নৌবাহিনীর এক কর্মকর্তাকে মারধর ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগে সরকারদলীয় সংসদ সদস্য হাজী সেলিমের ছেলে ইরফান সেলিম ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া মামলাটি তদন্ত করতে গোয়েন্দা পুলিশকে (ডিবি) দেয়া হয়েছে। পুলিশের ধানমণ্ডি জোনের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার আবদুল্লাহিল কাফি এ তথ্য জানিয়েছেন। তিনি জানান, বৃহস্পতিবার দুপুরে তিন আসামিসহ মামলাটি গোয়েন্দা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
এদিকে র্যাবের দায়ের করা অস্ত্র ও মাদক আইনের মামলায় ইরফান ও তার দেহরক্ষী জাহিদুলকে সাত দিন করে মোট ১৪ দিন রিমান্ডে নেয়ার আবেদন করা হয়েছে। চকবাজার থানার ওসি মওদুত হাওলাদার জানান, বৃহস্পতিবার দুপুরে তাদেরকে এসব মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে ১৪ দিন করে রিমান্ড চেয়ে আবেদন আদালতে পাঠানো হয়েছে।
এর আগে ধানমণ্ডি থানায় দায়ের হওয়া মারধর ও হত্যাচেষ্টা মামলায় বুধবার ইরফান, তার দেহরক্ষী জাহিদুল মোল্লার তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। এছাড়া এই মামলায় গ্রেফতার আরেক আসামি হাজী সেলিমের প্রটোকল কর্মকর্তা এবি সিদ্দিক দীপুকে মঙ্গলবার তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত।
গত ২৫ অক্টোবর সন্ধ্যার দিকে ধানমণ্ডিতে কলাবাগান ক্রসিংয়ের কাছে ঢাকা-৭ আসনের সংসদ সদস্য হাজী মোহাম্মদ সেলিমের গাড়ির সঙ্গে নৌবাহিনীর কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট ওয়াসিফ আহমেদ খানের মোটরসাইকেলের সঙ্গে ধাক্কা লেগেছিল। এরপরই গাড়ি থেকে ইরফান সেলিমসহ তার লোকজন নেমে লেফটেন্যান্ট ওয়াসিমকে বেদম পেটান। রাত সোয়া ১০টার দিকে সংসদ সদস্যের স্টিকার লাগানো গাড়ি ও নৌবাহিনীর কর্মকর্তার মোটরসাইকেল ধানমণ্ডি থানায় জব্দ করা হয়। পরদিন সোমবার সকাল ৮টায় মারধর ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগে ধানমণ্ডি থানায় মামলা দায়ের করা হয়।
মামলার পরই চকবাজারের ২৬ নম্বর দেবীদাস ঘাট লেনে হাজী সেলিমের বাসায় র্যাব অভিযান চালায়। ওই ভবন থেকে লাইসেন্সহীন একটি বিদেশি পিস্তল, গুলি, একটি এয়ারগান, ৪০টি ওয়াকিটকি, একটি হাতকড়া এবং বিদেশি মদ ও বিয়ার জব্দ করা হয়। এ সময় ইরফান সেলিম ও তার সহযোগীকে গ্রেফতার করে র্যাব। মদ্যপান করায় সে সময় ইরফানকে এক বছর এবং অবৈধভাবে ওয়াকিটকি রাখায় ছয় মাসের কারাদণ্ড দেয় র্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত। আর তার দেহরক্ষী জাহিদকে ওয়াকিটকি বহন করার দায়ে ছয় মাসের কারাদণ্ড দেয়া হয়।
মারধর ও হত্যাচেষ্টা মামলায় ইরফান সেলিম ও জাহিদুলকে বুধবার তিন দিনের রিমান্ডে পাঠিয়েছেন আদালত। বর্তমানে ধানমণ্ডি থানায় রিমান্ডে রয়েছেন ইরফান সেলিম, তার দেহরক্ষী জাহিদুল মোল্লা ও প্রটোকল কর্মকর্তা এবি সিদ্দিক দিপু।
এর আগে মঙ্গলবার মধ্যরাতে চকবাজার থানায় সেলিম ও জাহিদুলের বিরুদ্ধে চারটি মামলা দায়ের করে র্যাব। হাজী সেলিমপুত্র ইরফানের কাছ থেকে একটি অবৈধ একটি পিস্তল ও এয়ারগান উদ্ধারের ঘটনায় অস্ত্র আইনে এবং কয়েক বোতল মদ পাওয়ায় মাদক আইনে মামলা করা হয়েছে তার বিরুদ্ধে। একইভাবে জাহিদের কাছ থেকে একটি অবৈধ পিস্তল উদ্ধারের অভিযোগে অস্ত্র আইনে এবং ৪০৬টি ইয়াবা উদ্ধারের অভিযোগে মাদক আইনে মামলা করা হয়।
এদিকে মঙ্গলবার স্থানীয় সরকার এক প্রজ্ঞাপন জারি করে হাজী সেলিমপুত্র ইরফানকে কাউন্সিলর পদ থেকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে।