ইরানে কেন হামলা করে দখলদার ইসরায়েল?
মোফাজ্জল হোসেন ইলিয়াছঃ
ইরানকে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করতে বাধ্য করার মাধ্যমে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের অধিকার কেড়ে নেয় যা এই অঞ্চলে তার ভূমিকা হ্রাস করবে এবং পারমাণবিক শক্তি থেকে তাকে বঞ্চিত করবে।
শান্তিপূর্ণ আলোচনা ব্যর্থ হওয়ার পর চুক্তি স্বাক্ষরের জন্য ইরানের উপর সামরিক চাপ প্রয়োগের কাজ চালানোর জন্য আমেরিকা এই অঞ্চলে তার পালিত অবৈধ ইসরায়েলকে লেলিয়ে দিয়েছে।
বর্তমান এই সামরিক চাপের উদ্দেশ্য হলো ইরানীদের আলোচনার টেবিলে নিয়ে আসা এবং চুক্তি স্বাক্ষরে বাধ্য করা।
যদি রাজনৈতিক ও সামরিক চাপে কাজ না হয় তাহলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইরানকে পারমাণবিক অস্ত্র অর্জন থেকে বিরত রাখার জন্য সরাসরি সামরিক হস্তক্ষেপের পথ বেছে নিতে পারে, ঠিক যেমন তারা গণবিধ্বংসী অস্ত্রের (WMD) মিথ্যা অজুহাতে ইরাক আক্রমণ করেছিল।
আগামী ঘন্টা এবং দিনগুলি সমগ্র অঞ্চলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
তবে সমগ্র মুসলিম জাতি ও শান্তিকামী জনগন অবৈধ দখলদার ইজরাইল ও যুক্তরাষ্ট্রের হাত থেকে রক্ষার জন্য সৃষ্টিকর্তার নিকট প্রার্থনার পাশাপাশি অবৈধ ইসরায়েল সম্পূর্ণরূপে ভেঙে পড়ে এবং ইসরায়েলের ভেঙে পারার যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে যদি ইরানের শাসকগোষ্ঠী সততার সাথে যুদ্ধ পরিচালনা করেছে।
মুসলিম দেশগুলো ফিলিস্তিনকে মুক্ত করার ব্যাপারে সিরিয়াস নয়, এটা তাদের দৃষ্টিভংগীরও বাইরে। পাঁচ দশক ধরে ইরান শুধু ফিলিস্তিনকে মুক্ত করার চেষ্টা থেলে বিরত থাকে নাই বরং শত্রুর হাতে ছেড়ে দিয়ে অপরিসীম ক্ষতি করেছে।
ইতিহাসে প্রথমবারের মতো, ইরান অবৈধ দখলদার ইসরায়েলের প্রকৃত লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত করেছে। ইরান সর্বদাই এটি করতে সক্ষম ছিল কিন্তু গাজায় গণহত্যা বন্ধে ইরান কখনোই তার সক্ষমতার প্রকৃত ব্যবহার করে নি।
একইভাবে মুসলিম বিশ্বের অন্যান্য দেশগুলোও তাদের সক্ষমতার দিক থেকে কোন অংশে কম নয়। সৌদি আরব কয়েক দশক ধরে উন্নত মার্কিন অস্ত্র কিনে আসছে। তুরস্ক ইতিমধ্যেই নিজস্ব স্থানীয়ভাবে তৈরি ড্রোন তৈরি করছে। পাকিস্তান গত মাসেই ভারতের সাথে লড়াইয়ে তার সামরিক ক্ষমতা প্রদর্শন করে। উপসাগরীয় দেশসমূহ ট্রিলিয়ন ট্রিলিয়ন ডলার উপঢৌকন দিয়ে মার্কিন অর্থনীতিকে শক্তিশালী করছে। অর্থ্যাৎ, মুসলিম বিশ্বে সক্ষমতার কোনও অভাব নেই। অভাব রয়েছে পবিত্র ভূমি ফিলিস্তিনকে মুক্ত করার আকাঙ্ক্ষার!
মুসলিম শাসকগোষ্ঠী উম্মাহার শক্তিকে (সেনাবাহিনী, সামরিক এবং অর্থনৈতিক সক্ষমতা) উপনিবেশবাদীদের চাপিয়ে দেয়া সংকীর্ণ জাতীয়তাবাদী সীমান্তের মধ্যে আটকে রাখছে। তারা জাতীয় সার্বভৌমত্ব, আঞ্চলিক অখণ্ডতা এবং জাতীয় স্বার্থের জাতাকলে পিষ্ঠ।
তাই ইরান এই ধরণের সংকীর্ণ দৃষ্টিভঙ্গির ভয়াবহ ফল ভোগ করছে। আমেরিকার প্রক্সি ইজরায়েলের আগ্রাসন দরজায় হানা দেয়ার পর ইরান অন্যান্য মুসলিম দেশগুলোর সাথে জাতীয় ঐক্য ও সামরিক ঐক্যের আহবান করছে। পাকিস্তানও একই আহবান করছে। যদিও গাজা ইসুতেই তাদের এমন ঐক্যের আহবান করা জরুরি ছিল!
কিন্তু এখন পর্যন্ত কোন দেশের শাসকগোষ্ঠী ইরানের পক্ষে কিংবা ফিলিস্তিনে গণহত্যার বিরুদ্ধে সামরিকভাবে অগ্রসর হওয়ার সাহস পাচ্ছে না।
কারণ জাতীয়তাবাদের শৃঙ্খলে আবদ্ধ এসব শাসকদের ঐক্যের আহবানের প্রধান অগ্রাধিকার নিজেদের আত্মরক্ষা করা। তাদের স্বার্থ তাদের জাতি, সমগ্র মুসলিম উম্মাহ নয়। তারা আন্তর্জাতিক আইনের কাছে মাথা নত করে, আল্লাহর আইনের কাছে নয়।
তাই ইরান যদি তার প্রাগমেটিক চরিত্র এখনও বজায় রাখে, তার জাতীয় স্বার্থ ও আত্বরক্ষাই তার কাছে উম্মাহর স্বার্থের চেয়ে প্রধান প্রাইওরিটি হয় তাহলে ইরান শীঘ্রই আমেরিকার ডিলে সাইন করবে।
আর ইরান সহ আশেপাশের অন্যান্য মুসলিম শাসকেরা প্রত্যেকেই যদি নিজেদের মধ্যকার কৃত্রিম জাতীয়তাবাদী সীমানা প্রত্যাখ্যান করে এবং তাদের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামরিক সক্ষমতাকে একচেটিয়াভাবে খিলাফাহ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে মুসলিম সামরিক বাহিনীকে একত্রিত করার জন্য ব্যবহার করতে পারে তাহলে মধ্যপ্রাচ্যে আমেরিকার প্রকৃত ফরোয়ার্ড মিলিটারি বেজ দখলদার ইজরায়েলকে শিকড় সহ উপড়ে ফেলা হবে কয়েকদিন বা এক সপ্তাহের ব্যাপার মাত্র!
আল আকসা মুক্ত হওয়ার পাশাপাশি মধ্যপ্রাচ্যের মানচিত্রও যেমন বদলে যাবে তেমনি মার্কিন আধিপত্যের চির অবসানের সাথে মুসলিম উম্মাহ খিলাফতের অধীনে নতুন ওয়ার্ল্ড ওর্ডারে প্রবেশ করবে এমনটাি প্রত্যাশা শান্তিকামী জনগনের।