গাজার ওপর ‘সর্বাত্মক অবরোধ’ আরোপ করেছে ইসরায়েল। দেশটির প্রতিরক্ষা মন্ত্রী ইয়োয়াভ গালান্ট জানিয়েছেন, গাজার বিদ্যুৎসংযোগ কেটে দেওয়ার পাশাপাশি সেখানে খাদ্য, পানি ও জ্বালানি প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না।
ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসের সাথে চলমান যুদ্ধে ভয়াবহ সংকটের মুখোমুখি হওয়া ইসরায়েল অধিকৃত গাজা উপত্যকায় ‘সর্বাত্মক’ অবরোধ ঘোষণা করেছে। সোমবার ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্ত এই অবরোধের ঘোষণা দিয়ে বলেছেন, গাজা উপত্যকায় বিদ্যুৎ, পানি, খাবার এবং জ্বালানি সরবরাহ পুরোপুরি বন্ধ থাকবে।
দীর্ঘদিন ধরে গাজা উপত্যকার ক্ষমতায় রয়েছে হামাস। এই গোষ্ঠী শনিবার ভোরের দিকে আচমকা রকেট নিক্ষেপ শুরু করে ইসরায়েলে। পরে গাজা উপত্যকায় স্থল, আকাশ ও সমুদ্রপথে পাল্টা হামলা শুরু করেছে ইসরায়েল। তৃতীয় দিনে পৌঁছানো উভয়পক্ষের চলমান লড়াইয়ে প্রাণহানির সংখ্যা ১ হাজার ১০০ ছাড়িয়ে গেছে।
জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা বলছে, চলমান সহিংসতায় গাজায় এক লাখ ২৩ হাজারের বেশি বাসিন্দা ইতিমধ্যে বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। এর মাঝেই পুরো উপত্যকাকে মরুর দ্বীপে পরিণত করার হুমকি দিয়ে বৃষ্টির মতো বোমাবর্ষণ অব্যাহত রেখেছে ইসরায়েল।
সোমবার (৯ অক্টোবর) ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী বলেছেন, কর্তৃপক্ষ হামাস-অধিকৃত গাজায় ‘সর্বাত্মক অবরোধের’ অংশ হিসেবে বিদ্যুৎসংযোগ বিচ্ছিন্ন এবং খাদ্য ও জ্বালানি প্রবেশে বাধা দেবে।
ইসরায়েলি এই প্রতিরক্ষামন্ত্রী ‘বদমাশ লোকজনের’ বিরুদ্ধে যুদ্ধের অংশ হিসাবে সর্বাত্মক অবরোধের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আমরা গাজাকে পুরোপুরি অবরোধ করছি। বিদ্যুৎ নেই, খাবার নেই, পানি নেই, গ্যাস নেই— সবই বন্ধ আছে।’
এর আগে, ২০০৭ সালে প্রতিদ্বন্দ্বী ফিলিস্তিনি বাহিনীর কাছ থেকে হামাস ক্ষমতা দখলে নেওয়ার পর ইসরায়েল এবং মিসর গাজার ওপর বিভিন্ন ধরনের অবরোধ আরোপ করে।
ইসরায়েলের সামরিক বাহিনীর প্রধান মুখপাত্র রিয়ার অ্যাডমিরাল ড্যানিয়েল হ্যাগারি সাংবাদিকদের বলেছেন, সীমান্তবর্তী গ্রামগুলোর ওপর নিয়ন্ত্রণ রয়েছে ইসরায়েলের। তিনি বলেন, সোমবার সকালে কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটেছে। এই পর্যায়ে সেখানকার সম্প্রদায়ের মাঝে কোনও ধরনের সংঘাত হচ্ছে না। তবে এখনও ওই অঞ্চলে হামাসের যোদ্ধারা থাকতে পারেন বলে জানিয়েছেন তিনি।
এদিকে, এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত হামাসের হামলায় ইসরায়েলে নিহতের সংখ্যা ৭০০ ছাড়িয়েছে। আহত হয়েছে ২২০০ এরও বেশি ইসরায়েলি। অন্যদিকে, এরই মধ্যে ইসরায়েলি হামলায় ফিলিস্তিনে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৪৯৩ জনে দাঁড়িয়েছে, আহত হয়েছে দুই হাজার ৭৫০ জন।
শনিবার (৭ অক্টোবর) ভোরে ইসরায়েল লক্ষ্য করে একসঙ্গে ৫ হাজারেরও বেশি ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ে হামাস। সেই সঙ্গে ইহুদী রাষ্ট্রটির ভেতরে ঢুকে হামলা শুরু করে। এতদিন ইসরায়েলের বিপক্ষে শুধুমাত্র প্রতিরোধ ব্যবস্থা নিয়েছে হামাস। শনিবারই প্রথমবারের মতো আগে ইসরায়েলে হামলা চালালো সংগঠনটি।