আফগানিস্তানে ভারতের দুটি কনস্যুলেটে প্রবেশ করে তল্লাশি চালিয়েছে তালেবান বিদ্রোহীরা। এসময় বিভিন্ন নথি খোঁজার পাশাপাশি পার্ক করা গাড়িও জব্দ করা হয়েছে। এ ঘটনায় হতাশা প্রকাশ করে শুক্রবার (২০ আগস্ট) ভারতীয় সূত্র বলছে, বিশ্বকে তালেবান নেতারা যে অঙ্গীকার দিয়েছিল, গ্রুপটি তার বিপরীতে গিয়ে কাজ করছে।
দিল্লিভিত্তিক এনডিটিভির খবরে বলা হয়, কান্দাহার ও হেরাতের কনস্যুলেটে তালেবান সদস্যরা প্রবেশ করে তন্ন তন্ন করে খোঁজাখুঁজি করেছেন। যদিও বুধবার যখন এই তল্লাশি চলে, তখন ওই দুই কনস্যুলেট বন্ধ ছিল।
নথির জন্য তারা কান্দাহারের কনস্যুলেটের বিভিন্ন কক্ষে প্রবেশ করেছে। এছাড়া দুই কনস্যুলেটে পার্ক করে রাখা গাড়িগুলো জব্দ করে নিয়ে গেছে। ভারতের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেন, এমন কিছু ঘটবে বলেই আমাদের কাছে মনে হয়েছিল। তারা তল্লাশি চালিয়েছে এবং দূতাবাসের গাড়ি নিয়ে গেছে।
এর আগে কাবুল দূতাবাস থেকে কূটনীতিকদের ফেরত না নিতে ভারতের কাছে আবদার করেছিল তালেবান। গ্রুপটির কাতারের অফিস থেকে ভারত সরকার যে বার্তা পেয়েছিল, তাতে কূটনীতিকদের নিরাপত্তা দেওয়ার আশ্বাস ছিল। কিন্তু বুধবারের ঘটনা বলে দিচ্ছে, তালেবান প্রতিশ্রুতির লঙ্ঘন করেছে।
চলতি সপ্তাহের শুরুতে বিমান বাহিনীর সি-১৭ বিমানযোগে কাবুল থেকে কূটনীতিকদের নিয়ে আসে ভারত। কূটনীতিক ও বেসামরিক নাগরিকেরা যখন আফগানিস্তান থেকে বেরিয়ে আসার জন্য প্রাণপণ চেষ্টা করছেন, তখন ভারতও তার রাষ্ট্রদূতকে দিল্লিতে ফেরত নিয়ে এসেছে।
তবে আফগানিস্তানের বিভিন্ন প্রদেশে হাজারখানেক ভারতীয় নাগরিক এখনো রয়ে গেছেন। এদিকে রাজধানী কাবুলসহ পুরো আফগানিস্তান দখলে নিলেও তালেবানের শীর্ষ নেতা হিবাতুল্লাহ আখুনদজাদার খোঁজ মিলছে না। এই আধ্যাত্মিক নেতার অবস্থান শনাক্ত করতে বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থার দেওয়া তথ্য ও তালেবানের বিভিন্ন পদমর্যাদার নেতৃবৃন্দের আলাপচারিতা বিশ্লেষণ করছে ভারতীয় সরকার।
ভারতের এক জ্যেষ্ঠ সরকারি কর্মকর্তা আভাস দিচ্ছেন, হিবাতুল্লাহ আখুনদজাদা সম্ভবত পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর হেফাজতে রয়েছে। তালেবানের শীর্ষ নেতা ও যোদ্ধারা গত ছয় মাসে তার দেখা পাননি। গত মে মাসে ঈদুল ফিতর উপলক্ষ্যে সর্বশেষ জনসমক্ষে তার বিবৃতি এসেছে।
সাবেক নেতা আখতার মানসুর মার্কিন ড্রোন হামলায় নিহত হওয়ার পর ২০১৬ সালের মে মাসে তালেবানের প্রধান হিসেবে হিবাতুল্লাহকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। আখতার মানসুরের দুই সহকারীর একজন ছিলেন হিবাতুল্লাহ। পাকিস্তানে অনুষ্ঠিত হওয়া একটি বৈঠকে তাকে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছিল।
ফরাসি বার্তা সংস্থা রয়টার্সের বিবরণ অনুসারে, ৫০ বছর বয়সী হিবাতুল্লাহ একজন আইনের পণ্ডিত। তিনি যোদ্ধা শ্রেণির কেউ না। ইসলামের অনেক কট্টর ব্যাখ্যার কৃতিত্ব দেওয়া হয় তাকে। তাকে আমিরুল মুমিনীন হিসেবেও আখ্যায়িত করা হয়েছে। আল-কায়েদা নেতা আয়মান আল-জাওয়াহিরি তাকে এই উপাধি দিয়েছিলেন।
রোববার তালেবানের হাতে আকস্মিকভাবে আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলের পতন হয়েছে। এরপর গ্রুপটির প্রভাবশালী সাত নেতার মধ্যে হিবাতুল্লাহকে একজন হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।
লস্কর-ই-তৈয়বা ও জইশ-ই-মোহাম্মদও তালেবানের সঙ্গে মিশে যাচ্ছে বলে ভারতীয় গণমাধ্যমগুলো দাবি করেছে। বৃহস্পতিবার (১৯ আগস্ট) জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে সন্ত্রাসবাদ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস. জয়শঙ্কর। তালেবানের হাতে আফগানিস্তানের নিয়ন্ত্রণ চলে যাওয়ার পর দক্ষিণ এশিয়ার পরাশক্তিটির কাছ থেকে এই প্রথম কোনো বক্তব্য এসেছে।
তিনি বলেন, হোক আফগানিস্তানের ভিতরে কিংবা ভারতের বিরুদ্ধে—লস্কর-ই-তৈয়বা ও জয়শ-ই-মোহাম্মদ কোনো শাস্তি পাওয়া ছাড়াই অভিযান পরিচালনা করছে।
তালেবান নেতৃত্বকে কীভাবে সামলাবে ভারত, এমন প্রশ্নে কোনো সরাসরি মন্তব্য করেননি জয়শঙ্কর। তিনি বলেন, এখনো এসব নিয়ে মন্তব্য করার সময় আসেনি। চলতি সপ্তাহের শুরুতে বিভিন্ন সূত্র বলছে, কাতারে তালেবানের রাজনৈতিক অফিস থেকে বলা হয়েছে, ভারত যাতে কাবুল থেকে কূটনীতিক সরিয়ে নেওয়ার বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করে।
কিন্তু এই বার্তাকে গুরুত্ব না দিয়েই কাবুল থেকে কূটনৈতিক কর্মকর্তাদের ফিরিয়ে নিয়ে এসেছে ভারত। কিন্তু বিভিন্ন আফগান শহরে এক হাজারের বেশি ভারতীয় নাগরিক রয়ে গেছেন।