রিয়াজুল হক সাগর, রংপুর প্রতিনিধি : দীর্ঘকাল ধরে পিছিয়ে পড়া-অবহেলিত রংপুর বিভাগের ৮ জেলায় বহুমাত্রিক দারিদ্র নিরসন, শিল্পায়নের বন্ধ্যাত্ব, বাজেট বৈষম্য নিরসন ও বিজ্ঞান সম্মত তিস্তা নদী খননের দাবি জানিয়েছে রংপুর বিভাগ বৈষম্য নিরসন আন্দোলন। এই দাবিতে আগামী ৮ মার্চ ঢাকায় জাতীয় কনভেনশনের ডাক দেয়া হয়েছে সংগঠনের পক্ষে। ওই কনভেনশন থেকে বিভিন্ন দাবি-দাওয়া উত্থাপন করা হবে সরকারের কাছে। আজ মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টায় নগরির স্থানীয় একটি হোটেলে গণমাধ্যমকর্মীদের সাথে মতবিনিময় সভায় এই উদ্যোগের কথা জানান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক, রাজনীতি বিশ্লেষক ড. আব্দুল্লাহ আল মামুন। তিনি বলেন, স্বাধীনতা পরবর্তী ৫৩ বছরে ৫৪টি বাজেটে রংপুর অঞ্চলের মানুষ অর্থ বরাদ্দের বৈষম্যের শিকার হয়েছে। বিগত বছরগুলোতে এই অঞ্চলের মানুষকে ব্যবহার করে রাজনৈতিক স্বার্থ সিদ্ধি করেছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল। উন্নয়ন থেকে পিছিয়েছে পড়েছে বহু বছর ধরে উত্তরের জেলাগুলো। কোন জনপ্রতিনিধি সরকারের কাছে নিজেদের জেলার বৈষম্য নিরসনে সংসদে কিংবা সরকারের নীতি নির্ধারক মহলে জোড়ালো দাবি উত্থাপন করেনি। বরং নিজেওে আখের গুছিয়েছেন জাতীয় নেতৃবৃন্দ। শুধু তাই নয় বিগত সরকারগুলো কখনো পিছেয়ে পড়া উত্তরের জেলাগুলোর জন্য সুষম উন্নয়ন ও বাজেট প্রণয়নের জন্য কোন কাজ করেনি। কোন দেশে কখনো কোন অঞ্চলকে পিছনে রেখে সার্বিক উন্নয়ন করা সম্ভব নয়।স্বাধীনতার আগে ও পরেও রংপুর বিভাগ উন্নয়নের সড়কে বারবার বঞ্চিত হেেয়েছ। তাই সরকারের উচিত এলাকার চাহিদা ও প্রয়োজনীয়তা অনুসারে দীর্ঘ মেয়াদি ও স্বল্প মেয়াদি উদ্যোগ দরকার। বঞ্চনার শিকার হতে হতে এ অঞ্চলের মানুষ তার হারিয়েছে মৌলিক অধিকার। বুদ্ধিবৃত্তিক ও গঠন মূলক কর্মসূচির মাধ্যমে দাবি আদায়ে বিভাগের আট জেলায় কর্মশালা, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দকে গবেষণা তথ্য প্রদানসহ স্থানীয় মাঠ প্রশাসনের সাথে নিবিড়ভাবে কাজ করা ও সর্বদলীয় পরিষদ গঠন জরুরি হয়ে পড়েছে। তা বাস্তবায়নের জন্য এখনই উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। ড. আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, উন্নয়ন বৈষম্যের জালে আটকা পড়েছে পুরো রংপুর অঞ্চল। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, অর্থনীতি, কৃষি ও ভারি শিল্প স্থাপন হয়নি। বিশেষ করে গত ১৫ বছরে এক টুকরও দাবি আদায় হয়নি এই অঞ্চলের মানুষের। ‘তিস্তা মহা পরিকল্পনা’ নামের কোন প্রকল্পের অস্তিত্ব না থাকলেও রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলের জন্য ডায়ালগ ছিলো এটি। উত্তরের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির জন্য বিজ্ঞান সম্মত তিস্তা খনন পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। এজন্য যে সরকারেই আসুক না কেন তাকে কৌশল অবলম্বন করে পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে হবে। ভারতের সাথে সম্পর্ক আর ভূরাজনীতির মাধ্যমে তিস্তা নদীর পানির ন্যায্য হিস্যা আদায় করতে হবে। জবাব দিহিতায় রাখতে হবে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের। এজন্য সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে আঞ্চলিক দায়বদ্ধতা নিয়ে কাজ করতে হবে। তবেই অধিকার আদায় হবে, হবে উন্নয়ন।পিছিয়ে পড়া জনপদকে এগিয়ে নিতে মতবিনিময় সভায় সাংবাদিক জুয়েল আহমেদের সঞ্চালনায় স্থানীয় ও জাতীয় গনমাধ্যম কর্মীরাা নানা ধরনের পরামর্শ দেন। পরামর্শমুলক বক্তব্য দেন, দৈনিক দিনকালের ব্যুরো প্রধান সালেকুজ্জান সলেক, যুগান্তরের রংপুর ব্যুরো প্রধান মাহবুব রহমান, কালের কণ্ঠের রংপুর অফিস প্রধান নজরুল ইসলাম রাজু, ঢাকা পোস্টের রংপুর জেলা প্রতিনিধি ফরহাদুজ্জামান ফারুক, প্রথম আলোর রংপুর অফিস প্রধান জহির রায়হান, সময় টেলিভিশনের আব্দুর রশীদ জীবনসহ অনেকেই।
এমকে/আস্থা