এবার বন্ধুর স্ত্রীকে ধর্ষণ করে সেই ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে ৯ মাস ধরে নিয়মিত ধর্ষণ করেছে তিন বন্ধু মিলে। তারা সবাই বিএনপি নেতা। ধর্ষণের এই ভিডিও আন্তর্জাতিক কয়েকটি পর্নোসাইটে বিক্রি করে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগও পাওয়া গেছে। চাঞ্চল্যকর ঘটনাটি ঘটেছে গাজীপুরের কাপাসিয়ার সাফাইশ্রী গ্রামে। এ ঘটনায় ধর্ষিতা গৃহবধূ বাদী হয়ে তিনজনের নাম উল্লেখ করে থানায় ও আদালতে মামলা দায়ের করেছেন। অভিযুক্তরা হলেন- কাপাসিয়া সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের দলিল লেখক কাপাসিয়া উপজেলা বিএনপি নেতা মাহফুজুর রহমান ওরফে রাসেল মোল্লা (৪০), বিএনপি নেতা খাইরুল ইসলাম সবুজ (৩৮) ও সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের দলিল লেখক জাকির হোসেন সোহেল (৩৯)। মাহফুজুর রহমান ওরফে রাসেল মোল্লা কাপাসিয়া উপজেলা ছাত্রদলের সাবেক যুগ্ম-আহ্বায়ক ও খাইরুল ইসলাম সবুজ ছাত্রদলের একই কমিটির সাবেক সদস্য।
মামলা সূত্রে জানা গেছে, দলিল লেখক মাহফুজুর রহমান রাসেল মোল্লার সহকারী হিসেবে কাজ করতেন সাফাইশ্রী গ্রামের এক ব্যক্তি। ২০১৯ সালের ৩ ডিসেম্বর রাত ১১টার দিকে রাসেল মোল্লা ওই ব্যক্তির বাড়িতে যান। কিন্তু তিনি বাড়িতে না থাকার সুযোগে তার স্ত্রীকে জোর করে ধর্ষণ করেন রাসেল মোল্লা। এ দৃশ্য মোবাইলে ভিডিওতে ধারণ করেন। পরে ভিডিও প্রকাশের ভয় দেখিয়ে দুই বন্ধু সবুজ ও সোহেলকে নিয়ে প্রায়ই রাসেল ওই নারীকে ধর্ষণ করতেন।
মামলায় আরো বলা হয়, গত ২২ জুলাই খাইরুল ইসলাম সবুজ ওই নারীকে ধর্ষণ করেন। বিষয়টি ওই নারীর স্বামী জেনে যান। এ নিয়ে পারিবারিক কলহ সৃষ্টি হয়। স্ত্রীর বাড়ির লোকজনকে ডেকে এনে তার স্বামী সংসার ভাঙার ইচ্ছা প্রকাশ করেন। গত ২৪ আগস্ট রাত সাড়ে ৯টার দিকে অভিযুক্ত ধর্ষণকারী রাসেল মোল্লা, সবুজ ও সোহেল ও নারীর বাড়িতে গিয়ে ওই নারী ও তার স্বামীকে গালিগালাজ করেন। এক পর্যায়ে অস্ত্র দেখিয়ে তাদের হত্যার চেষ্টা করেন। পরে ওই নারী এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে কাপাসিয়া থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।
ধর্ষিত ওই গৃহবধূ বলেন, ‘রাসেল মোল্লা, সবুজ ও সোহেল এখন আমাকে ও আমার স্বামীকে মেরে ফেলার হুমকি দিচ্ছে। এমনকি ফেসবুকে নানা ধরনের কুৎসা রটিয়ে আমাদেরকে আত্মহননের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। আমি ও আমার স্বামী প্রধানমন্ত্রীর কাছে এর বিচার চাই।’
জানা গেছে, অভিযুক্ত ধর্ষণকারী রাসেল মোল্লা, সবুজ ও সোহেল ওই নারীকে ধর্ষণ করার ভিডিও বিদেশি কয়েকটি পর্নোসাইটে আপলোড করে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। পর্নোসাইটে ধর্ষণের ভিডিও আপলোড করার অভিযোগ এনে গাজীপুর আদালতে ওই নারী বাদী হয়ে পর্নোগ্রাফি আইন ২০১২ এর ৮(১) এবং প্যানাল কোড ৪৪৮/৫০৬ ধারার মামলা (নম্বর সিআর ২৩৫/২০, তারিখ ০৩-০৯-২০২০, স্মারক নম্বর ১০৪৭ (মূল) তারিখ ১০-০৯-২০২০) দায়ের করেন।
