ঢাকা ১২:০৩ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৫, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম:
Logo পানছড়িতে বিজিবি কর্তৃক অসহায় দুঃস্থ ও গরীবদের মাঝে সহায়তা প্রদান Logo খাগড়াছড়িতে সাংবাদিকদের সাথে নবাগত জেলা প্রশাসকের মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত Logo মানবতাবিরোধী অপরাধ : ট্রাইব্যুনালে ১৩ সেনা কর্মকর্তা Logo ভুটানের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে এনসিপি নেতাদের সাক্ষাৎ Logo প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে তাইজুলের ২৫০ Logo যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করে গাজায় ইসরায়েলি হামলা, নিহত ২৪ Logo কিশোরগঞ্জে মানব কল্যাণ ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে কুরআন বিতরণ Logo মূকাভিনয়ে কৃতিত্ব রাখায় রিফাত ইসলামকে সম্মাননা প্রদান Logo বাজিতপুরে সৈয়দ এহসানুল হুদার কর্মী-সমর্থকদের ওপর বিএনপির নেতাকর্মীদের হামলা Logo দ্বিতীয়বারের মতো শ্রেষ্ঠ ওসি অষ্টগ্রাম থানার রুহুল আমিন

আমার সব কিছুর জন্য আনিছুল দায়ী

News Editor
  • আপডেট সময় : ০৫:০৫:৪৪ অপরাহ্ন, বুধবার, ৭ অক্টোবর ২০২০
  • / ১০৭০ বার পড়া হয়েছে

দিনাজপুরের পার্বতীপুর উপজেলার পাঁচপুকুরিয়া শালবাগান থেকে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় রুখিয়া রাউত (২৩) নামে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর এক তরুণীর মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। মঙ্গলবার (৬ অক্টোবর) ভোরে অজ্ঞাত হিসেবে তার মরদেহটি উদ্ধার করা হয়। পরে রাতে জাতীয় পরিচয়পত্রের সূত্র ধরে তার নাম-ঠিকানা জানতে পারে পুলিশ।

এ ঘটনায় তিনজনকে আটক করা হয়েছে। আটকদের বুধবার (৭ অক্টোবর) দুপুরে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি নেয়ার জন্য দিনাজপুর বিজ্ঞ বিচারকের আদালতে নেয়া হয়েছে।

নোয়াখালীতে গৃহবধূকে বিবস্ত্র নির্যাতন: আরও তিন আসামি রিমান্ডে

নিহত রুখিয়া রাউত রংপুরের বদরগঞ্জ উপজেলার রামনাথপুর ইউনিয়নের আদিবাসী পল্লী মিশনপাড়ার দিনেশ রাউত ও সুমতি রাউতের মেয়ে এবং রংপুর কারমাইকেল বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের অনার্স (ইতিহাস) শেষ বর্ষের ছাত্রী। তাকে গণধর্ষণের পর নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছে বলে ধারণা করছে পুলিশ ও এলাকাবাসী।

পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, গত সোমবার (৫ অক্টোবর) বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে রংপুরে মেসে যাওয়ার জন্য বাড়ি থেকে বের হন রুখিয়া। বান্ধবীদের সঙ্গে একরাত থেকে পরদিন তার ফিরে আসার কথা ছিল। যাওয়ার সময় শেষবার মা সুমতিকে তিনি বলে যান যে, ‘মা রংপুর যাচ্ছি। চিন্তা করিস না। সকালে আবার ফিরে আসবো।’ এরপর থেকে তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়। ওইদিন তিনি আর বাড়িতে ফিরে না আসায় উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন পরিবারের লোকজন।

এদিকে পরদিন মঙ্গলবার ভোরের দিকে বদরগঞ্জ উপজেলার লোহানীপাড়া ইউনিয়নের ঘুনুরঘাট এলাকার সীমান্তবর্তী পার্বতীপুর উপজেলার হরিরামপুর ইউনিয়নের পাঁচপুকুরিয়া শালবাগান থেকে অজ্ঞাত একটি মরদেহ উদ্ধার করেন মধ্যপাড়া পুলিশ ফাঁড়ির সদস্যরা। ওড়না দিয়ে তার হাত-পা ও গলা বাঁধা ছিল। পরনে ছিল সালোয়ার কামিজ। তার দাঁতগুলোও ভাঙা ছিল। রক্তাক্ত ও ক্ষতবিক্ষত ছিল মুখ।

দুর্বৃত্তরা নির্মমভাবে তাকে হত্যার পর অটোরিকশায় করে সেখানে মরদেহ ফেলে গেছে বলে ধারণা পুলিশের। পরে মধ্যপাড়া পুলিশ ফাঁড়ির সদস্যরা মরদেহটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য দিনাজপুর এম আব্দুর রহিম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠায়।

