আক্ষেপ আছে কোনো? থাকলে সেটা কী বা কেমন?
শুভঃ মিউজিক ইন্ডাস্ট্রি নিয়ে আমার কোনো আক্ষেপ নেই। আর আমার আক্ষেপে কারো কিছু যাবে আসবেও না জানি! আজ আক্ষেপের কথা থাক।আমি আমার জায়গা থেকে দৈনিক আস্থার মাধ্যমে ইন্ডাস্ট্রির সবাইকে একটি মেসেজ দিতে চাই “ইন্ডাস্ট্রিটা আমাদের, ইন্ডাস্ট্রিকে পরিচর্যা করা আমাদের সকলের দায়িত্ব এবং কর্তব্য। আসুন সবাই একসাথে কাজ করি। একে অপরের প্রতিদ্বন্দ্বি না হয়ে সহযোগী হই”
জানঃ আপনার পরিবার সম্পর্কে একটু বলুন।
শুভঃ বাবা-মা, দুই ভাই, আমার স্ত্রী ও দুই কন্যাকে নিয়ে বেশ বড়সড় পরিবার আমাদের। বাবা সাংবাদিকতা পেশায় জড়িত। মা ফুলটাইম গৃহিণী। ছোট দুই ভাই উচ্চমাধ্যমিকের ছাত্র। আমার দুই কন্যা বড় মেয়ে “শাহজানা মানহা” তৃতীয় শ্রেণীতে পড়ে, ছোট মেয়ে “শাহনুম সামান্তার ৪ বছর বয়স।
জানঃ স্টেজ প্রোগ্রাম আয়োজকদের প্রতি আপনার চাওয়াটা কেমন?
শুভঃ বাংলাদেশ সংস্কৃতি বান্ধব দেশ, বাংলাদেশ উৎসব প্রিয় দেশ, বাংলাদেশ অসাম্প্রদায়িক দেশ বিধায় আমাদের দেশে শিল্প-সংস্কৃতির চর্চাও ব্যাপক। শিল্প চর্চার অংশ হিসেবে দেশে স্টেজ শো-ও হয় প্রচুর। আয়োজকদের প্রতি বিশেষ কিছু বলার নেই শুধু বলবো শিল্পী কে যথাযথ গান গাওয়ার পরিবেশ দিন, প্রতিভাবান নতুন শিল্পীদের গান করার সুযোগ দিন, অবশ্যই শিল্পী আপনাকে আপনার মনের খোরাকিতে পরিপূর্ণ করবেন বলে আমার বিশ্বাস।
জানঃ বাংলাদেশে চলমান কোন ঘটনাটা আপনার কাছে সবচেয়ে খারাপ লাগে?
শুভঃ “একজন শিল্পী কখনো মানুষ হত্যা করতে পারে না” সমসাময়িক অনেক বিষয় হৃদয়কে পিড়া দেয়। অনেক অসঙ্গতি মেনে নিতে পারি না। খারাপ লাগার বিষয়গুলো আজ থাক। তবে হ্যাঁ, অনেক ভালো না লাগার মাঝেও কিছু ভালো খবর হৃদয়কে ত্বরান্বিত করে, মনকে প্রফুল্ল করে তখন স্বস্তি বোধ করি। আসলে ভালো-মন্দ মিলিয়েই পৃথিবী আমাদের দেশ দেশের মানুষ ভিশন আবেগী এবং শান্তি প্রিয়। আবেগময় আগামীর বাংলাদেশ আরো সুন্দর হোক এই প্রত্যাশা করি।
জানঃ শুভকথন কী?
শুভঃ শুভকথন জীবনের বিভিন্ন সময়, উত্থান-পতন, সুখ দুঃখের যোগ বিয়োগ গুণ ভাগ এর ফলাফল বলতে পারেন। অথবা জীবন থেকে নেয়া ছোট ছোট কিছু অভিজ্ঞতাও বলতে পারেন।
জানঃ আমরা একদম শেষ পর্যায়ে চলে এসেছি। দৈনিক আস্থা’র এই আয়োজন কেমন লাগলে আপনার কাছে?
শুভঃ দৈনিক আস্থার সাথে আমার সম্পর্ক অনেক দিনের। আস্থা পরিবারের সবার জন্য অসম্ভব ভালোবাসা আর শুভ কামনা রইলো।
বিনা অনুমতিতে এই সাইটের সংবাদ, আলোকচিত্র অডিও ও ভিডিও ব্যবহার করা বেআইনি।