তবে অভিযুক্তদের স্বজনরা জানান, মামলার অভিযোগ মিথ্যা ও বানোয়াট। জমি বেচা-কেনা নিয়ে ২০ লক্ষাধিক টাকা পাওনা রয়েছে ওই নারীর স্বামীর কাছে। টাকা আত্মসাতের জন্য এই ঘটনা সাজানো হয়েছে ও মিথ্যা মামলা দেয়া হয়েছে।
গাজীপুরের পুলিশ সুপার শামসুন্নাহার বলেন, পর্নোগ্রাফির বিষয়টি আমরা অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে দেখছি। পাশাপাশি অভিযুক্ত আসামিদের গ্রেপ্তারে পুলিশের তৎপরতা রয়েছে। বাংলাদেশে পর্নোগ্রাফি সাইট সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ। তার পরও কীভাবে আসামিরা বিদেশি পর্নোসাইটে ধর্ষণের ভিডিও আপলোড করেছে তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
ধর্ষিত ওই নারীর স্বামী অভিযোগ করে জানান, রাসেল মোল্লা, সবুজ ও সোহেল মিলে তার স্ত্রীকে ধর্ষণের ভিডিও আন্তর্জাতিক কয়েকটি পর্নোগ্রাফি সাইটে বিক্রি করে দেয়। ইন্দোনেশিয়া ও ভারতের এসব পর্নোসাইটে ধর্ষণের ভিডিও এখন সবার হাতে হাতে।
তিনি বলেন, ‘বিদেশি অনলাইন সার্ভার এনজিইবিওকেইপি নামের সার্ভারের ওয়েবসাইট টিআইএনওয়াইইউআরএল ডটকম এবং আন্তর্জাতিক কয়েকটি পর্নোসাইটে ধর্ষণের ভিডিও আপলোড করা হয়।’
অপরদিকে অভিযুক্তরা সামাজিক যোগযোগ মাধ্যমে ওই নারী, তার স্বামী ও আত্মীয়স্বজনদের নামে নানা কুৎসা রটাচ্ছেন। এমনকি অভিযুক্ত রাসেল মোল্লা, সবুজ ও সোহেলের আত্মীয়রা ধর্ষিত নারী ও তার স্বামীকে নানাভাবে হুমকি দিচ্ছে বলে কাপাসিয়া থানায় পৃথক ৪টি সাধারণ ডায়েরি করা হয়েছে।
র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব-১) গাজীপুর কোম্পানি কমান্ডার আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, পর্নোগ্রাফি একটি মারাত্মক অপরাধ। আমরা নানা কৌশলে আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা অব্যাহত রেখেছি।
এদিকে ঘটনার প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার সকালে কয়েকটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন কাপাসিয়ার তাজউদ্দীন আহমদ চত্বরে মানববন্ধন করেছে। মানববন্ধনে বিক্ষুব্ধরা অভিযুক্ত ধর্ষণকারীদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেছেন।
এলাকাবাসী জানায়, বিএনপি নেতা রাসেল মোল্লা, সবুজ ও সোহেল তিনজন মিলে কাপাসিয়া উপজেলা শহরে জমি দখল, নারী ধর্ষণ, মাদক কারবারিসহ নানা অপকর্ম করে বেড়ায়। তাদের অপকর্মের সামনে কেউ প্রতিবাদ করলে হুমকি ধমকি দিয়ে আসছে। বিশেষ করে সাফাইশ্রী গ্রামের হিন্দু সম্প্রদায়ের সাধারণ অসহায় মানুষদের ভয় ভীতি দেখিয়ে জমি দখল করে নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে।
সাফাইশ্রী গ্রামের ভূক্তভোগী ১০-১২ জন জানান, বিএনপি করেও নানা অপরাধসহ বিভিন্ন সময় এলাকায় মোটরসাইকেল মহড়া দিয়ে জনমনে এক ধরনের আতঙ্ক সৃষ্টি করে আসছে।