তিস্তা নিয়ে করনীয় শীর্ষক গণ শুনানি রোববার বিকেলে কাউনিয়ার তিস্তা সেতু পাড়ে অনুষ্ঠিত হয়। এ গণশুনানীতে তিস্তা পাড়ের মানুষ তাদের দুঃখ -দূদর্শার কথা দুই উপদেষ্টাগণ কে জানিয়েছেন।
গণশুনানি অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পানিসম্পদ, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান এবং যুব ও ক্রিড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঈয়া।পানিসম্পদ, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ান হাসান বলেন চলতি ২০২৫ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে তিস্তা মহাপরিকল্পনা চুড়ান্ত প্রস্তুত করা হবে। ইতিপূর্বে চায়নার সাথে যে তিস্তা মহাপরিকল্পনা চুক্তি হয়েছিল তা টেক সই হতো না তাই পরিকল্পনায় কী থাকবে কী থাকবে না এজন্য পানি উন্নয়ন বোর্ড এবং আপনাদের মতামত নিয়ে আবারো পাওয়ার চায়না এ প্রকল্প পরিকল্পনা গ্রহন করবে। এ অঞ্চলের ৪৫ কিলোমিটার নদী ভাঙন এলাকা তার মধ্যে ২২ কিলোমিটার বেশি নদী ভাঙন প্রবণ এলাকা তাই মার্চ মাসের মধ্যে টেন্ডার আহ্বান করে নদী ভাঙন রোধে কাজ শুরু করার জন্য আমি পানি উন্নয়ন বোর্ড কে নির্দেশ দিয়েছি।
তিনি আরো বলেন তিস্তা কোন দেশের একক নদী না। কেউ যদি মনে করে তিস্তা কারো একক নদী তা হবে তাদের ভু়ল ধারনা। তিনি বলেন কেউ যদি আমাদের বন্ধু হয় তা হলে বর্ষা কালে পানি ছাড়ার আগে কেন আমাদের জানান না। তিনি আরো বলেন অর্ন্তবর্তী কালীন সরকারের কাছে আপনাদের অনেক প্রত্যশা কিন্ত আমাদের কাছে তেমন অর্থ নেই তবু তিস্তা পরিকল্পনা বাস্তবায়নে আমরা উদ্যোগ গ্রহন করেছি।যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঈয়া বলেন বিগত সরকার প্রধান বলে গেছেন আমরা যা ভারত কে দিয়েছি ভারত তা চীরকাল মনে রাখবে কিন্ত ভারত মনে রাখার মতো এদেশ কে কিছুই দেইনি। আমরা ভারত কে চাপ দিয়ে তিস্তার ন্যায্য হিস্যা আদায় করবো।
তিস্তা যেন এ এলাকার মানুষের জন্য আর্শিবাদ হয়। তিনি আরো বলেন তিস্তার চরে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নির্মাণ করা হবে, ফসলের ন্যায্য মূল্য যাতে কৃষকেরা পায় সে জন্য কোল্ড এ এলাকায় কোল্ড স্টোরেজ নির্মাণ,তিস্তা নদীতে আরো একটি সেতু নির্মাণ করা হবে। উত্তরাঞ্চলে কৃষি শিল্পের বিপ্লব ঘটানো হবে। জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেন শুষ্ক মৌসুমে ভারত পানি আটকিয়ে তিস্তা মরুভূমিতে রুপান্তর করে। নদী হওয়ার কথা আর্শিবাদ সে তিস্তা নদী হয়েছে আমাদের অভিশাপ। আমরা তিস্তার পানির ন্যায্য হিস্যা দাবী করছি। প্রয়োজনে আন্তর্জাতিক আদালতে মামলা দায়ের করে পানির ন্যায্য হিস্যা আদায়ের দাবী জানান তিনি। চলতি সালের ২৫ ডিসেম্বর মধ্যে তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের দাবী জানান তিনি, রংপুরের জেলা প্রশাসক মোঃ রবিউল ফয়সালের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্য সচিব আখতার হোসেন, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব একে এম তারিকুল আলম,অধ্যক্ষ নজরুল ইসলাম হক্কানি,আলহাজ্ব এমদাদুল ভরসা,একে এম মমিনুল হক, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ মহিদুল হক,বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক ড. আতিক মোজাহিদ,আবু সাঈদ লিয়ন প্রমূখ।
দীর্ঘদিন ধরে তিস্তা পাড়ের মানুষ তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের দাবীতে নানা কর্মসূচী পালন করে আসলেও বিগত সরকারের আমলে তা বাস্তবায়ন হয় নি। ফলে এ অঞ্চলের মানুষের প্রাণ তিস্তা শুকিয়ে কংকাল সার ধু-ধু বালুচরে পরিনত হয়েছে। তিস্তার ভাঙনে শত শত পরিবার ভিটেমাটি হারিয়ে নিঃস্ব ভূমিহীনে পরিনত হয়েছে। বন্যা, খড়া সহ নানা দূর্যোগে পতিত হচ্ছে এ অঞ্চলের মানুষ। গণশুনানীতে এলাকার বাসিন্দারা বলেন আমরা ত্রান চাই না,মিথ্যা আশ্বাস শুনতে চাই না,আমরা দ়ল বুঝি না,নেতা বুঝিনা,আমরা পরিকল্পিত তিস্তা প্রকল্প বাস্তবায়ন চাই , তারা বলেন দল যার যার তিস্তা সবার, তিস্তা ভারত-বাংলাদেশের অভিন্ন নদী। রংপুর বিভাগের পাঁচ জেলার ১২টি উপজেলার ৪৪ ইউনিয়ন মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত। এ নদীর সাথে ২২ টি নদী যুক্ত। সেই নদী সাধারণ মানুষের মরণফাঁদে পরিনতি হয়েছে। এ নদী শাসননের মাধ্যমে ১১৫ কিলোমিটার নদীর গতি- প্রকৃতি নিয়ন্ত্রণ ভাঙন প্রতিরোধ,বাঁধ নির্মাণ ও মেরামত কাজের মাধ্যমে বন্যা নিয়ন্ত্রণ ও প্রাকৃতিক দূর্যোগ হ্রাস,ড্রেজিংএর মাধ্যমে নদী খনন,নদী প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ ও নদী পুনরুদ্ধার, চ্যানেল ড্রেজিং এর মাধ্যমে নদীর নাব্যতা বৃদ্ধি,খননকৃত মাটি ভরাট স্থানে অর্থনৈতিক অঞ্চল, পাওয়ার প্লান্ট ও স্যাটেলাইট টাউন সেচ কৃষি ব্যবস্থার উন্নয়ন, শুস্ক মৌসুমে পানি প্রবাহ নিশ্চিত করন প্রকল্প এলাকায় পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার দাবী জানান।
এমকে/আস্থা