মরদেহের পরিচয় জানতে ওইদিন সন্ধ্যায় দিনাজপুর পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) একটি তদন্ত দল নিহতের হাতের আঙুলের ছাপ নেয়। এতে জাতীয় পরিচয়পত্রের সঙ্গে চেহারা মিলে যাওয়ায় তার পরিচয় নিশ্চিত হন তারা। পরে জানতে পারেন তিনি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী পরিবারের মেয়ে। বাড়ি বদরগঞ্জে।

রুখিয়ার বাবা দিনেশ রাউত বলেন, একই এলাকার আব্দুল গফুরের ছেলে আনিছুল প্রায় সময় রুখিয়াকে উত্ত্যক্ত করতো। একপর্যায়ে সে প্রেমের প্রস্তাব দেয়। গত সোমবার বাড়ি থেকে বেরিয়ে যাওয়ার আগে রুখিয়া তার ডায়েরিতে লিখে গেছে ‘আত্মহত্যা করতে গিয়ে কোনোভাবে বেঁচে গেলাম। আজ ৫/১০/২০২০ আনিছুল আমাকে দূরে কোথাও ডেকেছে। সেখানে সে নিজ হাতে আমাকে হত্যা করতে পারে। আমার সব কিছুর জন্য আনিছুল দায়ী।’ বাড়ি থেকে যাওয়ার আগে কোনো এক সময় রুখিয়া ডায়েরিতে এসব লিখে রেখেছে। পড়ার টেবিল থেকে রুখিয়ার ডায়েরি উদ্ধার করে এসব তথ্য পাওয়া যায় বলে জানান দিনেশ রাউত।

বদরগঞ্জ উপজেলা ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী সমাজ উন্নয়ন সমিতির সভাপতি শ্যামল টুডু বলেন, গণধর্ষণের পর তাকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছে। এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের শাস্তি চাই। তা না হলে বৃহৎ আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।

পার্বতীপুর থানা পুলিশের ওসি (তদন্ত) সোহেল রানা বলেন, হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী হিসেবে আনিছুল হক, অটোচালক রাজ মিয়া ও তাদের সহযোগী আশিকুজ্জামানকে বুধবার ভোরে নিজ বাড়ি থেকে আটক করেছে পুলিশ। এদের মধ্যে আনিছুল ও রাজ বদরগঞ্জ উপজেলার রামনাথপুর ইউনিয়নের আদিবাসী পল্লী মিশনপাড়ার এবং আশিকুজ্জামান পার্বতীপুর উপজেলার পশারবাড়ি ইউনিয়নের দুর্গাপুর গ্রামের বাসিন্দা।

তিনি আরও বলেন, আলামত হিসেবে বেশ কিছু জিনিসপত্র তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। প্রাথমিক বিজ্ঞাসাবাদে তারা হক্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন। ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি নেয়ার জন্য আটকদের দিনাজপুর বিজ্ঞ বিচারকের আদালতে নেয়া হয়েছে। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পেলে তাকে ধর্ষণ করা হয়েছে কি-না তা জানা যাবে।

আমার সব কিছুর জন্য আনিছুল দায়ী

আপডেট সময় : ০৫:০৫:৪৪ অপরাহ্ন, বুধবার, ৭ অক্টোবর ২০২০

দিনাজপুরের পার্বতীপুর উপজেলার পাঁচপুকুরিয়া শালবাগান থেকে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় রুখিয়া রাউত (২৩) নামে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর এক তরুণীর মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। মঙ্গলবার (৬ অক্টোবর) ভোরে অজ্ঞাত হিসেবে তার মরদেহটি উদ্ধার করা হয়। পরে রাতে জাতীয় পরিচয়পত্রের সূত্র ধরে তার নাম-ঠিকানা জানতে পারে পুলিশ।

এ ঘটনায় তিনজনকে আটক করা হয়েছে। আটকদের বুধবার (৭ অক্টোবর) দুপুরে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি নেয়ার জন্য দিনাজপুর বিজ্ঞ বিচারকের আদালতে নেয়া হয়েছে।

নোয়াখালীতে গৃহবধূকে বিবস্ত্র নির্যাতন: আরও তিন আসামি রিমান্ডে

নিহত রুখিয়া রাউত রংপুরের বদরগঞ্জ উপজেলার রামনাথপুর ইউনিয়নের আদিবাসী পল্লী মিশনপাড়ার দিনেশ রাউত ও সুমতি রাউতের মেয়ে এবং রংপুর কারমাইকেল বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের অনার্স (ইতিহাস) শেষ বর্ষের ছাত্রী। তাকে গণধর্ষণের পর নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছে বলে ধারণা করছে পুলিশ ও এলাকাবাসী।

পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, গত সোমবার (৫ অক্টোবর) বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে রংপুরে মেসে যাওয়ার জন্য বাড়ি থেকে বের হন রুখিয়া। বান্ধবীদের সঙ্গে একরাত থেকে পরদিন তার ফিরে আসার কথা ছিল। যাওয়ার সময় শেষবার মা সুমতিকে তিনি বলে যান যে, ‘মা রংপুর যাচ্ছি। চিন্তা করিস না। সকালে আবার ফিরে আসবো।’ এরপর থেকে তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়। ওইদিন তিনি আর বাড়িতে ফিরে না আসায় উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন পরিবারের লোকজন।

এদিকে পরদিন মঙ্গলবার ভোরের দিকে বদরগঞ্জ উপজেলার লোহানীপাড়া ইউনিয়নের ঘুনুরঘাট এলাকার সীমান্তবর্তী পার্বতীপুর উপজেলার হরিরামপুর ইউনিয়নের পাঁচপুকুরিয়া শালবাগান থেকে অজ্ঞাত একটি মরদেহ উদ্ধার করেন মধ্যপাড়া পুলিশ ফাঁড়ির সদস্যরা। ওড়না দিয়ে তার হাত-পা ও গলা বাঁধা ছিল। পরনে ছিল সালোয়ার কামিজ। তার দাঁতগুলোও ভাঙা ছিল। রক্তাক্ত ও ক্ষতবিক্ষত ছিল মুখ।

দুর্বৃত্তরা নির্মমভাবে তাকে হত্যার পর অটোরিকশায় করে সেখানে মরদেহ ফেলে গেছে বলে ধারণা পুলিশের। পরে মধ্যপাড়া পুলিশ ফাঁড়ির সদস্যরা মরদেহটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য দিনাজপুর এম আব্দুর রহিম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠায়।

মরদেহের পরিচয় জানতে ওইদিন সন্ধ্যায় দিনাজপুর পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) একটি তদন্ত দল নিহতের হাতের আঙুলের ছাপ নেয়। এতে জাতীয় পরিচয়পত্রের সঙ্গে চেহারা মিলে যাওয়ায় তার পরিচয় নিশ্চিত হন তারা। পরে জানতে পারেন তিনি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী পরিবারের মেয়ে। বাড়ি বদরগঞ্জে।

রুখিয়ার বাবা দিনেশ রাউত বলেন, একই এলাকার আব্দুল গফুরের ছেলে আনিছুল প্রায় সময় রুখিয়াকে উত্ত্যক্ত করতো। একপর্যায়ে সে প্রেমের প্রস্তাব দেয়। গত সোমবার বাড়ি থেকে বেরিয়ে যাওয়ার আগে রুখিয়া তার ডায়েরিতে লিখে গেছে ‘আত্মহত্যা করতে গিয়ে কোনোভাবে বেঁচে গেলাম। আজ ৫/১০/২০২০ আনিছুল আমাকে দূরে কোথাও ডেকেছে। সেখানে সে নিজ হাতে আমাকে হত্যা করতে পারে। আমার সব কিছুর জন্য আনিছুল দায়ী।’ বাড়ি থেকে যাওয়ার আগে কোনো এক সময় রুখিয়া ডায়েরিতে এসব লিখে রেখেছে। পড়ার টেবিল থেকে রুখিয়ার ডায়েরি উদ্ধার করে এসব তথ্য পাওয়া যায় বলে জানান দিনেশ রাউত।

বদরগঞ্জ উপজেলা ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী সমাজ উন্নয়ন সমিতির সভাপতি শ্যামল টুডু বলেন, গণধর্ষণের পর তাকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছে। এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের শাস্তি চাই। তা না হলে বৃহৎ আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।

পার্বতীপুর থানা পুলিশের ওসি (তদন্ত) সোহেল রানা বলেন, হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী হিসেবে আনিছুল হক, অটোচালক রাজ মিয়া ও তাদের সহযোগী আশিকুজ্জামানকে বুধবার ভোরে নিজ বাড়ি থেকে আটক করেছে পুলিশ। এদের মধ্যে আনিছুল ও রাজ বদরগঞ্জ উপজেলার রামনাথপুর ইউনিয়নের আদিবাসী পল্লী মিশনপাড়ার এবং আশিকুজ্জামান পার্বতীপুর উপজেলার পশারবাড়ি ইউনিয়নের দুর্গাপুর গ্রামের বাসিন্দা।

তিনি আরও বলেন, আলামত হিসেবে বেশ কিছু জিনিসপত্র তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। প্রাথমিক বিজ্ঞাসাবাদে তারা হক্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন। ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি নেয়ার জন্য আটকদের দিনাজপুর বিজ্ঞ বিচারকের আদালতে নেয়া হয়েছে। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পেলে তাকে ধর্ষণ করা হয়েছে কি-না তা জানা যাবে।