রিজেন্ট গ্রুপ ও রিজেন্ট হাসপাতাল লিমিটেডের চেয়ারম্যান সাহেদ করিম ওরফে মোহাম্মদ সাহেদের বিরুদ্ধে অস্ত্র আইনে করা একটি মামলায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন আদালত।
রায়ের পর্যবেক্ষণে বিচারক বলেন, ‘আমাদের এই সমাজে সাহেদের মতো ভদ্র বেশে অনেক লোক রয়েছে। যা এই মামলার দৃষ্টান্ত হিসেবে কাজ করবে।’
আদালত বলেন, ‘সাহেদ ২০ লাখ টাকা লোন নিয়ে গাড়িটি ক্রয় করেন। কিন্তু তিনি আদালতের কাছে স্বীকার করেননি। সাহেদ তার জানা সত্ত্বেও আদালতের কাছে মিথ্যা তথ্য দেন। তিনি অত্যন্ত চালাক ও ধূরন্ধর ব্যক্তি। গাড়িতে অস্ত্র রাখা প্রমাণিত হাওয়ায় তিনি আদালতের কাছে কোনো প্রকার অনুকম্পা পেতে পারেন না।’
সোমবার (২৮ সেপ্টেম্বর) ঢাকা মহানগর দায়রা জজ কে এম ইমরুল কায়েশ ১৮৭৮ সালের অস্ত্র আইনের ১৯ (এ) ধারায় সাহেদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের আদেশ দেন। এছাড়া অস্ত্র আইনের ১৯ (এফ) ধারায় তার সাত বছরের কারাদণ্ডের আদেশ দেন আদালত। উভয় সাজা একসঙ্গে চলবে বলে আদালত রায়ে উল্লেখ করেন। রায় ঘোষণার আগে সাহেদকে কারাগার থেকে আদালতে হাজির করা হয়।
রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করে ঢাকা মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) আব্দুল্লাহ আবু বলেন, সাহেদ যে অপরাধী তা মামলার রায়ে প্রমাণিত হয়েছে। এই রায় সমাজে দৃষ্টান্ত হিসেবে থাকবে।
সাহেদের আইনজীবী মনিরুজ্জামান বলেন, এই রায়ে আমরা সন্তুষ্ট হতে পারিনি। রায়ের বিরুদ্ধে আমরা উচ্চ আদালতে যাব।
মামলায় ১৪ সাক্ষীর মধ্যে বিভিন্ন সময়ে ১১ জনের সাক্ষ্য দেন আদালত।
গত ৬ জুলাই রিজেন্ট হাসপাতালের উত্তরা ও মিরপুর শাখায় অভিযান চালায় র্যাব। অভিযানে ভুয়া করোনা পরীক্ষার রিপোর্ট, করোনা চিকিৎসার নামে রোগীদের কাছ থেকে অর্থ আদায়সহ নানা অনিয়ম উঠে আসে। এ ঘটনার পর পালিয়ে যান সাহেদ।
১৫ জুলাই সাহেদকে সাতক্ষীরার সীমান্তবর্তী এলাকা থেকে গ্রেফতার করে র্যাব। পরে তাকে হেলিকপ্টারে করে সাতক্ষীরা থেকে ঢাকায় আনা হয়।
করোনা পরীক্ষার নামে ভুয়া রিপোর্টসহ বিভিন্ন প্রতারণার অভিযোগে দায়ের করা মামলায় ১৬ জুলাই সাহেদকে ১০ দিনের রিমান্ডে নেয়া হয়। এরপর ১৯ জুলাই তাকে নিয়ে উত্তরার বাসার সামনে অভিযান চালায় ডিবি পুলিশ। সেখানে সাহেদের নিজস্ব সাদা প্রাইভেটকারে পাঁচ বোতল বিদেশি মদ, ১০ বোতল ফেনসিডিল, একটি পিস্তল এবং একটি গুলি উদ্ধার করা হয়। এরপর উত্তরা পশ্চিম থানায় অস্ত্র ও মাদক নিয়ন্ত্রণ আইনে দুটি মামলা করা হয়।
৩০ জুলাই ঢাকা মহানগর হাকিম আদালতে সাহেদের বিরুদ্ধে অস্ত্র আইনের মামলায় চার্জশিট দাখিল করা হয়। ২৭ আগস্ট তার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন আদালত।
২০ সেপ্টেম্বর রাষ্ট্র ও আসামিপক্ষের যুক্তি উপস্থাপন শেষে রায় ঘোষণার জন্য ২৮ সেপ্টেম্বর দিন ধার্য করেন ঢাকা মহানগর দায়রা জজ কে এম ইমরুল কায়েশ। মামলাটির ৮ কার্যদিবসে বিচারিক কার্যক্রম শেষ করা হয়।
উল্লেখ্য, সাহেদের বিরুদ্ধে সারাদেশে অর্ধশত মামলা রয়েছে। এর বেশিরভাগই প্রতারণার অভিযোগে করা।