DoinikAstha Epaper Version
ঢাকাশনিবার ৩০শে নভেম্বর ২০২৪
ঢাকাশনিবার ৩০শে নভেম্বর ২০২৪

আজকের সর্বশেষ সবখবর

সন্তান ফেরত পেলেন সেই মা, পাবেন ঘর-ভাতা

News Editor
অক্টোবর ১০, ২০২০ ২:২১ অপরাহ্ণ
Link Copied!

ঋণের টাকা পরিশোধ করতে একদিনের সন্তানকে ২০ হাজার টাকায় বিক্রি করে দেয়া লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী হাছিনা বেগম তার সন্তানকে ফেরত পেয়েছেন। একইসঙ্গে সরকারিভাবে তাকে ঘর ও ভাতা দেয়া হচ্ছে। শুক্রবার রাতে নবজাতককে ফিরিয়ে এনে প্রতিবন্ধী হাছিনার কোলে তুলে দেন আদিতমারীর ইউএনও মুহাম্মদ মনসুর উদ্দিন।

হাছিনা বেগম আদিতমারী উপজেলার সারপুকুর ইউপির টেপারহাট গ্রামের জোকতার আলীর স্ত্রী। তিনি একই এলাকার তালুক হরিদাস নয়াটারী গ্রামের আজিজার রহমানের মেয়ে।

১৮-২০ বছর আগে একই গ্রামের টেপারহাট গ্রামের জোকতার আলীর সঙ্গে বিয়ে হয় হাছিনার। কিন্তু তিনি ছিলেন জোকতারের দ্বিতীয় স্ত্রী। বিয়ের কিছু দিন স্বামীর বাড়িতে থাকলেও পরে বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী হাছিনার ঠাঁই হয় তালুক হরিদাস নয়াটারী গ্রামের বাবার বাড়িতে।

সংসারের খরচ বহন না করলেও স্বামী জোকতার সম্পর্ক রেখেছিল হাছিনার সঙ্গে। এরইমধ্যে তার সংসারে এক মেয়ে ও দুই ছেলের জন্ম হয়। বড় মেয়ে রোসনার বিয়ে দেন। ফুটো টিনের ওপর পলিথিন সাঁটানো একমাত্র ঝুপড়ি ঘরে দুই ছেলে হাসান ও রাসেলকে নিয়ে কৃষি শ্রমিকের কাজ করে সংসার চালান হাছিনা বেগম।

করোনাকালে মাঠে কাজ না থাকায় বেকার হয়ে হাছিনা বেগম স্থানীয়ভাবে ঋণ নিয়ে সংসার চালান। দেনা হয়ে যান প্রায় ১০ হাজার টাকা। এরই মাঝে গত মঙ্গলবার সকালে হাছিনা বেগম একটি ফুটফুটে ছেলে সন্তান প্রসব করেন। অভাবের মাঝে সন্তানকে প্রতিপালনের চিন্তায় পড়েন তিনি। তবে তার ভাই নিঃসন্তান কেরামত আলী বোনের সন্তানকে নিতে ইচ্ছা প্রকাশ করেন। কিন্তু প্রতিবেশী অধির চন্দ্র তার শ্বশুরবাড়ি কুড়িগ্রামের রাজারহাট এলাকার জনৈক দম্পতিকে সন্তানটি দিতে বলেন। এতে বাধা দেন হাছিনা বেগম ও তার বড় ছেলে হাসান।

অধির চন্দ্র রাজারহাটের ওই দম্পতির হাতে নবজাতককে তুলে দিতে হাসিনার স্বামী জোকতার আলীকে ম্যানেজ করেন। এতে হাছিনা ও তার ছেলে রাজি না হলেও জোকতার ২০ হাজার টাকার বিনিময়ে জোর করে সন্তানকে তুলে দেন রাজাহাটের দম্পতির হাতে।

আরো পড়ুন :  বেনাপোলে তৃতীয় দিনের মতো চলছে পরিবহন ধর্মঘট, ভারত ফেরত পাসপোর্ট যাত্রীদের ভোগান্তি

নবজাতক ভাইকে আটকানোর চেষ্টা করে বাবার গালমন্দের শিকার হন হাসান। নবজাতক বিক্রির টাকায় ঋণের ১০ হাজার টাকা পরিশোধ করেন হাছিনা বেগম। কিন্তু নাড়িছেঁড়া ধন হারিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন। ছোট ভাইকে রক্ষায় ব্যর্থ হয়ে বড় ভাই হাসান বাবা মায়ের সঙ্গে অভিমান করে ঘর ছেড়ে চলে যায়।

এ নিয়ে শুক্রবার কয়েকটি সংবাদ মাধ্যম সংবাদ প্রকাশ করে। সংবাদটি দেখে ঢাকা মেট্রোপটলিটন পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) এডিসি আহসান খানসহ ডিসি আবু জাফরের নির্দেশে শুক্রবার দুপুরে ওই বাড়িতে যান আদিতমারীর ইউএনও মুহাম্মদ মনসুর উদ্দিন ও থানার ওসি সাইফুল ইসলাম।

এ সময় বিক্রি করা নবজাতককে ফেরত নিয়ে আসতে দাতাকে ফোনে জানানো হলে রাতে নবজাতককে ফেরত নিয়ে আসেন তিনি। এরপর রাতে আবার হাছিনার বাড়িতে যান ইউএনও এবং ওসি। তারা সেই নবজাতককে গ্রহণ করে হাছিনার কোলে তুলে দেন। নবজাতকের জন্য সমাজকল্যাণ মন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদের পক্ষ থেকে ১০ হাজার টাকা হাছিনাকে প্রদান করা হয়।

এছাড়া সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় তাকে প্রতিবন্ধী ভাতার তালিকাভুক্তসহ জমি আছে ঘর নেই প্রকল্পের আওতায় হাছিনা ও তার ভাই কেরামত আলীকে পৃথক দুটি ঘর দেয়ার ঘোষণা দেন ইউএনও মুহাম্মদ মনসুর উদ্দিন।

বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী হাছিনা বেগম বলেন, ছাওয়া (নবজাতক) ফেরতসহ নগদ টাকা পাইলাম। ভাতা ও ঘর দিবার চাইছে। যারা এসব দিলো আল্লায় তাদের ভালো করবে।

আদিতমারীর ইউএনও মুহাম্মদ মনসুর উদ্দিন বলেন, খবরটি দেখার পর নবজাতককে ফেরত নিয়ে এসে হাছিনা বেগমের কোলে তুলে দিয়েছি। একই সঙ্গে সমাজকল্যাণ মন্ত্রী মহোদয়ের পক্ষে নবজাতকের জন্য ১০ হাজার টাকা দেয়া হয়েছে। এছাড়া তাকে প্রতিবন্ধী ভাতায় তালিকাভুক্তসহ তাকে এবং তার ভাই কেরামতকে ঘর করে দেয়া হবে। নবজাতকের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিতে আরো কোনো প্রয়োজন হলে সরকারিভাবে সহায়তা করা হবে।

বিনা অনুমতিতে এই সাইটের সংবাদ, আলোকচিত্র অডিও ও ভিডিও ব্যবহার করা বেআইনি।
সেহরির শেষ সময় - ভোর ৫:০০
ইফতার শুরু - সন্ধ্যা ৫:১৪
  • ফজর
  • যোহর
  • আছর
  • মাগরিব
  • এশা
  • সূর্যোদয়
  • ৫:০৫
  • ১১:৪৯
  • ৩:৩৫
  • ৫:১৪
  • ৬:৩১
  • ৬:২০